Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
যদুরবেড়িয়ায় ‘ওয়ার রুম’ তৈরির কাজ শুরু

পেশাদারি প্রচারে আস্থা কংগ্রেস প্রার্থীর, নিয়োগ 

ইতিমধ্যে ওই পেশাদাররা প্রাথমিক কাজও শুরু করে দিয়েছেন। সোমা যেখানেই কর্মী-বৈঠকে যাচ্ছেন, সেখানকার ছবি তুলছেন তাঁরা।

তৎপরতা: ওয়ার রুমে বসছে ল্যাপটপ, কম্পিউটার। নিজস্ব চিত্র

তৎপরতা: ওয়ার রুমে বসছে ল্যাপটপ, কম্পিউটার। নিজস্ব চিত্র

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:৫৩
Share: Save:

ভোট প্রচারে পেশাদার নিয়োগ!

সেই ২০১৪ সাল থেকে উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেসের রক্তক্ষরণ হয়ে চলেছে। কমছে ভোট। তবু ভোটের ময়দান ছাড়েনি তারা। প্রচার-যুদ্ধে নতুনত্ব আনতে এ বার এই কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী সোমা রানিশ্রী রায় ১০ জন পেশাদার নিয়োগ করে ফেলেছেন।

ইতিমধ্যে ওই পেশাদাররা প্রাথমিক কাজও শুরু করে দিয়েছেন। সোমা যেখানেই কর্মী-বৈঠকে যাচ্ছেন, সেখানকার ছবি তুলছেন তাঁরা। কংগ্রেসের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই ছবি এবং দলের নীতি-আদর্শের কথা, উলুবেড়িয়া এলাকার সমস্যা ও মোদী-মমতার ব্যর্থতার কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরবেন ওই পেশাদররা। প্রচারে আরও কোনও নতুনত্ব আনা যায় কিনা, সে বিষয়েও তাঁরা প্রার্থীকে নিয়মিত পরামর্শ দেবেন। রণপা, লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন দলের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রার্থীর হয়ে প্রচার, সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা— এ সবও করবেন তাঁরা। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির নিরিখে নানা বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্যুইজ প্রতিযোগিতারও আয়োজন করবেন। যাঁরা জিতবেন, তাঁদের জন্য থাকবে পুরস্কার।

সোমা বাণীবন যদুরবেড়িয়ায় একটি ঘর ভাড়া নিয়েছেন। সেখানে তৈরি করছেন ‘ওয়ার-রুম’। এখানে থাকবে কম্পিউটার, ল্যাপটপ। শীঘ্রই ‘ওয়ার-রুম’ চালু হয়ে যাবে বলে তিনি জানান। কিন্তু সংগঠনের দুর্বলতা ঢাকতেই কি পেশাদার নিয়োগ?

পুরোপুরি মানতে চাননি সোমাদেবী। তবে, প্রতিপক্ষ হিসেবে বিজেপি এবং তৃণমূল যে এগিয়ে রয়েছে, তা মানছেন। তাঁর দাবি, ‘‘প্রার্থী হিসেবে আমার নাম ঘোষণা হওয়ার পর থেকে এই কেন্দ্রে একাধিক কর্মী-বৈঠকে যোগ দিয়েছি। কর্মীর অভাব চোখে পড়েনি। যাঁরা এখনও দলের কাজ করছেন, তাঁদের কুর্নিশ। প্রচারে পেশাদারদের সহায়তা নেওয়া আধুনিকতার নিদর্শন। তরুণ ও যুবক ভোটারদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে হলে সাবেক পদ্ধতি অনুসরণ করলে হবে না। আমি যদি কর্মীদের সঙ্গে সব সময় নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত থাকি তা হলে আমার কাজটি করবেন কারা? সেটাই নিয়ন্ত্রণ

করবেন পেশাদাররা।’’

প্রার্থী ওই দাবি করলেও দলের নেতাদের একাংশ মানছেন, সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে কংগ্রেস ৬৮ হাজার ভোট পেয়েছিল। ২০১৮ সালে এই কেন্দ্রের সাংসদ সুলতান আহমেদের মৃত্যুতে যে উপ-নির্বাচন হয়, তাতে কংগ্রেস ভোট পেয়েছিল মাত্র ২৩ হাজার। গত বছরের পঞ্চায়েত ভোটে কংগ্রেস এই লোকসভা কেন্দ্রে যে ৯১টি পঞ্চায়েত আছে তাতে কার্যত শূন্য পেয়েছে। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে আমতা কেন্দ্র থেকে কংগ্রেস প্রার্থী অসিত মিত্র জিতলেও সিপিএমের সঙ্গে জোট ছিল। একক ভাবে এই কেন্দ্রেও কংগ্রেসের অবস্থা শোচনীয়।

ফলে, প্রচারে গতি আনতে পেশাদার নিয়োগ ছাড়া প্রার্থীর আর উপায় ছিল না বলে মনে করছেন কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ। সোমা এআইসিসি-র সদস্য। স্থায়ী পর্যবেক্ষক হিসাবে তাঁকে বিভিন্ন রাজ্যে ঘুরতে হয়। তিনি বলেন, ‘‘আমি বিভিন্ন রাজ্যে দেখেছি, অনেক প্রার্থীই নির্বাচন পরিচালনার জন্য পেশাদার নিয়োগ করেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও পেশাদার নিয়োগ করে। এতে অবশ্যই কিছুটা কাজ হয়। আমার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে হাইকম্যান্ড।’’

সোমার প্রচার-কৌশলকে গুরুত্ব দিতে চাননি বিরোধীরা। হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা তৃণমূল সভাপতি পুলক রায় বলেন, ‘‘ভাড়াটে সৈনিক দিয়ে নির্বাচন করা যায় না। তাই প্রচারে পেশাদার নিয়োগের প্রশ্নই নেই।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদারও বলেন, ‘‘নির্বাচন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পেশাদাররা বিদায় নেবেন। কিন্তু দলের কর্মীরা থাকবেন। তাই আমরা কর্মীদের উপরেই ভরসা করি।’’ পেশাদার নিয়োগের প্রয়োজন দেখছেন না বিজেপি প্রার্থী জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 Congress Election Campaign
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE