Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Arambagh

এ বার বাঁধ সংস্কারের দাবি আদায় ‘অনশন দাদা’র

গ্রামবাসীদের নিয়ে অনশন করে ফের আরও একটা দাবি আদায় করলেন আরামবাগের ‘অনশন দাদা’।

সুশীলকুমার জানা।

সুশীলকুমার জানা।

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২০ ০৬:১১
Share: Save:

গ্রামবাসীদের নিয়ে অনশন করে ফের আরও একটা দাবি আদায় করলেন আরামবাগের ‘অনশন দাদা’।

সেচ দফতর জানিয়ে দিয়েছে, সালেপুর-১ পঞ্চায়েতের পশ্চিমপাড়ায় দ্বারকেশ্বর নদের বাঁধ সংস্কার করা হবে। এ জন্য অর্থ অনুমোদন হয়েছে। পশ্চিমপাড়ারই বাসিন্দা বছর সাতান্নর সুশীলকুমার জানা। যিনি গত ১১ বছরে নিজের গ্রামে উন্নয়নের দাবিতে এই নিয়ে সাত বার অনশন করলেন। দাবি আদায়ে সব ক’টিতেই সফল হওয়ায় গ্রামবাসীদের কাছে তিনি হয়ে গিয়েছেন ‘অনশন দাদা’।

দ্বারকেশ্বরের ভাঙন থেকে গ্রাম বাঁচাতে প্রথম দফায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর গ্রামবাসীদের নিয়ে অনশনে বসেন সুশীল। অভিযোগ ছিল, গত কয়েক বছরে বন্যায় প্রায় ২৫০ বিঘা জমি-সহ বাগান, ঘরবাড়ি নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। সে জন্য ভাঙন রুখতে বোল্ডার পাইলিং করে পাড় মজবুত করার দাবি তোলেন তাঁরা। সেই দফায় অনশনের দ্বিতীয় দিনে প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিরা এক বছরের মধ্যেই কাজটি হবে জানিয়ে আশ্বাস দিলে সুশীল অনশন ভঙ্গ করেন। কিন্তু কাজ না-হওয়ায় গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর ফের গ্রামবাসীদের নিয়ে অনশন শুরু করেন ওই প্রৌঢ়। অনশনের চতুর্থ দিনে জেলা সেচ দফতরের (নিম্ন দামোদর সেচ বিভাগ) লিখিত প্রতিশ্রুতি পেয়ে অনশনে ইতি টানেন তিনি।

কিছুদিন আগেই গ্রামবাসীদের অনশন-আন্দোলনের কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন জেলা সেচ দফতরের (নিম্ন দামোদর সেচ বিভাগ) এগ্‌জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সোমনাথ দেব। শনিবার তিনি বলেন, “গ্রামবাসীদের দাবিমতো প্রায় ৫০০ মিটার লম্বা নদীবাঁধটি সংস্কারে ১ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা অনুমোদন হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। ফেব্রুয়ারি মাসে কাজ শুরু করা যাবে বলে আশা করছি।”

দাবি মেটায় সুশীল খুশি। তিনি বলেন, “গ্রামে উন্নয়ন সংক্রান্ত ঘাটতি মেটাতে বারবার আবেদন করে ব্যর্থ হয়েই এই অনশনের পথ নিয়েছি। শান্তিপূর্ণ ভাবে এই আন্দোলনে গ্রামবাসীকেও পাশে পাই।” সুশীলের সঙ্গে অনশনে নামেন যে সব গ্রামবাসী, তাঁদের মধ্যে বরুণ ঘোড়ুই এবং অভিরাম ভৌমিক বলেন, ‘‘দরখাস্ত বা স্মারকলিপি জমার পরে প্রশাসনের দরজায় হত্যে দিয়েও অনেক সময়ে কাজ হয় না। সুশীলের দেখানো অনশনের রাস্তাই ঠিক।” একই মত নন্দকুমার সাউ, সঞ্জিত বেরা, নবকুমার সাউ, বিকাশ চৌধুরী বা জয়দেব শাসমলের মতো গ্রামবাসীর।

গ্রামটিতে লোকসংখ্যা প্রায় ৬০০। প্রায় সকলেই কৃষিকাজ করেন। গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগের দীর্ঘ আবেদন-নিবেদনে ফল না-মেলায় ২০০৯ সালে প্রথমবার অনশনে বসেন সুশীল। আরামবাগের তৎকালীন বিধায়ক সিপিএমের বিনয় দত্তর বিশেষ উদ্যোগে সেই দাবি পূরণ হয়েছিল। ওই বছরেই অনশনের জেরে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রও হয় গ্রামে। বছর দুয়েক পরে একই উপায়ে চাষাবাদের জন্য গ্রামে ‘রিভার পাম্প’ বসাতেও সফল হন সুশীল। ২০১৪ সালে গ্রামে ৩০০ মিটার রাস্তা তৈরি, তারপরে নদী থেকে বেআইনি বালি তোলা আটকানো, মাটি কাটা রোধ— তাঁর সব দাবিই পূরণ করেছেন সুশীল। হাতিয়ার অনশন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arambagh Barrage Renovation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE