Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভোটপ্রার্থীরা আদৌ আমাদের কথা ভাবেন?

এখানে সব প্রশ্নেই তর্ক-বিতর্ক জমে। মোহনবাগান না ইস্টেবেঙ্গল? মেসি বড় না রোনাল্ডো? অমিতাভ না শাহরুখ? মমতা-মোদী তো আছেই। শুরু হয়ে গিয়েছে ভোট-পর্ব। রাজনীতির তর্ক আরও প্রবল হচ্ছে এখানে। ঠিকানা—চায়ের দোকান। চন্দননগরের বড়বাজারে কার্ডিও রোডে শেখ আরসাদের চায়ের দোকানে জমে উঠল আড্ডা শুনলেন গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়। 

তর্ক-বিতর্ক: চায়ের কাপে রাজনীতির আলোচনা। ছবি: তাপস ঘোষ

তর্ক-বিতর্ক: চায়ের কাপে রাজনীতির আলোচনা। ছবি: তাপস ঘোষ

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৯ ০৯:৪২
Share: Save:

গৌতম গুহ রায় (অবসরপ্রাপ্ত চটকল শ্রমিক): আমি ৩৪ বছর গোন্দলপাড়া জুটমিলে চাকরি করেছি। ২০১২ সালে যখন অবসর নিলাম, কর্তৃপক্ষ ২৮ হাজার টাকা দিয়ে দায় সারতে চেয়েছিলেন। আমি ওই টাকা নিইনি। আমার পিছনে কিন্তু কোনও রাজনৈতিক দল দাঁড়ায়নি। আমার খুব সন্দেহ যে, ওরা আদৌ নিয়ম জানে কি না! শেষে চন্দননগর আইনি সহায়তা কেন্দ্রের সাহায্যে হাইকোর্টে মামলা করে আদায় হল ১ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা। অধিকাংশ চটকল শ্রমিক তো লেখাপড়া জানেন না। তারা কী সমস্যায় পড়েন, সেটা ভাবুন।

রামলক্ষণ সাউ (অবসরপ্রাপ্ত চটকল শ্রমিক): অবসর নেওয়ার পর গোন্দলপাড়া মিলের লেবার অফিসারের কাছে গেলাম। আমাকে বলা হল, আমি না কি ৭২ হাজার টাকা পাব। এরপর লোক আদালতে চন্দননগরে গেলাম। লোক আদালতের কথাও আমাদের মিল মালিকেরা শুনল না। শেষে হাইকোর্টের রায়ে পেলাম ১ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা।

গৌতমবাবু (রীতিমতো উত্তেজিত): আমি সারা জীবন চাকরি করে পেনশন পাব দেড় হাজার টাকা। আর সাংসদরা পাঁচ বছর ক্ষমতা থেকে মাসে ৫০ হাজার টাকারও বেশি পেনশন পায়? আমার ভোটেই ওঁরা নির্বাচিত হচ্ছে। আমাদের পেটে ভাত নেই। আমি তো ভোটই দেব না।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

দিলীপকুমার দত্ত (অবসরপ্রাপ্ত কৃষি-সমবায় ব্যাঙ্ক কর্মচারী): আমার পেনশন ৯১৮ টাকা। আমার ছেলে সরকারি চাকরি করে, তাই খেতে পাচ্ছি। বুড়ো বয়েসে ওষুধের খরচ বেশি লাগে। আরও যে কটা দিন বাঁচব, কী করে এই সামান্য পেনশনের টাকায় চালাব, বলতে পারেন? কেন্দ্রীয় সরকারকে বারবার চিঠি লিখেছিলাম পেনসন অন্তত ৩ হাজার টাকা করা হোক। কিন্তু কোথায় কী?

স্বপন চক্রবর্তী (চটকল মিলের শ্রমিক): ভোটের নামে আমার অনীহা এসে গিয়েছে। আমাদের মিল ১১ মাস বন্ধ। তাতে কোনও রাজনৈতিক দলের হুঁশ আছে? চন্দননগরে ৯টা মেলা হয়ে গেল। স্থানীয় বিধায়ক, সাংসদ কেউ একবারও আমাদের বিষয় নিয়ে সরকারের কাছে দরবার করলেন না। আমাদের মিলের পাঁচ হাজার শ্রমিক পরিবার। তাঁদের জীবিকার কী হবে? খালি ভোট এলে এমন দাপাদাপি! আর ভাল লাগে না।

গণেশ ভট্টাচার্য (রিকশা চালক): ভোট দেব। কিন্তু বুঝে। দিনের পর দিন শহরে শ’য়ে শ’য়ে টোটো বাড়ছে। এক সময় শহরে সাড়ে চার হাজার রিকশা চলত। এখন ২৫০ টা। টোটোর লাইসেন্স নেই। অথচ ওদের দাপটে আমাদের ভাত মারা যাচ্ছে।

মহম্মদ মজির (রিকশা চালক): নাতি-নাতনিদের মুখে খাবারই জোটাতে পারছি না। স্কুলে পড়াতে পারছি না। পেনশন তো দূর। রাতে ঝুপড়িতে নাতিদের নিয়ে আমার বৌ থাকে। পুরসভা একটা ঘরের ব্যবস্থা করতে পারল না। যাদের ভোট দিয়ে নিয়ে আসব তারা কি আদৌ আমাদের কথা ভাবে?

সকলে মিলে: সেটাই তো আসল কথা। এরা সকলেই ভোটের সময় কাজি আর ভোট ফুরোলেই...

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE