Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পুজোর আরামবাগে বই বিক্রিতে উজ্জীবিত বাম

কিন্তু আট বছর পরে এ বার শুধুমাত্র গোঘাট এবং পুরশুড়ায় দু’টি বই-বিপণি খুলেই লোক টেনেছে সিপিএম। শুধু তা-ই নয়, এখনও রয়ে গিয়েছে বইয়ের বায়না। যা দেখে বামনেতারা এখন হাত কামড়াচ্ছেন। কেন আরও বিপণি খুললেন না!

আগ্রহী: বামেদের স্টলে বই বিক্রি। নিজস্ব চিত্র

আগ্রহী: বামেদের স্টলে বই বিক্রি। নিজস্ব চিত্র

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৯ ০১:০৩
Share: Save:

ভোটে তারা পাত্তা পায়নি। কিন্তু পুজোয় বই বিক্রিতে ‘সন্ত্রাসের’ আরামবাগেও রাজ্যের শাসকদলকে হারিয়ে দিল বামেরা।

মহকুমার তিনটি থানা এলাকায় (আরামবাগ, খানাকুল ও গোঘাট) অন্তত ১৬টি বই-বিপণি খুলেছিল তৃণমূল। কিন্তু সেখানে কোথায় ভিড়? দলের জনপ্রতিনিধিদের প্রতি নির্দেশ থাকলেও মুখ্যমন্ত্রীর লেখা বইও সে ভাবে বিক্রি হল কই? গোঘাট-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, তৃণমূলের মনোরঞ্জন পালের আক্ষেপ, “বই পড়ায় মানুষের আগ্রহ নেই। স্টলে যত বই ছিল, তার ৫০ শতাংশ ও বিক্রি হয়নি।” কিন্তু আট বছর পরে এ বার শুধুমাত্র গোঘাট এবং পুরশুড়ায় দু’টি বই-বিপণি খুলেই লোক টেনেছে সিপিএম। শুধু তা-ই নয়, এখনও রয়ে গিয়েছে বইয়ের বায়না। যা দেখে বামনেতারা এখন হাত কামড়াচ্ছেন। কেন আরও বিপণি খুললেন না!

কেমন বিক্রি?

সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তথা গোঘাটের নেতা ভাস্কর রায়ের দাবি, ‘‘শুধু গোঘাটের স্টল থেকেই প্রায় ৬ হাজার টাকার বই বিক্রি হয়েছে। পুরশুড়ার স্টলের হিসেব ধরলে অঙ্কটা ১৬ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাবে। বেশি চাহিদা ছিল শমীক লাহিড়ীর লেখা ‘কাশ্মীর: যুক্তি-তর্ক-সত্য’ বইটির। সেটি ৭৫ কপি বিক্রি হওয়ার পরেও গোঘাট থেকে ১০০ কপির বায়না মিলেছে। ‘কাশ্মীর প্রসঙ্গে একটি প্রশ্ন-উত্তর’ বইটিরও চাহিদা ছিল। সেটি ৩০০ কপি বিক্রি হয়েছে। তারপরেও ৩০ কপির বায়না হয়েছে।’’

আরামবাগ অবশ্য বিচ্ছিন্ন উদাহরণ নয়। রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতেই এ বার পুজোয় একই চিত্র। ঠাকুর দেখতে গিয়ে মার্ক্সীয় ও প্রগতিশীল সাহিত্যের স্টল থেকে বই কিনে ফিরেছেন বহু মানুষ। কিন্তু রাজ্যে পালাবদলের পর থেকে গত বছর পর্যন্ত পুজোর আরামবাগে কোথাও সিপিএমের বই-বিপণি দেখা যায়নি। এখানে বারবার তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছে সিপিএম। কিন্তু এ বার কিছুটা সাহসে ভর করেই তাঁরা বই-বিপণি খুলেছেন বলে সিপিএম নেতৃত্বের দাবি।

পুরশুড়ার বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা সুখেন্দু অধিকারী বলেন, “প্রচার ছাড়াই এ বার আমাদের জেলা সম্মেলনে পুরশুড়া থেকে বহু কর্মী-সমর্থক গিয়েছিলেন। বুঝেছিলাম, মানুষ আমাদের চাইছেন, পাশে আছেন। সেই সাহসেই বুকস্টল দিতে পেরেছি।” দলের গোঘাট এরিয়া কমিটির এক নেতা বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটে বিজেপির উত্থানের পরে তৃণমূলের দাপট তো নেই-ই, উল্টে ওদের নেতারা দুর্নীতির জন্য মুখ দেখাতে পারছেন না। বুকস্টলে বাধা দেবে কে? বরং আমাদের প্রস্তুতি থাকলে আগের মতো ১০টির বেশি বুকস্টল দিতে পারতাম।”

সিপিএমের দাবি মানতে চাননি তৃণমূল নেতারা। গোঘাটের তৃণমূল বিধায়ক মানস মজুমদারের দাবি, ‘‘বাংলা জুড়ে আমাদের তৈরি করা গণতান্ত্রিক পরিবেশের সুফলই পেয়েছে ওরা। মিথ্যা সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে বামেরা এতদিন ঘরে বসে ছিল। লোকসভা নির্বাচনের আগে আমরাই তো ওদের বের করে আনি। যদিও ওরা নিজেরা নির্বাচনে না লড়ে বিজেপিকে সুবিধে করে দিয়েছে।’’

বাম আমলে পুজোর সময়ে শুধু গোঘাটেই ১২-১৪টি বই-বিপণি খুলত বামেরা। সেখানে এ বার গোঘাটের কামারপুকুরে ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত একটি বিপণি খোলা হয়। দশমীর দিন সেই বিপণিই তুলে নিয়ে যাওয়া হয় গোঘাটের রথের মেলায়। পুরশুড়া ব্লকে বিপণি বসেছিল পুরশুড়া মোড়ে। খানাকুলে পুজো মণ্ডপের আশপাশে না-থাকলেও দলের জোনাল কার্যালয়ের ভিতরে একটি স্টল করা হয়েছিল। নেতাদের দাবি, সেখানে বিভিন্ন বাম পত্রপত্রিকার শারদ সংখ্যা আড়াইশোরও বেশি বিক্রি হয়েছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ‘ফিরে দেখা’-সহ বিভিন্ন বই বিক্রি হয়েছে ৪৫টি। ‘অর্ডার’ জমা পড়েছে ৫০টি। আরামবাগে বিপণি খুলতে না-পারার কারণ হিসেবে প্রস্তুতি না-থাকা এবং দুর্যোগকে দায়ী
করেছেন নেতারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hooghly Arambagh Left Front
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE