খন্দপথ: হাওড়ার বেহাল রাস্তা। ফাইল চিত্র
রাজ্য সরকারের থেকে প্রাপ্য অর্থ মেলেনি। অথচ ঠিকাদারদের বকেয়া প্রায় ৩৩ কোটি টাকা। যার ফলে পুজোর আগে হাওড়া পুরসভা এলাকার রাস্তা মেরামতির কাজ কতটা হবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। যদিও হাওড়া পুরসভা ও পুলিশের করা সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, চলতি বর্ষার মরসুমে পুরসভা এলাকার ৭০ শতাংশ রাস্তার বেহাল অবস্থা। সব রাস্তা পুজোর আগে সারাতে গেলে অন্তত ১০ কোটি টাকা প্রয়োজন। কিন্তু পুরসভার ভাঁড়ার প্রায় শূন্য। সে ক্ষেত্রে এত টাকা দিয়ে রাস্তা মেরামত করার ব্যাপারে সমস্যায় পড়েছেন পুরকর্তারা। হাওড়া পুরসভার মেয়র রথীন চক্রবর্তীর অবশ্য দাবি, ‘‘পুজোর আগে রাস্তা মেরামতির কাজ শুরু হবে। তবে সব রাস্তা সম্পূর্ণ ভাবে সারানো যাবে না। প্যাচ ওয়ার্ক করা হবে। টাকার কোনও সমস্যা হবে না।’’
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালের শেষ দিকে বামফ্রন্ট পুরবোর্ডকে হারিয়ে হাওড়া পুরসভায় ক্ষমতায় আসে তৃণমূল বোর্ড। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে হাওড়ার উন্নয়নের জন্য নতুন বোর্ডকে ১০০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। প্রথম দিকে ২০ কোটি টাকা দেওয়ার পরে সেই টাকায় হাওড়ায় উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। ত্রিফলা থেকে হাইমাস্ট, ঢালাই রাস্তা থেকে ম্যাস্টিক অ্যাসফল্ট-কিছুই বাদ যায়নি হাওড়া শহরে। শহরের সৌন্দর্যায়নের সঙ্গে বাড়তে থাকে কোটি কোটি টাকা বাজেটের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ।
প্রথম দু’বছর নানা কর্মযজ্ঞ চলার পর ২০১৬ সালের শেষ দিক থেকে শহরে কাজের গতি যেন ঢিলে হয়ে আসতে শুরু করে। পুরকর্তাদের অভিযোগ, নবান্ন থেকে প্রথম দিকে অর্থ বরাদ্দ হওয়ার পর আর কোনও টাকা না আসায় পুরসভা সমস্যায় পড়েছে। ফলে পুরসভার খরচের বহর আগের থেকে চার-পাঁচ গুণ বেড়ে গিয়েছে। সেই অর্থ যোগাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে প্রতি মাসে। এরই মধ্যে রয়েছে, পুরসভার ঠিকাদারদের পাওনা টাকা না দিতে পারার জের। কোনও ঠিকাদারই বকেয়া টাকা না পেলে পুরসভার কোনও কাজ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
পুরসভা সূত্রের খবর, এই সব কারণেই গত এক বছরের মধ্যে বহু রাস্তা ভেঙেচুরে গেলেও তা সারানোর ব্যাপারে পুরসভা উদ্যোগী হতে পারেনি। গত বছরেও যে রাস্তা বর্ষার পরে পুরোপুরি মেরামত
করা হয়েছিল সেই রাস্তাগুলির বিভিন্ন অংশে পিচের আচ্ছাদন উঠে গিয়ে রাস্তার খোয়া বেরিয়ে পড়েছে। যেমন বেলিলিয়াস রোড, বেলিলিয়াস লেন, পঞ্চাননতলা, নেতাজি সুভাষ রোড, ইস্ট-ওয়েস্ট বাইপাস-সহ একাধিক রাস্তার বর্তমানে এমন হাল হয়েছে যে সেই সব রাস্তায় দুর্ঘটনা এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। একই অবস্থা লিলুয়া, বেলুড়-সহ দাশনগর, ড্রেনেজ ক্যানেল রোডের মতো নানা গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার। সেখানে শুধু যানবাহন চলাচল নয়, হাঁটাচলা পর্যন্ত দায় হয়ে উঠেছে।
রাস্তাঘাটের এই করুণ অবস্থার রিপোর্ট পাওয়ার পরে মেয়রের উদ্যোগে পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারদের পাশাপাশি হাওড়া সিটি পুলিশকে দিয়েও সমীক্ষা করানো হয়। সম্প্রতি সেই দু’টি রিপোর্ট থেকে জানা যায়, পুরসভার ৭০ শতাংশ রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ। এই রাস্তাগুলি অবিলম্বে না সারালে সাধারণ মানুষ সমস্যায় পড়বেন। কিন্তু রাস্তা সারাতে এত টাকা আসবে কী করে?
পুরসভার এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘পুরসভার নিজস্ব আয় বলতে বিল্ডিং বিভাগ থেকে আয়, বর্ধিত সম্পত্তি কর আদায় ও লাইসেন্স দফতর থেকে আয়। রাজ্য সরকার টাকা না দিলে ওই টাকা থেকেই পুজোর আগে রাস্তা জোড়াতালি দেওয়ার কাজ হবে। এ ছাড়া উপায় নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy