Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বৃদ্ধা খুনে দুষ্কৃতীরা অধরাই, পুলিশ ধন্দে 

একা থাকা ওই বৃদ্ধাকে খুনের কথা জানতে পারার পর থেকেই আতঙ্কে ভুগছেন ব্যান্ডেল, চুঁচুড়া-সহ হুগলি শহরাঞ্চলের বহু বৃদ্ধবৃদ্ধা, যাঁরা একা থাকেন। দুষ্কৃতী-হামলা হলে কী করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না তাঁরা।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাপস ঘোষ
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৭ ০২:১২
Share: Save:

কেটে গিয়েছে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময়। কিন্তু শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ব্যান্ডেলের কাজিডাঙায় সুলেখা মুখোপাধ্যায় খুনের তদন্তে ধন্দ কাটল না পুলিশের। ধরা পড়েনি কেউ। একা থাকা ওই বৃদ্ধাকে খুনের কথা জানতে পারার পর থেকেই আতঙ্কে ভুগছেন ব্যান্ডেল, চুঁচুড়া-সহ হুগলি শহরাঞ্চলের বহু বৃদ্ধবৃদ্ধা, যাঁরা একা থাকেন। দুষ্কৃতী-হামলা হলে কী করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না তাঁরা।

বৃহস্পতিবার সকালে মুখবাঁধা এবং গলার নলিকাটা অবস্থায় সুলেখাদেবীর মৃতদেহ উদ্ধারের পরে পুলিশ আটক করেছিল তাঁর দুই পরিচারিকাকে। রাতেই পুলিশ তাঁদের ছেড়ে দেয়। তদন্তকারীরা জানান, দুই মহিলার থেকে তেমন কোনও তথ্য মেলেনি। তবে, জানা গিয়েছে, ওই বাড়িতে ইতিহাস চর্চার জন্য বহু মানুষের আনাগোনা ছিল। সুলেখাদেবীর বাবা বাড়িতে ইতিহাস অনুশীলন কেন্দ্র খুলেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পরে মেয়েই কেন্দ্র চালাতেন। কিন্তু সেই সূত্র থেকে খুনের কারণ নিয়ে কোনও স্পষ্ট দিশা মেলেনি।

চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে, দেহ উদ্ধারের সময় ঘটনাস্থলে থেকে একটি ছুরি মিলেছে। সম্ভবত তা দিয়েই খুন করা হয় সুলেখাদেবীকে। এ ছাড়া, একটি মোবাইল ফোনও উদ্ধার করা হয়েছে। তবে, মোবাইলটি বিশেষ ব্যবহার হতো না। শেষ ‘কল’ এসেছিল গত ডিসেম্বরে। তদন্তে দেখা গিয়েছে, ওই বাড়ি থেকে সামান্য গয়না খোয়া গিয়েছে। প্রত্নবস্তুও এমন কিছু নেই, যার জন্য সুলেখাদেবী খুন হতে পারেন।

তা হলে কেন খুন? চন্দননগরে পুলিশ কমিশনার পীযূষ পাণ্ডে বলেন, ‘‘এখনও কোনও স্পষ্ট দিশা মেলেনি। তবে, চেনা কেউ এর পিছনে আছে কিনা, তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

শুক্রবারও ওই খুন নিয়ে জল্পনা ছিল কাজিডাঙায়। চুঁচুড়া, চন্দননগর, শ্রীরামপুরের মতো জনবহুল শহরগুলির অনেক একা থাকা বৃদ্ধবৃদ্ধাও তাজ্জব হয়ে গিয়েছেন ওই ঘটনায়। কেউ স্বামীকে হারিয়েছেন। একমাত্র ছেলে কর্মসূত্রে অন্যত্র থাকায় একাই দিন কাটাতে হয় তাঁকে। কোনও বৃদ্ধ আবার বরাবরই একা। গভীর রাতে সশস্ত্র দুষ্কৃতী-হামলা হলে কী করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না তাঁরা। বেশ কয়েক মাস আগে চুঁচুড়াতেই ভোরবেলা বেরিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক বৃদ্ধা। তাঁর গলার হার ছিনিয়ে নিয়েছিল এক দুষ্কৃতী। ঘটনাটি নিয়ে শোরগোল পড়েছিল। একা থাকা বৃদ্ধবৃদ্ধাদের নিরাপত্তা নিয়ে উঠেছিল প্রশ্ন সে সময়। সেই প্রশ্নই এ বার বড় ভাবে উঠল সুলেখাদেবী খুনের পরে।

ব্যান্ডেলেরই সাহেববাগান এলাকার বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী বাসুদেব মাইতিও একা থাকেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ওই খুনের কথা জানতে পারার পর থেকেই রাতের ঘুম গিয়েছে। রাতের হামলা হলে কী করব? দেখবে কে?’’ এটাই প্রশ্ন আরও অনেকের।

কলকাতা এবং ব্যারাকপুরে অবশ্য একটি ব্যবস্থা রয়েছে। ২০১০ সালে কলকাতা পুলিশ ‘প্রণাম’ নামে একটি পরিষেবা চালু করে। বিভিন্ন এলাকার একা থাকা প্রবীণ মানুষেরা থানায় তাঁদের নাম লেখান। পুলিশ প্রতিদিন সকালে সরাসরি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। আবার তাঁরা কোনও অসুবিধায় পড়লে সরাসরি পুলিশকে ফোন করেন। পুলিশ সাধ্যমতো সেই সমস্যা মেটাতে চেষ্টা করে। পরবর্তী সময়ে ব্যারাকপুর কমিশনারেটও এমন পরিষেবা চালু করে।

চন্দননগর কমিশনারেটে করা যায় না?

ওই জাতীয় পরিষেবা নিয়ে ভাবনাচিন্তার কথা উড়িয়ে দেননি পুলিশ কমিশনার। তিনি বলেন, ‘‘বয়স্কদের জন্য বিশেষ পরিষেবার বিষয়টি আমাদের ভাবনাচিন্তাতেও রয়েছে। তবে এই কমিশনারেট সদ্য চালু হয়েছে। পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা রয়েছে। পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূলে এলেই বিষয়টি নিয়ে ভাবব।’’ ততদিন অপেক্ষা ছাড়া আর কিছুই করার নেই, মনে করছেন একা থাকা বৃদ্ধবৃদ্ধারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Death Miscreants
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE