Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Light Artist

আলোকশিল্পীদের চোখে আঁধার

করোনা-আবহে দুর্গাপুজোয় বড় বরাতের সম্ভাবনা ক্ষীণ। নিজেদের শহরে জগদ্ধাত্রী পুজো অনিশ্চিত! মাথায় হাত পড়েছে চন্দননগরের আলোকশিল্পীদের।

সঙ্কট: করোনায় কাজের বরাত নেই। গুদামে পড়ে রয়েছে অালোর নকশা। চন্দননগরে। ছবি: তাপস ঘোষ

সঙ্কট: করোনায় কাজের বরাত নেই। গুদামে পড়ে রয়েছে অালোর নকশা। চন্দননগরে। ছবি: তাপস ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
চন্দননগর শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২০ ০২:২৭
Share: Save:

অন্য বার এই সময়ে ওঁদের দম ফেলার ফুরসত থাকে না। এ বার বেশির ভাগই কার্যত হাত গুটিয়ে বসে।

করোনা-আবহে দুর্গাপুজোয় বড় বরাতের সম্ভাবনা ক্ষীণ। নিজেদের শহরে জগদ্ধাত্রী পুজো অনিশ্চিত! মাথায় হাত পড়েছে চন্দননগরের আলোকশিল্পীদের।

এ শহরের আলোকশিল্পের খ্যাতি সুবিদিত। আলোকশিল্পীদের সংগঠন সূত্রের খবর, ভদ্রেশ্বর থেকে বাঁশবেড়িয়া পর্যন্ত ছোটবড় অন্তত দেড়শো কারখানা রয়েছে। বেশ কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করেন। জগদ্ধাত্রী পুজোয় চন্দননগর হয়ে ওঠে আলোর ঠিকানা। চোখধাঁধানো শোভাযাত্রা দেখতে মানুষের ঢল নামে। শুধু শোভাযাত্রার আলোতেই কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হয়।

এ বার করোনা পরিস্থিতিতে শিল্পের বাজারে ভাটার টান। চন্দননগরের ফটকগোড়া বাউরিপাড়ার চুয়াল্লিশ বছরের পিন্টু মুখোপাধ্যায় ছোট থেকে অন্যের কারখানায় কাজ করেছেন। বছর বারো ধরে নিজে ব্যবসা করেছেন। গত বছর দুর্গাপুজোয় বরাহনগর, গড়িয়াহাট এবং অসমে আলো লাগিয়েছিলেন। জগদ্ধাত্রী পুজোয় হেলাপুকুরের মতো বিগ বাজেটের পুজোয় কাজ করেছেন। দুর্গাপুজোয় গতবার যাঁদের কাজ করেছিলেন, তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, এ বার কাজ হবে না। কালীপুজোয় দু’টি বড় কাজ এসেছিল। জানুয়ারি মাসে একটি জগদ্ধাত্রী পুজোর
বরাত মিলেছিল। প্রত্যেকটি বরাত বাতিল হয়েছে।

পিন্টু বলেন, ‘‘অগস্ট-সেপ্টেম্বর পিক টাইম। এই সময় আমার কারখানায় ২০-২২ জন কাজ করেন। গভীর রাত পর্যন্ত কাজ চলে। অথচ এই বছরে কাজের আশাই ছেড়ে দিয়েছি। কাজ করলে শ্রমিককে টাকা দিতে হবে। সরঞ্জাম কেনা-সহ আনুষঙ্গিক খরচ আছে। এত খরচ করে কাজ চালানোর সামর্থ্য নেই। কাজ করেই বা কী হবে! জগদ্ধাত্রী পুজোও তো শুনছি ঘটে হতে পারে।’’

শহরের শাঁওলি বটতলার তপন ঘোষও দুর্গা বা জগদ্ধাত্রী পুজোর বরাত পাননি। এখনও পর্যন্ত যা অবস্থা, তাতে আশার আলো দেখছেন না। এই আলোকশিল্পীর কথায়, ‘‘এমন পরিস্থিতি দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি।’’ তিনি জানান, অন্য বার এই সময় তাঁর কারখানায় ২০-২৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। গত বছর দুর্গাপুজোয় কলকাতায় দু’টি এবং মালদহে একটি মণ্ডপে আলো লাগিয়েছিলেন। জগদ্ধাত্রী পুজোয় দু’টি মণ্ডপে শোভা পেয়েছিল তাঁর আলো। এ বার লকডাউনের আগে কিছু কাজ শুরু করেছিলেন। ৪-৫ জনকে নিয়ে সেই কাজই টুকটুক করে শেষ করছেন।

আলোকশিল্পীদের সংগঠনের সম্পাদক বাবু পাল বলেন, ‘‘অবস্থা সঙ্গিন। চন্দননগরের গ্ল্যামার, দেখনদারি ছোট পুজো হলে থাকবে না। ঘটপুজো হলে তো প্রশ্নই নেই। শোভাযাত্রাও হবে না। সব মিলিয়ে শীঘ্র পরিস্থিতি শুধরোবে, এমন সম্ভাবনা দেখছি না।’’

কঠিন পরিস্থিতির কথা জানিয়ে আলোকশিল্পী অসীম দে’র বক্তব্য, ‘‘উৎসব না হলে অর্থনৈতিক ভাবে আর পাঁচ জনের যা সমস্যা হবে, আমাদেরও হবে। এই অবস্থায় সরকার যদি অল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ব্যবস্থা করে, তা হলে শ্রমিকদের সংসারও চলবে। না হলে সমস্যা বাড়বে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Light Artist Chandannagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE