Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
সিএএ নিয়ে বিজেপির কর্মসূচি ভদ্রেশ্বরে

মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্নের মুখে লকেট

বোঝাপড়া: ভদ্রেশ্বরের এক মহিলাকে সিএএ নিয়ে বোঝাচ্ছেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। ছবি: তাপস ঘোষ

বোঝাপড়া: ভদ্রেশ্বরের এক মহিলাকে সিএএ নিয়ে বোঝাচ্ছেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। ছবি: তাপস ঘোষ

প্রকাশ পাল
ভদ্রেশ্বর শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২০ ০২:০৫
Share: Save:

আলু ৪০ টাকা কেজি। পেঁয়াজ এখনও ৭০ টাকা। গোন্দলপাড়া চটকল বন্ধ। শ্রমিকদের পরিবারে হাহাকার চলছে।

কেন বলতে পারেন?

প্রশ্নকর্তা এক সাধারণ মহিলা। যাঁকে এই প্রশ্ন, তিনি সামনে দাঁড়ানো সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। সাংসদের সামনে আর এক মহিলার ক্ষোভ, ‘‘রেশন দোকানে ৬০ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। ভাবা যায়!’’

ঘটনাস্থল ভদ্রেশ্বরের শরৎ সরণি। লকেটের নিজের নির্বাচনী এলাকা। রবিবার দুপুরে সেখানে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে সাধারণ মানুষকে বোঝাতে গিয়ে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে যে এ সব প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে, তা সম্ভবত সাংসদ ভাবেননি। অবশ্য মহিলাদের আর বেশি প্রশ্ন করার সুযোগ দেননি তিনি। একই ধাঁচের প্রশ্ন আসতে দেখে সাংসদ মূল্যবৃদ্ধির যাবতীয় দায় রাজ্য সরকারের ঘাড়ে চাপিয়েছেন। লকেট বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারকে বলুন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলুন। কেন উনি আলুর বস্তাভর্তি ট্রাক আটকে রেখে পরে বেশি দামে আলু বিক্রি করছেন? চাষিরা কত কম টাকায় আলু বিক্রি করছেন, বলাগড়ে চাষিরা কত কম টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। রেশন দোকানেও ইচ্ছাকৃত ভাবে আলু-পেঁয়াজ আটকে রেখে মানুষের কাছে আতঙ্ক তৈরি করে মুখ্যমন্ত্রী দাম বাড়াতে চাইছেন।’’

মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে লকেট রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলায় তা হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘হাস্যকর অভিযোগ। পেট্রল-ডিজেল, রান্নার গ্যাসের দাম নিয়ে উনি কিছু বললেন না কেন? আসলে সিএএ নিয়ে ওঁদের বিভাজনের রাজনীতি মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছেন। সেই কারণে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে বাজে কথা বলছেন।’’

এ দিন ভদ্রেশ্বর ডাকঘরের পাশের একটি ভবনে দলীয় কর্মিসভা করেন লকেট। তার পরে যান পাশের শরৎ সরণিতে। দু’-এক জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে দলের তরফে সিএএ সংক্রান্ত লিফলেট বিলি করেন। তাঁদের আশ্বস্ত করে লকেট বলেন, ‘‘সিএএ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু এ দেশে যাঁদের জন্ম, তাঁদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।’’ সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবেও বিজেপি সাংসদ বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন। ভোট পাওয়ার জন্য মিথ্যা বলছেন। সেই কারণে মানুষ আতঙ্কিত হতে পারেন ভেবে তাঁদের আশ্বস্ত করছি। যাঁরা বাংলায় বা ভারতে জন্মেছেন তাঁদের জন্য এই আইন নয়। তিনটি দেশ থেকে অত্যাচারিত হয়ে যে সংখ্যালঘুরা এসেছেন, এই আইন তাঁদের জন্য।’’

সংবাদমাধ্যমের সামনে ওই এলাকার অনেকেই জানিয়েছেন, সিএএ-র থেকে বেশি জরুরি আলু-পেয়াঁজ থেকে গ্যাসের ঊর্ধ্বমুখী দাম নিয়ন্ত্রণ করা। যাতে সাধারণ মানুষের সুরাহা হয়। কবিতা করসিংহ নামে এক মহিলা বলেন, ‘‘জীবনে কখনও দেখিনি, আলু ৪০ টাকা! মানুষ কী খাবে, ঠিক নেই। কল-কারখানার অবস্থা ভাল নয়। বন্ধ কারখানার শ্রমিক হাহাকার করছেন। আগে এগুলো দেখা হোক। তার পরে সিএএ নিয়ে মাথা ঘামাক।’’

নন্দিতা পাত্র নামে এক গৃহবধূর কথায়, ‘‘স্বামীর কারখানা বন্ধ। উনি লাড্ডু, শোনপাপড়ি বিক্রি করছেন। ছেলে টোটো চালায়। কোনও রকমে সংসার চলে। পেটে খেতে পেলে ওই সব (সিএএ) নিয়ে ভাবব।’’ সোমা বিশ্বাস নামে এক মহিলা জানান, তাঁর বাবা স্কুলের করণিক ছিলেন। ২০০২ সালে তিনি মারা গিয়েছেন। কিন্ত তাঁর জায়গায় চাকরি এখনও তাঁর ভাই পাননি। প্রাপ্য চাকরি যাতে তাঁর ভাই পান, সেই ব্যাপারে তিনি লকেটকে অনুরোধ করেন। দলীয় কর্মসূচিতে এলাকায় এসেছিলেন বিজেপির রাজ্য নেতা সায়ন্তন বসুও। তিনি দলের কর্মিসভাতেও যোগ দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP CAA Locket Chatterjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE