Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

চোর অপবাদে গণপিটুনি ‘পুলিশ বাপি’কে

বৃহস্পতিবার সকালে চোর সন্দেহে শ্রীবাস দত্ত লেনের বাসিন্দা বাপিকে বেধড়ক মারধর করেছিল পাশের পাড়ার লোকেরা। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, গত বুধবার এলাকার একটি বাড়িতে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান ছিল।

নিগৃহীত: শুক্রবার নিজের পাড়ায় বাপি প্রসাদ। নিজস্ব চিত্র

নিগৃহীত: শুক্রবার নিজের পাড়ায় বাপি প্রসাদ। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস দাশ
হাওড়া শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:২২
Share: Save:

দাগি চোর তো ননই। বরং সুস্থ থাকলে হাওড়া সিটি পুলিশের হয়ে অস্থায়ী ভাবে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করে থাকেন তিনি। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই মাঝেমধ্যে মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় তাঁর। আর তখনই আচরণে কিছু অসঙ্গতি লক্ষ করা যায়। যেমন ঘটেছিল বৃহস্পতিবার। হাওড়া থানার সদর বক্সি লেনে গণপিটুনির ঘটনার তদন্তে নেমে নিগৃহীত যুবক বাপি প্রসাদ সম্পর্কে এ কথাই জানতে পেরেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার সকালে চোর সন্দেহে শ্রীবাস দত্ত লেনের বাসিন্দা বাপিকে বেধড়ক মারধর করেছিল পাশের পাড়ার লোকেরা। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, গত বুধবার এলাকার একটি বাড়িতে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান ছিল। খিদে পাওয়ায় সেখান থেকেই কোনও ভাবে কিছুটা পায়েস জোগাড় করেছিলেন বাপি। এর পরে নির্জনে বসে তা খাওয়ার জন্য তিনি ঢুকে পড়েন একটি বাড়ির শৌচাগারে। সেখান থেকে তাঁকে হাতেনাতে পাকড়াও করেন গৃহকর্তা সমর দাস। চোর সন্দেহে বাপিকে তিনি তুলে দেন পাড়ার লোকেদের হাতে। এর পরেই নাইলনের দড়ি দিয়ে বাপিকে বাতিস্তম্ভে বেঁধে শুরু হয় এলোপাথাড়ি মারধর।

শুক্রবার বাপির পরিবারের সদস্যেরা জানাচ্ছেন, সুস্থ থাকলে হাওড়া সিটি পুলিশের হয়ে কাজ করেন বাপি। ফলে পুলিশের অনেকেই তাঁকে চেনেন। কিন্তু মাঝেমধ্যে বাপির মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। তখন বিনা নিমন্ত্রণে কোনও অনুষ্ঠানবাড়িতে হাজির হয়ে চুপিসাড়ে খাবার খেয়ে ফেলার মতো কাজকর্মও করে ফেলেন বছর বাইশের এই যুবক। তাঁরা দুই ভাই এবং এক বোন। বাপির বাবা তাঁর বোনের কাছে থাকেন। এ দিন সকালে ছেলের গণপিটুনির খবর ও ছবি দেখে তাঁরা এলাকায় ছুটে যান।

এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ঘটনাস্থল প্রায় সুনসান। তবে বাপির বাড়ির সামনে পাড়ার লোকেদের জটলা। তাঁর পরিবারের দাবি, এলাকার অনেকেই বাপির মানসিক অসুখের কথা জানেন। ওই যুবকের বোন সুস্মিতা বাহাদুর এ দিন বলেন, ‘‘পাশের পাড়ার লোকজন সকলেই জানতেন যে, দাদার মাথার গোলমাল রয়েছে। তার পরেও তাঁকে কেন এ ভাবে মারধর করা হল? যাঁরা দাদাকে এ ভাবে বেঁধে মেরেছেন, তাঁদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক।’’

বৃহস্পতিবার গণপিটুনির ঘটনার পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে বাপিকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিল। শুক্রবার হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁকে। খবর পেয়ে বাপির দাদা গণেশ হাসপাতালে এসে তাঁকে বাড়ি নিয়ে যান। গণেশেরও দাবি, ‘‘ভাই কোনও মতেই চোর নয়। ওর মাথার গোলমালের জন্য এ সব করে ফেলে।’’ বাপির প্রতিবেশী কল্পনা রাম নামে এক মহিলাও বলছেন, ‘‘ও ভীষণ পরোপকারী। ওকে কিছু করে দিতে বললে কখনও না বলত না।’’

কিন্তু গণপিটুনির ঘটনার এক দিন পরেও কেন কোনও অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা গেল না? পুলিশের দাবি, কাগজে প্রকাশিত ছবির সূত্র ধরে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হয়েছে। তবে ঘটনার পর থেকেই পাড়াছাড়া ওই অভিযুক্তেরা। হাওড়া সিটি পুলিশের এসিপি (দক্ষিণ) গুলাম সারোয়ার এ দিন বলেন, ‘‘ওই যুবকের বাড়ির লোকের অভিযোগ পাওয়ার আগেই মারধরের মামলা করে তদন্ত শুরু করেছি। মারধরের সময়ের ছবি জোগাড় করে ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে আক্রান্ত যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তল্লাশি চলছে। কিন্তু ঘটনার পরেই অভিযুক্তরা গা ঢাকা দিয়েছে। কাউকেই ছাড়া হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Beating Thief Police Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE