Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

সস্তার আলোয় উজ্জ্বল সারারাত  

হাওড়া গ্রামীণ জেলার উলুবেড়িয়া, বাগনান, আন্দুল, শ্যামপুর, হুগলির চণ্ডীতলা, তারকেশ্বর, ডানকুনি-সহ বিভিন্ন বাজারেও আলোর রোশনাই। সন্ধ্যা হলেও ঝলমলে হয়ে যাচ্ছে অনেক চেনা পাড়ার মুদির দোকানও। সর্বত্রই বিকোচ্ছে আলো।

আলোকিত: উলুবেড়িয়ায় আলো বাজারে। নিজস্ব চিত্র

আলোকিত: উলুবেড়িয়ায় আলো বাজারে। নিজস্ব চিত্র

সুব্রত জানা  ও দীপঙ্কর দে
উলুবেড়িয়া ও ডানকুনি শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৮ ০২:১৪
Share: Save:

প্রদীপের দিন গিয়েছে। নেই মোমবাতিও। টুনি বাল্বও অতীত। দীপাবলির রাত এখন ঝলমল করে নানান রঙের এলইডি আলোয়। সস্তা আর সহজ বৈদ্যুতীন ব্যবস্থায় দীপাবলির অনেক আগে থেকেই আলো জ্বলছে বারান্দায়, এমনকি ছোট ছোট ফ্ল্যাটের জানলায়।

হাওড়া গ্রামীণ জেলার উলুবেড়িয়া, বাগনান, আন্দুল, শ্যামপুর, হুগলির চণ্ডীতলা, তারকেশ্বর, ডানকুনি-সহ বিভিন্ন বাজারেও আলোর রোশনাই। সন্ধ্যা হলেও ঝলমলে হয়ে যাচ্ছে অনেক চেনা পাড়ার মুদির দোকানও। সর্বত্রই বিকোচ্ছে আলো।

কয়েকবছর আগেও ছবি এ রকম ছিল না মফস্সলে। শহরে টুনি আলোর ঝলক থাকলেও মফস্সলে কালীপুজোর রাতে ঘরে ঘরে জ্বালানো হত মোমবাতি, প্রদীপ— অনেক দিন পর্যন্ত। ভূত চতুর্দশীতে ১৪ প্রদীপ দেওয়া আর পরের দিন হাজার আলোর রোশনাই। কালীপুজোর অন্তত ছ’মাস আগে থেকে কুমোর পাড়ায় শুরু হত প্রদীপ তৈরির ব্যস্ততা। ব্যস্ততা আরও বেশি ছিল মোমবাতি তৈরির কারখানাগুলিতে।

এখন আলোর বাজার মাত করছে এলইডি। তারে ঝোলানো সারি সারি আলো। কোনটা এক রঙা, কোনটা রংবেরঙের। উলুবেড়িয়ার বাজারে ১০-১২ ফুট তারে ঝোলানো এলইডি আলোর দাম ৭০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। ২২ থেকে ২৪ ফুট তারের দাম ১৪০-২০০ টাকা। স্থানীয় ব্যবসায়ী অলোক দাস বললেন, ‘‘আপনি চাইলে ৬০ ফুট, ৯০ ফুটের আলোও পাবেন। কলকাতা থেকে এনে দেব। তবে দাম অনেক বেশি পড়বে।’’ লম্বা লম্বা তারে আলোর মালা ঝুলিয়ে গোটা বাড়িটাই ঝলমলে করে ফেলতে চাইছেন অনেকে। সঙ্গে বিকোচ্ছে প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতীন সামগ্রী।

শুধু লম্বা মালা নয়। ছোট-বড় নানা মাপের প্রদীপও পাওয়া যাচ্ছি বাজারে। থাক-থাক প্রদীপের দাম ১২০-১৫০ টাকা। এমনকি কোথাও কোথাও পাওয়া যাচ্ছে একেবারে মোমবাতির মতো দেখতে ব্যাটারি চালিত আলোও। সাত-আটশো টাকায় পাওয়া যাচ্ছে ‘লেজার লাইট’। ছোট একটি বাক্স থেকে বেরিয়ে ছোটাছুটি করে নানা রঙের আলো। দূর থেকে বাড়ির দেওয়ালে তাক করে লাগিয়ে দিলেই বাড়ি জুড়ে ফুলকি ছুটবে দীপাবলির রাতে।

এলইডি-র পরই চাহিদা ‘রাইস’ আলোর। এর দামও নির্ভর করে তারের দৈর্ঘের উপর। সর্বনিম্ন ৪০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। উলুবেড়িয়া এক ব্যবসায়ী দেবব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘ক্রয়ক্ষমতা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের আলো বিক্রি হচ্ছে। অন্য বছরের তুলনায় এই বছর আলো ভালো বিক্রি হচ্ছে।’’ ডানকুনির বাজারে এ বছর প্রদীপ, ডায়মন্ড এলইডি, লাট্টু, চাকতি লাইট, পসরা সাজিয়ে বসেছেন অনেকেই। চণ্ডীতলার ব্যবসায়ী তপন আদক অবশ্য বললেন, ‘‘দাম বেড়েছে বলে অনেক ক্রেতাই কিনতে চাইছেন না। গত বছর কালীপুজোর থেকে এ বছর প্রতিটি জিনিসের দাম অন্তত ১০-১৫ টাকা বেড়েছে।’’

নিভু নিভু প্রদীপের সলতে উস্কে দেওয়ার ধৈর্য আজ আর নেই। মিনিট কয়েকের মোমবাতিতেও মন ভরে না। তাই বৈদ্যুতিক আলোই ভরসা। তাতে অবশ্য কপাল পুড়েছে মাটির প্রদীপ তৈরির কারিগরদের। উলুবেড়িয়া তাঁতিবেড়িয়ার প্রদীপ তৈরির কারিগর ৭৪ বছরের বৃদ্ধা অসীমা পাল বলেন, ‘‘৫৫ বছর ধরে প্রদীপ তৈরি করি। তখন ছ’মাস আগে থেকে প্রদীপ তৈরি করতাম। অতিরিক্ত মজুর লাগাতে হত। এখন কাজ হয় মাস দেড়েক। নিজেরাই সব কাজ করি।’’ তবে প্রদীপ চাহিদা এখনও আছে। পুজোর উপকরণ হিসেবে এখনও প্রদীপ লাগে। চতুর্দশীতে মাটির প্রদীপ দেওয়ার রীতি বজায় রেখেছেন অনেকেই। সে টুকুই সম্বল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

LED Diwali Light
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE