Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

চন্দননগরের ‘মেমসাহেবের বাড়ি’ হবে আবাসন

চল্লিশের দশকে লন্ডনের ডরিস ম্যাথুর চন্দননগর বেড়াতে এসেছিলেন। শহরের বিভিন্ন এলাকার পথ-কুকুরদের দেখে তিনি কষ্ট পান। দেশে ফিরে তিনি ওই সব অবলা প্রাণীদের জন্য কিছু করার কথা ভাবেন। ১৯৪৮ সালে ফের চন্দননগরে ফেরেন। হরিদ্রাডাঙায় ১২০ কাঠা জমি কিনে পথের কুকুর-বিড়ালদের জন্য তৈরি করেন খামার-বাড়ি।

তাপস ঘোষ
চন্দননগর শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৬:৩৯
Share: Save:

কলি, গুড়গুড়ি, মান্টু, পুশিদের এখন তবু দু’বেলা দু’মুঠো খাবার মিলছে। আর কিছুদিন পরে কী হবে?

এই প্রশ্নই এখন ভাবাচ্ছে চন্দননগরের হরিদ্রাডাঙা এলাকার বাসিন্দাদের। কারণ, আগাছায় ঢেকে যাওয়া পাড়ার ‘মেমসাহেবের বাড়ি’ ভেঙে হবে আবাসন। কলি, গুড়গুড়িরা যে ওই বাড়িরই পোষ্য!

চল্লিশের দশকে লন্ডনের ডরিস ম্যাথুর চন্দননগর বেড়াতে এসেছিলেন। শহরের বিভিন্ন এলাকার পথ-কুকুরদের দেখে তিনি কষ্ট পান। দেশে ফিরে তিনি ওই সব অবলা প্রাণীদের জন্য কিছু করার কথা ভাবেন। ১৯৪৮ সালে ফের চন্দননগরে ফেরেন। হরিদ্রাডাঙায় ১২০ কাঠা জমি কিনে পথের কুকুর-বিড়ালদের জন্য তৈরি করেন খামার-বাড়ি। নিজেও সেখানে থাকতেন। সেই বাড়িই পরে ‘মেমসাহেবের বাড়ি’ নামে পরিচিত হয়। পোষ্যদের দেখভালের জন্য গড়া হয় ‘দ্য অল লাভার্স অব অ্যানিম্যালস্ সোসাইটি’।

পুরনো দিনের কথা বলছিলেন বাড়ির বর্তমান ১২টি পোষ্যের ‘কেয়ারটেকার’ রিতা চৌধুরী। নিজে পরিচারিকার কাজ করেন। সেই অর্থেই কুকুর-বিড়ালগুলিকে খাওয়ান। তাঁর কথায়, ‘‘হোমের জায়গাটি বিক্রি হয়ে গিয়েছে। অবলা প্রাণীগুলির কী হবে, এটাই চিন্তার। ওদের একটু থাকার জায়গার ব্যবস্থা হলে আমি দেখাশোনা করতে পারব।’’

৮ বছর ওই বাড়িতে কাজ করছেন রিতাদেবী। তিনি জানান, ১৯৮২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ডরিস ম্যাথুর মৃত্যু হয়। অবলা প্রাণীগুলির জন্য তিনি সুপারভাইজার, রান্নার লো‌ক, পশু চিকিৎসক নিয়োগ করেছিলেন। সেই সময়ে আরও অনেক কুকুর-বিড়ালের ঠিকানা হয়েছিল ওই বাড়ি। ডরিসের মৃত্যুর বেশ কয়েক বছর পরেও কুকুর-বিড়ালগুলির দেখভালের সমস্যা হয়নি। সোসাইটিতে বহু পশুপ্রেমী যুক্ত হয়েছিলেন। তাঁরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।

বাসস্থান: এখানেই ঠাঁই গুড়গুড়ি-পুশিদের। নিজস্ব চিত্র

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ধীরে ধীরে সোসাইটি-র সদস্যসংখ্যা কমতে থাকে। অন্তত বছর দশেক ধরে নজরদারির অভাবে বাড়িটি বেহাল হয়ে পড়ে। সংস্কারের অভাবে চারিদিক আগাছায় ভরে যায়। উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেশ কিছু কুকুর-বিড়াল মারাও যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে হোমের বাগানে দুষ্কৃতীর আনাগোনা শুরু হয়েছিল। তাঁরা বাড়িটি সংস্কারের দাবি জানিয়ে সোসাইটির কাছে দরবার করলেও কোনও ফল মেলেনি।

সম্প্রতি সোসাইটি-র হাত থেকে মেমসাহেবের বাড়ি-জমি সবটাই কিনে নেন স্থানীয় এক প্রোমোটার। সেখানে আবাসন তৈরির প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সে জন্য ঝোপঝাড় কাটা থেকে জমি জরিপের কাজও চলছে। এতেই পোষ্যদের ভবিষ্যৎ ভেবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন রিতাদেবী এবং এলাকার কিছু পশুপ্রেমীও। রত্না দাস নামে দমদমের এক পশুপ্রেমী এক সময়ে ওই বাড়িতে কিছু কুকুর রেখে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘হোমটা প্রোমোটারের হাতে চলে যাওয়ায় অবলা জীবগুলিকে আর কেউ দেখার থাকবে না। একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই পেলে ওরা বেঁচে যায়।’’

‘মেমসাহেবের বাড়ি’ হস্তান্তর নিয়ে সোসাইটির সম্পাদক রুবি গুপ্তের কোনও প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। তিনি ফোন ধরেননি। তবে, যে প্রোমোটার ওই জমিতে আবাসন বানাচ্ছেন, সেই সমরজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘‘পশু-খামারটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেহাল হয়ে পড়েছে। সে জন্যই জায়গাটি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। ওখানে আবাসন প্রকল্পের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। হোমের পোষ্যদের জন্য চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।’’

কলি-গুড়গুড়ি-মান্টুদের ভবিষ্যৎ কী, এখন সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Home Pets Construction
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE