Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পড়ে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার প্রতীক্ষালয়

কিন্তু অভিযোগ, এত টাকার খরচ করে তৈরি এই আধুনিক মানের যাত্রী প্রতীক্ষালয়টি তৈরির উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। দোতলায় কাফেটেরিয়াও হয়নি। আর চিকিৎসক না পাওয়া যাওয়ায় জরুরি স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্রও চালু হয়নি।

এসি প্রতীক্ষালয়ের শুরু না হওয়া কাফেটেরিয়া।

এসি প্রতীক্ষালয়ের শুরু না হওয়া কাফেটেরিয়া।

দেবাশিস দাশ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৪৩
Share: Save:

শীতাতপনিয়ন্ত্রিত প্রতীক্ষালয়। অথচ যাত্রীই নেই! অভিযোগ, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে রাতে আলো জ্বলে না। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রও ঠিক মতো চলে না। রাস্তার পাশে তৈরি হওয়া সাধারণ প্রতীক্ষালয়গুলির স্টিলের ফ্রেম হয় কেটে চুরি করে নেওয়া হয়েছে, নয়তো জং ধরে ভেঙে পড়ে গিয়েছে।

বছর খানেক আগে দেড় কোটি টাকার বেশি খরচ করে তৈরি করা হাওড়া পুরসভার যাত্রী প্রতীক্ষালয়গুলির পরিস্থিতি এখন এমনই। হাওড়ায় তৃণমূল পুরবোর্ডের দায়িত্বে আসার পরে শহরের বিভিন্ন বড় রাস্তার পাশে যাত্রী প্রতীক্ষালয় তৈরি করে দেয়। কয়েকটি আবার তৈরি হয় সাংসদ ও বিধায়ক তহবিল থেকেও। পাশাপাশি কোনা এক্সপ্রেসওয়ের ক্যারি রোডের কাছে যাত্রীদের সুবিধার্থে ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা খরচ করে তৈরি করা হয় দোতলা শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যাত্রী প্রতীক্ষালয়-সহ জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা কেন্দ্র ও শৌচালয়। দোতলা যাত্রী প্রতীক্ষালয়ের একতলায় ছিল বসার ব্যবস্থা। উপরে কাফেটেরিয়াতৈরি হয়েও শুরু হয়নি।

কিন্তু অভিযোগ, এত টাকার খরচ করে তৈরি এই আধুনিক মানের যাত্রী প্রতীক্ষালয়টি তৈরির উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। দোতলায় কাফেটেরিয়াও হয়নি। আর চিকিৎসক না পাওয়া যাওয়ায় জরুরি স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্রও চালু হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতীক্ষালয়টি হয়ে উঠেছে সময় কাটানোর জায়গা।

পুরসভার তৈরি হাওড়া শহরের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত প্রথম প্রতীক্ষালয়ে গিয়ে দেখা গেল, নীচে যাত্রীদের জন্য বসার জায়গা নেই। সিলিং-এর সব আলো খোলা। বিদ্যুতের তার ঝুলছে। শীতাতপ যন্ত্র একটিও কাজ করছে না। দোতলার কাফেটেরিয়ার জায়গায় এক যুবক বেঞ্চে বসে ঘুমোচ্ছেন।

হাওড়া পুরসভা সূত্রের খবর, চার জন পুরকর্মী এই প্রতীক্ষালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। তবে রাতে নিরাপত্তার দায়িত্বে কেউ থাকেন না। দরজায় চাবি দেওয়াই থাকে।

এক পুর আধিকারিক বলেন, ‘‘দরপত্রে কেউ সাড়া না দেওয়ায় কাফেটেরিয়া চালু করা যায়নি। কোনও চিকিৎসক আগ্রহ না দেখানোয় জরুরি চিকিৎসাকেন্দ্রটিও খোলা যায়নি।’’ স্থানীয় বাসিন্দা সমর পাত্র বলেন, ‘‘এলাকার কিছু যুবকের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে ওই যাত্রী প্রতীক্ষালয়টি। এর পরে হয়তো ধীরে ধীরে দুষ্কৃতীদের আখড়া হয়ে যাবে প্রতীক্ষালয়টি। যদি এমন অবস্থাই হবে, তবে এত টাকা খরচ করে তৈরির কোনও প্রয়োজন ছিল না।’’

এ প্রসঙ্গে হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘জাতীয় সড়কের পাশে এই ধরনের যাত্রী প্রতীক্ষালয় করা যায় না। কারণ অধিকাংশই স্থানীয় যাত্রী। এমন জায়গায় যেটা প্রয়োজন, সেটা হল বিভিন্ন যাত্রীদের জন্য শৌচাগার তৈরি করা। বিশেষ করে মহিলাযাত্রীদের জন্য তো বটেই।’’

হাওড়া পুরসভার এক কর্তার দায় এড়ানো জবাব। তিনি বলেন, ‘‘যাত্রীদের সুবিধার্থে প্রতীক্ষালয়গুলি করা হয়েছিল। তাঁরা না ব্যবহার করলে পুরসভার তো কিছু করার নেই।’’ পাশাপাশি তিনি মানছেন, ওই প্রতীক্ষালয়গুলি ঠিক মতো জায়গা নির্বাচন করে তৈরি হয়নি। ব্যবহার না হওয়ায় পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Waiting room TMC West Bengal Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE