উৎসাহী: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হেলিকপ্টার নামার আগে। মঙ্গলবার জগৎবল্লভপুরে। ছবি: সুব্রত জানা
বক্তৃতার শুরুতেই মেজাজ হারালেন মুখ্যমন্ত্রী।
মঙ্গলবার দুপুরে জগৎবল্লভপুরের বড়গাছিয়া হাসপাতালের পাশের মাঠে মুখ্যমন্ত্রী জনসভা করতে এসেছিলেন শ্রীরামপুরের প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে। বক্তৃতা দিতে উঠে তিনি বলছিলেন, ‘‘উলুবেড়িয়ায় ৫০০ শয্যার মেডিক্যাল কলেজ হচ্ছে। ১০০ চিকিৎসক সেখানে ডাক্তারি পড়তে পারবেন। উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালকে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে পরিণত করা হয়েছে। বেলুড়ে যোগ কলেজ হচ্ছে। উলুবেড়িয়ায় স্টেডিয়াম করা হয়েছে। আমতা গ্রামীণ হাসপাতালকে ২৪০ শয্যায় উন্নীত করা হচ্ছে। বেলুড়ে টেক্সটাইল হাব হচ্ছে।’’
মুখ্যমন্ত্রী যখন হাতের কাগজ দেখে এই সব খতিয়ান দিচ্ছেন, তখন সামনের সারিতে ভিড়ের মধ্যে থেকে মহিলা বলে ওঠেন, ‘‘দিদি, জগৎবল্লভপুর হাসপাতাল নিয়ে কিছু বলুন। হাসপাতালের বেহাল দশা।’’ প্রথমে মুখ্যমন্ত্রী তা শুনতে পাননি। উন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়েই যাচ্ছিলেন। দ্বিতীয় বার ফের একই আবেদন শুনেই চুপ মুখ্যমন্ত্রী।
উন্নয়নের ফিরিস্তি দেওয়া বন্ধ রেখে তিনি ওই মহিলার উদ্দেশে বলেন, ‘‘এ কথা বলার জন্য এটা উপযুক্ত জায়গা নয়। প্রতি ব্লকে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হয় না। হাওড়া বা উলুবেড়িয়া এখান থেকে কত দূর? উন্নত চিকিৎসা পেতে সেখানে যান। সব ব্যবস্থা আছে। আমরা যেটা বলি, সেটাই করি। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিই না। ইচ্ছা হলে আমাদের সমর্থন করুন, না হলে করবেন না।’’ তিনি বলেন, ‘‘প্রতিটা ব্লকে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল করতে গেলে কত খরচ জানেন? এত টাকা কোথায়?’’
এর পরে মুখ্যমন্ত্রী ফের বলেন, ‘‘আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম না ১২টা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। ৮ বছরে ২৮টা বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। ৫০টা কলেজ ছিল। হয়েছে ৩০০টা।’’
রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতির কথা যখন তিনি তুলে ধরছিলেন, ফের কয়েকজন শ্রোতা জগৎবল্লভপুর হাসপাতালের কথা জানতে চান। মুখ্যমন্ত্রী একইভাবে বলে দেন, ‘‘বলে দেওয়া হয়েছে তো, হবে না।’’ শ্রোতাদের মধ্যে যিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন তাঁর উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এর জন্য যে টাকা লাগে, কে দেবে, তুমি? একটা রাজ্য দেখান তো যেখানে বিনা পয়সায় চিকিৎসা হয়। মিড ডে মিল বিনা পয়সায় দেওয়া হয়। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, আশাকর্মীদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। আর কোথা থেকে দেব? আমার রক্ত বিক্রি করলেও হবে না।’’
তবে জগৎবল্লভপুর হাসপাতাল নিয়ে মানুষের ক্ষোভে প্রলেপ দেওয়ারও চেষ্টা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘ব্লক হাসপাতালে চিকিৎসক চাইলেও পাই না। দোকান থেকে লাড্ডু কেনার মতো চিকিৎসক কেনা যায় না। শুধু বাড়ি বানিয়ে কী হবে? সে জন্যই মেডিক্যাল কলেজ হচ্ছে। ফলে বছরে ১৫০০ চিকিৎসক পাওয়া যাচ্ছে। আপনাদের উপর আমার কোনও ক্ষোভ নেই। কিন্তু জিনিসটা বুঝুন। আমি রোজগার করার জন্য রাজনীতি করি না। নিজেকে বেচার জন্য রাজনীতি করি না। আমার ৮৭টা বই প্রকাশিত হয়েছে। নিজের লেখা গানে সুর দিই। এতেই আমার চলে যায়। যখন সাংসদ ছিলাম তখনও ভাতা নিতাম না। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবেও বেতন নিই না।’’
ফের হাসপাতাল নিয়ে যাঁরা প্রশ্ন করেছিলেন তাঁদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘একটা বৈঠকে আসব, আর আপনারা বলবেন—এটা কোনও পদ্ধতি নয়। চিঠি দিয়ে বিষয়টি আমাকে আগাম জানাতে পারতেন। আমার তো একটা সীমাবদ্ধতা আছে। এখানকার সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিতে জানাতে পারতেন। দেখতেন সমস্যার সমাধান হত কি না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy