Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

হাওড়ায় জমা জঞ্জাল নিয়ে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী

মুখ্যমন্ত্রী বীরভূমে যা বলেছেন হাওড়ার নাগরিকদের অভিজ্ঞতা তা থেকে আলাদা নয়। 

স্তূপীকৃত: রাস্তার পাশেই জমে রয়েছে আবর্জনা। বুধবার, হাওড়ায় বন্দরের আবাসনের সামনে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

স্তূপীকৃত: রাস্তার পাশেই জমে রয়েছে আবর্জনা। বুধবার, হাওড়ায় বন্দরের আবাসনের সামনে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৪২
Share: Save:

সরকারের সদর দফতর এখন হাওড়ায়। বিদ্যাসাগর সেতু পেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেখানে প্রতিদিনের যাতায়াত। হাওড়া কেমন আছে তা জানতেও তাই তাঁর দেরি হয় না। বুধবার বীরভূমের প্রশাসনিক সভায় গিয়েও তা বুঝিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘আজ সকালে একটা খবর পেয়েছি। হাওড়ায় গত আট-দশ দিন ধরে জঞ্জাল পরিষ্কারের কাজ হচ্ছে না।’’ এর পরেই তিনি পুরসচিব সুব্রত গুপ্তকে বলেন, ‘‘এ ভাবে চলতে পারে না। প্রশাসক বসানোর পরেও যদি কাজ না হয় তা হলে লাভ কী?’’

সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন, যে সব পুরসভায় প্রশাসক বসেছে তাদের মাথায় ছোট ছোট কমিটি করে দিতে। তিনি বলেন, ‘‘ওই কমিটিতে কারা থাকবেন, সেটা আমি বলে দেব। কারণ আমি জানি কারা কাজ করতে পারেন।’’

মুখ্যমন্ত্রী বীরভূমে যা বলেছেন হাওড়ার নাগরিকদের অভিজ্ঞতা তা থেকে আলাদা নয়।

এ দিন সকালে হাওড়া ব্রিজ সংলগ্ন বন্দরের আবাসনের সামনে গিয়ে দেখা যায় সেখানে পাহাড়প্রমাণ জঞ্জাল পড়ে রয়েছে। দুর্গন্ধ এড়াতে লোকজনকে নাকে চাপা দিয়ে যেতে হচ্ছে। একই অবস্থা জিটি রোডের পাশে ফজিরবাজারের কাছের ভ্যাটে। আবর্জনা উপচে পড়ে রয়েছে রাস্তায়। একই অবস্থা মধ্য হাওড়া-সহ উত্তর হাওড়ার বিভিন্ন ওয়ার্ডে। বহু জায়গাতেই নিয়মিত আবর্জনা পরিষ্কার না হওয়ায় তা উপচে পড়ে রাস্তায় চলে আসতে দেখা গেল। সব থেকে খারাপ অবস্থা পুরসভার সংযুক্ত ওয়ার্ডগুলির। সেখানে বেলগাছিয়া, কোনা প্রভৃতি এলাকার রাস্তার পাশে স্তূপীকৃত আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে।

গত ১০ ডিসেম্বরে বর্তমান তৃণমূল পুর বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর রাজ্য সরকার হাওড়া পুরসভায় নির্বাচন না করে প্রশাসক নিয়োগ করে। পুর কমিশনার বিজিন কৃষ্ণকেই পুর প্রশাসক করা হয়। পুরসভার ৬৬টি ওয়ার্ডে পুর পরিষেবার নজরদারি কী ভাবে হবে, তা নিয়ে সরকারি ভাবে কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়া হলেও, জেলা তৃণমূলের নির্দেশে বিভিন্ন ওয়ার্ডের সভাপতি ও কার্যকরী সভাপতিকে অফিস খুলে বসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, সেই অফিসগুলি কোথায় হয়েছে বা কার সঙ্গে দেখা করলে নিত্যদিনের সমস্যা জানানো যাবে— তার প্রচার না হওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন বাসিন্দারা। তাঁরা সরাসরি চলে আসছেন পুরসভার সদর দফতরে। কিন্তু সেখানেও কোনও সাহায্য মিলছে না বলে অভিযোগ।

এ দিন হাওড়ার পুর প্রশাসককে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘পুরো ব্যাপারটাই বিধায়কেরা সামলাচ্ছেন। আমরা সমস্ত শংসাপত্রের কপি ছেপে পাঠিয়ে দিয়েছি। সেগুলি বিধায়কেরাই স্বাক্ষর করে দেবেন এবং এলাকার সমস্যা হলে পুরসভায় জানাবেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পুর পরিষেবা নিয়ে কোনও অভিযোগ আমরা পাইনি।’’

পুর প্রশাসক জানান, সংযুক্ত এলাকা-সহ কয়েকটি এলাকায় জঞ্জাল অপসারণ নিয়ে আগে থেকেই সমস্যা রয়েছে। সেটা সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে। পুর প্রশাসক বলেন, ‘‘৬৬ জন কাউন্সিলর নজরদারি করতেন। তাঁরা না থাকায় সমস্যা তো হবেই। পুরসভার নিজস্ব লোকবল দিয়ে তা যতটা সম্ভব চেষ্টা করছি সমাধানের।’’

পুরসভা সূত্রের খবর, জঞ্জাল অপসারণ বিভাগে ৪০০০ কর্মী খাতায়কলমে থাকলেও অনেকে নিয়মিত কাজে আসেন না। তাই জঞ্জাল অপসারণ নিয়ে সমস্যা হয়। পুর প্রশাসক বলেন, ‘‘আগে জঞ্জাল অপসারণ দফতরের কর্মীরা হাজিরা দিতেন কাউন্সিলরদের কাছে। এখন তাঁদের হাজিরা দিতে হবে সেক্টর অফিসগুলিতে। তা হলেই জানা যাবে কারা নিয়মিত আছেন।’’ পুর প্রশাসকের দাবি, ৪০০০ কর্মী নিয়মিত কাজ করলে শহরে জঞ্জাল অপসারণে কোনও সমস্যা থাকবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Garbage Howrah Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE