বিপজ্জনক: প্রাণ বাজি রেখে এভাবেই চলে বাজি তৈরি। ফাইল ছবি
সামনে লোকসভা ভোট। তার আগে রাজ্যের বেআইনি বাজি কারখানাগুলি বন্ধের জন্য জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি দিয়ে আর্জি জানাল চন্দননগরের আইনি সহায়তা কেন্দ্র।
হাওড়া, হুগলি-সহ রাজ্যের অনেক জেলাতেই বহু বেআইনি বাজি কারখানা রয়েছে। উৎসব-পার্বণের জন্য সারা বছরই ওই সব কারখানায় হরেক কিসিমের বাজি তৈরি হয়। কিন্তু ভোটের সময় ওই সব বাজির কারবারিদের মোটা টাকার বিনিময়ে বোমা বানানোর বরাত দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। নির্বাচনের সময়ে ওই বোমা শুধু হিংসাই ছড়ায় না, প্রাণঘাতী রূপেও দেখা দেয়। আসন্ন ভোটে যাতে ফের একবার সেই বোমার আমদানি না-হয়, তা রুখতে উদ্যোগী হয়েছে আইনি সহায়তা কেন্দ্র।
ওই কেন্দ্রের কর্ণধার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বেআইনি বাজি কারখানাগুলিকে অনেক ক্ষেত্রে বোমা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এর বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে বোমা তৈরি এবং তা সরবরাহের যে প্রচলিত কাঠামোটা রয়েছে, তা আঘাতপ্রাপ্ত হবে। তাতে রাজ্যে এক ধাক্কায় নির্বাচনী সন্ত্রাসকে অনেকটাই বাগে আনা যাবে।’’
নির্বাচনে হিংসার ছবি এ রাজ্যে বহু পুরনো। বাম আমলে সিপিএমের বিরুদ্ধে নির্বাচনী সন্ত্রাসের ভুরি ভুরি অভিযোগ উঠত। হুগলিতে আরামবাগের মতো এলাকায় সন্ত্রাস চালিয়ে বিরোধীদের ঘেঁষতে দেওয়া হতো না বলে অভিযোগ। এখন প্রায় একই অভিযোগ সিপিএম-সহ বিরোধীরা শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোলে। আর এই সন্ত্রাসে বোমার ব্যবহারও চলে আসছে
দীর্ঘদিন ধরেই।
অথচ, জাতীয় পরিবেশ আদালতের কলকাতাস্থিত পূর্ব ভারতের শাখা ২০১৫ সালেই বেআইনি বাজি কারখানাগুলির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার
নির্দেশ দেয় রাজ্যের মুখ্যসচিব, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং রাজ্য পুলিশের ডিজিকে। কিন্তু তার পরেও নানা স্তরের ভোট হয়েছে। যথারীতি ফিরে এসেছে হিংসার ছবি। ব্যবহার
হয়েছে বোমা।
হুগলির চণ্ডীতলা, বেগমপুর, ডানকুনি, জাঙ্গিপাড়া, হরিপাল, ধনেখালি এবং আরামবাগের বিস্তীর্ণ এলাকায় বহু বেআইনি বাজি কারখানা রয়েছে বলে অভিযোগ। প্রতি বছর কালীপুজো-দীপাবলির আগে পুলিশ প্রশাসন নিয়মমাফিক তল্লাশি চালায়। বহু শব্দবাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়। গ্রেফতারও হন কারবারিরা। কিন্তু বাছরের বাকি সময় সেই নজরদারি বা তল্লাশি থাকে না বললেই চলে। আর সেই সুযোগেই ফের বেআইনি ভাবে বাজি বানানো শুরু হয়ে যায়। রাজনৈতিক দলগুলির নেতাকর্মীদের একাংশ ভোটের আগে সেই সুযোগই কাজে লাগান বলে অভিযোগ তুলেছে চন্দননগর আইনি সহায়তা কেন্দ্র।
তবে, কোনও রাজনৈতিক দলই ওই অভিযোগ মানেনি। সিপিএমের হুগলি জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘কোনও সংগঠন যদি রাজ্যে চলা বেআইনি বাজি কারখানাগুলি বন্ধের আর্জি জানায়, তবে তারা ঠিক কাজই করেছে। সত্যিই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তবে আমাদের দল ওই ধরনের কোনও অনৈতিক কাজে
যুক্ত নয়।’’ বিজেপির ওবিসি মোর্চার রাজ্য সভাপতি স্বপন পালও ওই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি প্রশাসনের দেখাই উচিত। শুধু বেআইনি বাজি কারখানা নয়, বেআইনি অস্ত্রও প্রচুর মজুত আছে। সে সবও উদ্ধার করা উচিত।’’ হুগলি জেলা তৃণমূলের এক নেতার দাবি, ‘‘আমাদের কেউ গুলি-বোমা তৈরিতে যুক্ত নয়। প্রশাসন
ব্যবস্থা নিলে নিক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy