Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দেবীপক্ষে মায়ের কাছে ফিরল ছেলে

ছেলেটির নাম মনিলাল ওরফে ছোট্টু ওরাং। বয়স বছর সতেরো। বাড়ি ঝাড়খণ্ডের লাতেহার জেলার লেটপা বিন্দি গ্রামে। কয়েক বছর আগে বাবা-মায়ের বকুনি খেয়ে অভিমানে ঘর ছেড়েছিল সে। ট্রেনে চেপে বসেছিল। রাগ পড়লেও বাড়ি ফিরে যেতে পারেনি। ২০১১ সালের অগস্ট মাসে তারকেশ্বরে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।

প্রকাশ পাল
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৫১
Share: Save:

ছ’বছর আগে হারিয়ে যাওয়া ছেলে মহালয়ার সকালে ফিরে গিয়েছে মায়ের কোলে। গত ছ’বছর ধরে তার ঠিকানা ছিল— হুগলির কামারকুণ্ডুর কল্যাণ ভারতী হোম। প্রশাসনের মধ্যস্থতায় ঝাড়খণ্ডে নিজের বাড়িতে ফিরে গিয়েছে সে।

ছেলেটির নাম মনিলাল ওরফে ছোট্টু ওরাং। বয়স বছর সতেরো। বাড়ি ঝাড়খণ্ডের লাতেহার জেলার লেটপা বিন্দি গ্রামে। কয়েক বছর আগে বাবা-মায়ের বকুনি খেয়ে অভিমানে ঘর ছেড়েছিল সে। ট্রেনে চেপে বসেছিল। রাগ পড়লেও বাড়ি ফিরে যেতে পারেনি। ২০১১ সালের অগস্ট মাসে তারকেশ্বরে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। চন্দননগর মহকুমা প্রশাসনের মধ্যস্থতায় ঠাঁই হয় কামারকুণ্ডুর হোমে।

হোম সূত্রের খবর, প্রথম দিকে কিছুই বলতে চাইত না ছেলেটি। গুমরে থাকত। দীর্ঘ কাউন্সেলিংয়ের পরে ধীরে ধীরে ধাতস্থ হয় সে। ছেলেবেলার ধূসর হয়ে যাওয়া স্মৃতি ফিরতে থাকে। হোমের সুপারিন্টেন্ডেন্ট উমেশচন্দ্র ঘোষাল চেষ্টা করে একটু একটু করে তার বাড়ির ঠিকানা জানতে পারেন। কয়েক মাস আগে হোম কর্তৃপক্ষের কাছে খবর পেয়ে হুগলি জেলা চাইল্ড লাইন আসরে ন‌ামে। লাতেহারে চাইল্ড লাইন নেই। হুগ‌লি সিডব্লিউসি-র নির্দেশে তারা পালামৌ চাইল্ড লাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। বেশ কয়েক দিন খোঁজাখুঁজির পরে সম্প্রতি পালামৌ চাইল্ড লাইনের আধিকারিকেরা ছোট্টুর বাড়ি খুঁজে বের করেন।

সেখান থেকে পাঠানো বাবা-মায়ের ছবি দেখে ছোট্টু চিনতে পারে। সিডব্লিউসি-র প্রয়োজনীয় নির্দেশ পেয়ে মঙ্গলবার, মহালয়ার সকালে হুগলি জেলা চাইল্ড লাইনের আধিকারিক মনোজ কুমার দাস ছেলেটিকে নিয়ে ঝাড়খণ্ড যান। স্থানীয় সিডব্লিউসি-র মাধ্যমে ছোট্টুকে বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিয়ে আসেন। বাবা সঞ্চানন্দ ওরাং এবং মা জগমনিয়া দেবীকে দেখেই জড়িয়ে ধরে সে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে ছোট্টুই বড়।

উমেশবাবু বলেন, ‘‘ছোট্টুর মাতৃভাষা হিন্দী। কিন্তু এখানে ও ঝড়ঝড়ে বাংলা রপ্ত করে ফেলেছে। হিন্দি প্রায় ভুলেই গিয়েছে। বাবা-মা আবার হিন্দি ছাড়া বোঝেন না। ফলে কথোপকথন চালাতে বেজায় সমস্যা হয়েছে। তবে নাড়ির যোগ তো! সব বাধা কেটে গিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE