Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Bagnan

মহিলাদের বইয়ের নেশা ধরাতে গ্রন্থাগার শিক্ষাব্রতীর

চাষি পরিবারের মহিলা অন্নপূর্ণা মান্নাকে দেওয়া হয়েছে গ্রন্থাগারিকের দায়িত্ব। কলেজছাত্রী কাঞ্চন মণি এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রিয়া কর পেয়েছেন গ্রন্থাগারের ‘ক্যাটালগ’ তৈরির দায়িত্ব।

ছয়ানি গ্রামে শেফালিকা স্মৃতি গ্রন্থাগারের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন অন্নপূর্ণা।

ছয়ানি গ্রামে শেফালিকা স্মৃতি গ্রন্থাগারের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন অন্নপূর্ণা।

নুরুল আবসার
বাগনান শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২০ ০৫:২৫
Share: Save:

সন্ধে হলেই গ্রামের মহিলারা ডুব দেন টিভি সিরিয়ালে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা মোবাইলে মগ্ন। অনেক দিন ধরেই মহিলা ও ছোটদের ওই ‘নেশা’ ছাড়ানোর উপায় হিসেবে গ্রন্থাগার তৈরির পরিকল্পনা করছিলেন বাগনানের ছয়ানি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক তপন কর। অবশেষে নিজের খরচে পৈতৃক দোতলা মাটির বাড়ির নীচের বারান্দায় খুলে ফেললেন ছোট গ্রন্থাগার। গত রবিবার উদ্বোধন হল।

এতেই থামেননি তপনবাবু। মহিলা ও ছোটদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ বাড়াতে তাদের কাজেও লাগাচ্ছেন। চাষি পরিবারের মহিলা অন্নপূর্ণা মান্নাকে দিয়েছেন গ্রন্থাগারিকের দায়িত্ব। কলেজছাত্রী কাঞ্চন মণি এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রিয়া করকে দিয়েছেন গ্রন্থাগারের ‘ক্যাটালগ’ তৈরির দায়িত্ব। তাঁরা গ্রন্থাগারের সদস্য হওয়ার জন্য গ্রামে প্রচার করছেন। সদস্যপদও পূরণ করাচ্ছেন।

তপনবাবুর মা প্রয়াত শেফালিকাদেবীর নামে গ্রন্থাগারের নামকরণ হয়েছে। তপনবাবু বলেন, ‘‘গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ চাষাবাদে যুক্ত। মহিলারাও চাষের কাজ করেন। তাঁদের অনেকেই পড়াশোনাও জানেন। চাষ ও সংসারের কাজ সামলে তাঁদের একমাত্র বিনোদন টিভি সিরিয়াল। সিরিয়াল ছেড়ে তাঁরা যাতে কিছুটা হলেও বইমুখো হন, সে জন্যই এটা গড়া। ছাত্রছাত্রীদর কাজে লাগবে, এমন বইও রাখা হয়েছে।’’

গ্রামে কাছাকাছি কোনও গ্রন্থাগার নেই। তাই নতুন উদ্যোগে সাড়াও পড়েছে। উলুবেড়িয়ার কুলগাছিয়ায় নিজের বাড়ি রয়েছে তপনবাবুর। কিন্তু অবসর নেওয়ার পরে বেশিরভাগ সময় কাটে পৈতৃক বাড়িতেই। তপনবাবুর কথায়, ‘‘বাবা হারাধন কর ছিলেন শিক্ষানুরাগী। আমাকে বরাবর গ্রন্থাগার গড়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। চাকরি জীবনের ব্যস্ততায় সেটা হয়ে ওঠেনি। অবসর নেওয়ার বছর পাঁচেক আগে থেকে গ্রন্থাগার করার প্রস্তুতি শুরু করি। বই কিনতে থাকি। অনেক পুরনো বইও বাড়িতে ছিল। সব বই গ্রন্থাগারে দান করেছি।’’

গ্রন্থাগারিক অন্নপূর্ণা মাধ্যমিক পাশ। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাঠে স্বামীর সঙ্গে ধান কাটেন। বিকেলে সামলান গ্রন্থাগারিকের দায়িত্ব। গ্রন্থাগারে পড়ার ব্যবস্থা আছে। চাইলে কেউ বাড়িতেও বই নিয়ে যেতে পারেন। অন্নপূর্ণাকে সব কিছু শিখিয়ে পড়িয়ে দিচ্ছেন তপনবাবু। ওই মহিলার কথায়, ‘‘কাজটা অভিনব। বেশ ভাল লাগছে।’’ তাঁর স্বামী শঙ্কর বলেন, ‘‘ভাল একটা কাজে যুক্ত হয়েছে অন্নপূর্ণা। আমি খুব খুশি।’’

ইতিমধ্যে অনেকে গ্রন্থাগারের উন্নতিতে দান করতে চেয়েছেন। তবে এখনও নিজের পেনশনের টাকা থেকেই গ্রন্থাগারের খরচ সামলাচ্ছেন তপনবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘একজনের মধ্যেও যদি বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি তা হলে জানব প্রত্যন্ত এই গ্রামে গ্রন্থাগার গড়ার উদ্দেশ্য সফল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bagnan Library ladies
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE