Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

স্টেশনের বেঞ্চে পড়ে মৃতদেহ, যাত্রীরা ভাবলেন ঘুমোচ্ছেন!

ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, অনেক আগেই মৃত্যু হয়েছে ওই তাঁর। পুলিশ মৃতের পকেট থেকে একটি বন্ধ মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। সেই সূত্রেই জানা যায়, মৃতের নাম স্বপনকুমার হালদার (৫০)। বাড়ি বেহালা চৌরাস্তা এলাকায়।

আকস্মিক: এ ভাবেই পড়েছিল স্বপনবাবুর দেহ। মঙ্গলবার সকালে ফুলেশ্বর স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র

আকস্মিক: এ ভাবেই পড়েছিল স্বপনবাবুর দেহ। মঙ্গলবার সকালে ফুলেশ্বর স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৮ ০১:১৭
Share: Save:

ভোর ৫টা নাগাদ ফুলেশ্বর স্টেশনের ১ নম্বর প্লাটফর্মে বেঞ্চে তাঁকে দেখেছিলেন অনেকেই। পরিপাটি নীল ট্র্যাক-প্যান্ট, খয়েরি টি-শার্ট পরা ভদ্রলোক মাথার নীচে ডান হাত রেখে শুয়েছিলেন।

সকাল ৯টা নাগাদ কাজ সেরে ফিরেও তাঁদের অনেকে দেখেন ঠিক একই ভঙ্গিতে শুয়ে রয়েছেন ভদ্রলোক। চার ঘণ্টায় এতটুকু নড়াচড়া করেননি! স্থানীয় বাসিন্দা অনুপ বাগের দাবি, সন্দেহ হওয়ায় তিনি ডাকাডাকি শুরু করেন। হকারদের নিয়ে খবর দেন রেল পুলিশে। কিন্তু লাভ হয়নি। অভিযোগ, তার দু’ঘণ্টা পরও পুলিশ আসেনি। বেলা ১১টা নাগাদ অনুপবাবুরা খবর দেন স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে। অভিযোগ, তারপরেই ন়ড়ে বসে পুলিশ।

ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, অনেক আগেই মৃত্যু হয়েছে ওই তাঁর। পুলিশ মৃতের পকেট থেকে একটি বন্ধ মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। সেই সূত্রেই জানা যায়, মৃতের নাম স্বপনকুমার হালদার (৫০)। বাড়ি বেহালা চৌরাস্তা এলাকায়। জোকা এলাকার একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। সোমবার সন্ধ্যায় অফিস থেকে বাড়ি ফিরে স্ত্রীকে বলেছিলেন, ‘‘একটু ঘুরে আসছি, ফিরব খানিকক্ষণ পরে।’’ কিন্তু আর ফেরেননি। সকাল থেকে তাঁকে ফোন করে পাওয়াও যায়নি।

স্বপনবাবুর ছেলে সুরজিৎ হালদার এ দিন সকালেই গিয়েছিলেন হরিদেবপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করতে। সেখানে বসেই তিনি উলুবেড়িয়া জিআরপির ফোন পান। সুরজিৎ বলেন, ‘‘বাবা অফিস থেকে ফিরে পাড়ার মধ্যেই আড্ডা দিতেন। সোমবারও তেমনই বেরিয়েছিলেন। আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সকালে মা-র কাছ থেকে জানতে পারি সারারাত বাড়ি ফেরেননি বাবা। সকাল থেকে টানা ফোন করে গিয়েছি। বন্ধ ছিল ফোন।’’

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিনের মতো সাড়ে ৬টা নাগাদ অফিস থেকে ফিরেছিলেন স্বপনবাবু। ৭টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত টিভি দেখে পাড়ার দোকানে গিয়েছিলেন রুটি কিনতে। সে রুটি বাড়িতে রেখেও যান। স্ত্রীকে বলে যান ‘একটু ঘুরে আসছি।’ এমনটাই নিয়ম হালদার বাড়ির। কিন্তু সারা রাত বাড়ি না ফেরায় শুরু হয় খোঁজ।

গোটা ঘটনায় এক দিকে যেমন রহস্য রয়েছে, তেমনই আঙুল উঠছে সাধারণ মানুষের অবহেলার দিকেও। বেহালার বাসিন্দা ওই ব্যক্তি সন্ধ্যার পর প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে ফুলেশ্বরে গেলেন কেন? কার সঙ্গেই বা গেলেন? স্টেশনে ঘুমিয়ে পড়লেন কেন? মোবাইল বন্ধ হল কী করে?

সুরজিৎ বলেন, ‘‘কেন, কী করে বাবা ওখানে গেলেন জানি না। কিন্তু স্টেশনে বসে হয়তো অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। যদি কেউ একটু আগে বাবাকে নজর করতেন, হয়তো চিকিৎসার সুযোগ মিলত।’’ কেন তাঁকে একটু আগে ডেকে দেখলেন না যাত্রীরা। অনেকের দাবি, ভদ্রলোক এমন ভাবে শুয়ে ছিলেন, মনেই হয়নি অসুস্থ হয়ে থাকতে পারেন!

কিন্তু পুলিশকে খবর দেওয়ার পরও কেন দু’ঘণ্টা সময় লাগল স্বপনবাবুকে উদ্ধার করতে? রেল পুলিশ অবশ্য দু’ঘণ্টা সময় লাগার কথা স্বীকার করেনি। এক কর্তার দাবি, ‘‘যখনই খবর পেয়েছি, তখনই গিয়েছি প্লাটফর্মে।’’ দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। শুরু হয়েছে তদন্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Passanger Train Rail Station
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE