পান্ডুয়া এলাকার একাধিক দেওয়ালে বিজেপি প্রার্থীর লিখন। নিজস্ব চিত্র
দেওয়ালে দেওয়ালে ‘লকেট চট্টোপাধ্যায়’ আছেন। কিন্তু ‘রত্না দে নাগ’ কোথায়?
বঙ্গের ভোট-রঙ্গে পান্ডুয়ার বেলুন-ধামাসিন পঞ্চায়েতের ছোট সরসা গ্রামে তৃণমূলের হল কী! প্রচার-পর্বে ইতিমধ্যেই রাজ্যের সর্বত্র দেওয়ালে ‘ঘাসফুল’ ফুটে গিয়েছে। কিন্তু ওই গ্রামে শুধুই ‘পদ্ম’!
জয় বসু, তপন বাউলদাসের মতো গ্রামের তৃণমূল কর্মীদের গলা কাঁপছে, ‘‘বিজেপি বড্ড ভয় দেখাচ্ছে। কী যে করি! দেওয়াল লিখলে যদি মারধর খেতে হয়! দলীয় নেতৃত্ব চুপ করে বসে রয়েছেন। ওঁরা বিজেপির মোকাবিলা না-করলে প্রচারে নামব না।’’ অভিযোগ শুনে বিজেপি নেতাদের টিপ্পনী, ‘‘ধুর, কে মারধর করবে? ওরা তো নিজেদের গোষ্ঠী-কোন্দলেই জেরবার। দেওয়াল লিখবে কখন?’’
সোমবার ওই গ্রাম ঢুঁড়েও তৃণমূল প্রার্থী রত্না দে নাগের নামে দেওয়াল-লিখন চোখে পড়ল না। দেওয়াল ‘দখল’-এর নমুনাও দেখা গেল না। পক্ষান্তরে, বিজেপি ইতিমধ্যেই তাঁদের প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের সমর্থনে বেশ কিছু দেওয়াল লিখে ফেলেছে। কুড়ির বেশি দেওয়াল লেখার জন্য চুনকামও সারা। সিপিএম প্রার্থী প্রদীপ সাহার সমর্থনেও দেওয়াল-লিখন চলছে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
গত পঞ্চায়েত ভোটে পান্ডুয়া ব্লকে আসনের বিচারে তৃণমূলেরই প্রাধান্য রয়েছে। ছোট সরসার পঞ্চায়েত আসনে অবশ্য বিজেপি জিতে যায়। স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ, পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের দিন সন্ধ্যায় গ্রামের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় বিজেপি-র লোকেরা। প্রতিরোধের চেষ্টা করলে তাঁদের বেধড়ক মারধর করা হয়। তখন থেকেই কার্যালয়টি ওই অবস্থাতেই পড়ে রয়েছে। দলের ব্লক এবং জেলা নেতৃত্বকে জানানো হলেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। তৃণমূল কর্মী তপনের দাবি, ‘‘এ বার একটি দেওয়ালে আমাদের ছেলেরা চুনকাম করতে গিয়েছিল। বিজেপির ছেলেরা হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। বিষয়টি দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছি।’’ দেবু বাউলদাস নামে আর এক তৃণমূল কর্মীর কথায়, ‘‘বিজেপি হুমকি দিচ্ছে। তাই এখনও দেওয়াল-লিখন করিনি। ব্লকের নেতারা হাত গুটিয়ে থাকবেন, এটা চলতে পারে না। আগে ওঁরা আসুন। তার পরে ভাবব কী করব।’’
বিজেপির বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নিয়ে তৃণমূল কর্মীরা অবশ্য এখনও প্রশাসনের দ্বারস্থ হননি। তবে, ব্লক তৃণমূল সভাপতি তথা পান্ডুয়া পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ আনিসুল ইসলাম বিজেপি-জুজুর কথা মানেননি। তাঁর দাবি, ‘‘দুই শিল্পীকে দিয়ে পঞ্চায়েতে দেওয়াল-লিখন চলছে। কয়েকটি অঞ্চলে দেওয়াল লিখন বাকি আছে। দু’-এক দিনের মধ্যে ছোট সরসা গ্রামেও দেওয়াল-লিখন হবে।’’
প্রচারে এখনই এগিয়ে থাকায় তুরীয় মেজাজে আছেন বিজেপি নেতৃত্ব। পান্ডুয়ার বিজেপি নেতা শেখ নাসিরউদ্দিনের দাবি, ‘‘আসলে আমাদের প্রচার দেখে তৃণমূল ঘাবড়ে গিয়েছে। তার উপরে গোষ্ঠী-কোন্দলের জেরে ওদের হাল খারাপ। তাই আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে।’’
দু’পক্ষের এই চাপান-উতোরে মজা পাচ্ছেন স্থানীয় সিপিএম বিধায়ক আমজাদ হোসেন। তাঁর খোঁচা, ‘‘বিজেপি-তৃণমূল একই ডালের দুই ফুল। যোগসাজশ করেই এক পক্ষ দেওয়াল লিখছে। অপর
পক্ষ দেখছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy