Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
দেহ আটকে বিক্ষোভ গ্রামবাসীর

এ বার একাকী বৃদ্ধা খুন বাগনানের গ্রামে

হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে চুরির উদ্দেশ্যেই বৃদ্ধাকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই মৃত্যুর কারণ পরিষ্কার হবে।”

মৃতার (ইনসেটে) বাড়ির সামনে পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র

মৃতার (ইনসেটে) বাড়ির সামনে পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র

সুব্রত জানা
বাগনান শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৮ ১২:০৬
Share: Save:

ব্যান্ডেলের পরে এ বার বাগনান। ফের নিজের ঘরে খুন হয়ে গেলেন একাকী এক বৃদ্ধা।

গত বছরের গোড়ায় ব্যান্ডেলের কাজিডাঙার বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত কলেজ-শিক্ষিকা সুলেখা মুখোপাধ্যায়কে কুপিয়ে, নলি কেটে খুন করা হয়েছিল। তিনি বাড়িতে একাই থাকতেন। তারপরই একা থাকা বৃদ্ধবৃদ্ধাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। বুধবার বাগনানের হাল্যান পঞ্চায়েতের দিলদা গ্রামের বাসিন্দা সুষমা আদক (৮৮) খুনের ঘটনাতেও সেই প্রশ্ন ফিরে এল।

এ দিন সকালে সুষমাদেবীর বাড়ি থেকে তাঁর পরিচারিকার চিৎকারে হাজির হয়ে আঁতকে ওঠেন পড়শিরা। তাঁরা দেখেন, ঘরের দরজা ভাঙা। বিছানায় চিৎ হয়ে পড়ে বৃদ্ধার দেহ। নাকে-মুখে রক্তের দাগ। গায়ের সব গয়না লোপাট। আলমারি ভাঙা। পুলিশ আসে। দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে মৃতদেহ আটকে পুলিশকে ঘিরে ঘণ্টাদুয়েক বিক্ষোভ দেখান পড়শিরা। পুলিশ দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ থামে।

হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে চুরির উদ্দেশ্যেই বৃদ্ধাকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই মৃত্যুর কারণ পরিষ্কার হবে। সন্দেহের তালিকায় বেশ কয়েকজন রয়েছে। তদন্ত চলছে।’’ সুলেখা-খুনের তদন্তেও পুলিশ জানিয়েছিল, টাকা এবং গয়না হাতানোর জন্যই ব্যান্ডেলের ওই বৃদ্ধাকে খুন করা হয়।

পাঁচিলঘেরা মাটির দোতলা বাড়িতে সুষমাদেবী একাই থাকতেন। সবিতা আদক নামে তাঁর পরিচারিকার বাড়ি কাছেই। তিনিই মূলত সুষমাদেবীকে দেখাশোনা করতেন। দু’বেলা তিনিই খাবার তৈরি করে বৃদ্ধাকে দিয়ে যেতেন। তাঁর দাবি, কালীপুজোর জন্য মঙ্গলবার রাতে উপোস করেছিলেন সুষমাদেবী। তাই বিকেলে ওই বাড়িতে তিনি মোমবাতি জ্বালিয়ে চলে যান। বুধবার সকাল আটটা নাগাদ সুষমাদেবীর ঘর মেরামতির জন্য পরেশ আদক নামে এক মিস্ত্রিকে নিয়ে যান। অনেক ডাকাডাকিতেও সুষমাদেবীর সাড়া না-মেলায় পরেশ পাঁচিল ডিঙিয়ে নেমে সদর দরজা খোলে। এরপরে দু’জনে ঘরে গিয়ে ওই দৃশ্য দেখে চিৎকার করে ওঠেন।

সবিতার এই দাবি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন। বৃদ্ধার বড় ভাই অসিত ভৌমিক উলুবেড়িয়ার বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘‘কেন এমন হল বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে দিদির খুব পরিচিত কেউ এই কাজ করেছে।’’ সুষমাদেবীর ছোট ভাইয়ের স্ত্রী শিখা বলেন, ‘‘লক্ষ্মীপুজোর পর এসেছিলাম। তখন দিদির হাতে দু’টি সোনার বাউটি, চারটি সোনার চুড়ি, দু’টি আংটি দেখেছিলাম। ঘরে কয়েক হাজার টাকাও ছিল। কিছুই নেই দেখলাম। এ সব নিশ্চিত কেউ জানত। তাই দিদিকে খুন হতে হল।’’ অসিতবাবুই থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৪ বছর বয়সে শ্যামপুরের ভগবানপুরে কানাইলাল আদকের সঙ্গে সুষমাদেবীর বিয়ে হয়। এক বছরের মধ্যে স্বামী মারা যান। তারপর থেকে সুষমাদেবী দিলদা গ্রামে বাপেরবাড়িতেই থাকতেন। সুষমাদেবীরা নয় ভাইবোন। বর্তমানে দুই ভাই এবং তিন বোন জীবিত। তাঁরা ওই পঞ্চায়েত এলাকাতেই থাকেন। সুষমাদেবীর বাবা সুধীরচন্দ্র ভৌমিক বাঁকুড়ায় স্বাস্থ্য দফতরে কাজ করতেন। বছর কুড়ি আগে মারা যান। মা মেঘমালাদেবী মারা যান বছর চারেক আগে। মায়ের মৃত্যুর পর থেকে বাবার পেনশনের টাকা সুষমাদেবীই পাচ্ছিলেন। তাঁর বাড়ি সংলগ্ন পাঁচ বিঘা জমি এবং তিনটি পুকুরও রয়েছে। ওই জমি-পুকুরের আয়ের একাংশ পান সুষমাদেবীর পরিচারিকা, বছর চল্লিশের সবিতা। এ ছাড়া, মাসে এক হাজার টাকা মাইনে। দিদিকে দেখাশোনার জন্য বছরখানেক আগে সবিতাকে নিয়োগ করেন
সুষমাদেবীর ভাইয়েরা।

নিরীহ সুষমাদেবীকে এ ভাবে খুন করা মেনে নিতে পারছেন না পড়শিরা। বাগনান এলাকায় এমন ঘটনা প্রথম বলে তাঁরা জানিয়েছেন। একা থাকা বৃদ্ধবৃদ্ধাদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। জেলা পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, ওই বৃদ্ধবৃদ্ধারা আবেদন জানালে পুলিশ সাহায্য করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Crime Community Issues
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE