Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
পুজোর আগে মাথায় হাত চাষিদের

ফুলের খেতে হনুমানের হানা

বন দফতরের উলুবেড়িয়া রেঞ্জ অফিসার উৎপল সরকার বলেন, ‘‘একটি হনুমান হলে সেটিকে ধরে বনে ছেড়ে দেওয়া যেত। কিন্তু চাষিদের কাছ থেকে শুনেছি, দলে অনেক হনুমান। অত হনুমান ধরার পরিকাঠামো আমাদের নেই। সরেজমিন পরিদর্শনের পরে বিষয়টি ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’’

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নুরুল আবসার
বাগনান শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৮ ০২:০৯
Share: Save:

ওদের কারও পছন্দ সদ্য ফোটা গোলাপ-কুঁড়ি, কারও লাল জবা! কেউ আবার গাঁদা চিবিয়ে তৃপ্ত! কী ভাবে বাঁচবে ফুলগাছ?

দলে দলে আসা হনুমানের তাণ্ডবে মাথায় হাত পড়েছে বাগনান-২ ব্লকের ফুলচাষিদের। সামনে পুজো। কী ভাবে কোলাঘাট ফুলবাজার বা কলকাতার জগন্নাথঘাট ফুল বাজারে তাঁরা ফুলের জোগান দেবেন? চাষিরা বন দফতরের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। কিন্তু বন দফতরও কার্যত হাত তুলে দিয়েছে।

বন দফতরের উলুবেড়িয়া রেঞ্জ অফিসার উৎপল সরকার বলেন, ‘‘একটি হনুমান হলে সেটিকে ধরে বনে ছেড়ে দেওয়া যেত। কিন্তু চাষিদের কাছ থেকে শুনেছি, দলে অনেক হনুমান। অত হনুমান ধরার পরিকাঠামো আমাদের নেই। সরেজমিন পরিদর্শনের পরে বিষয়টি ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’’

বাগনান-২ ব্লকের বাঁকুড়দহ, হেলেদ্বীপ, চাঁদগেড়িয়া, ভুড়গেড়িয়া, কাঁটাপুকুর প্রভৃতি গ্রামের কয়েক হাজার চাষির প্রধান জীবিকা ফুল চাষ। জবা, গোলাপ, গাঁদা-সহ হরেক রকম ফুলের চাষ হয় এখানে। পুজোর সময়ে জবা এবং গোলাপের চাহিদা বাড়ে। জবা ইতিমধ্যে বিক্রিযোগ্য হয়ে গিয়েছে। গোলাপের কুঁড়িও আর কয়েকদিনের মধ্যে বাজারজাত হওয়ার কথা। পুজোর সময়ে ফুল বিক্রি করে কিছুটা বাড়তি রোজগারের আশা করেন চাষিরা। কিন্তু এ বার তাঁদের বাড়া ভাতে ছাই ফেলেছেন হনুমানের দল!

চাষিরা জানান, আগেও হনুমান আসত। কিন্তু গত পনেরো দিন ধরে হনুমানের হামলা কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। শাবক-সহ অন্তত ২৫টি করে হনুমানের এক-একটি দল এসে তছনছ করে দিচ্ছে ফুলের বাগান। জবা ফুল ছিঁড়ে খাচ্ছে। সদ্য ফুটতে থাকা গোলাপের নরম কুঁড়ি আবার হনুমানদের বেশ প্রিয়। সদ্য ফুটতে থাকা এইসব গোলাপের কুঁড়ির স্বাদ মিষ্টি। ফলে, হনুমানের দল একটি কুঁড়িও বাদ রাখছে না। এমনকি, তারা গোলাপ গাছের শাখাও ছিঁড়ে দিচ্ছে। ফলে, শাখা থেকে নতুন গাছ তৈরির সম্ভাবনাও নষ্ট হচ্ছে।

চাষিদের আক্ষেপ, চকোলেট বোমার শব্দ, গুল‌তি— কোনও কিছু ব্যবহার করেই হনুমানের দলকে হটানো যাচ্ছে না। সাময়িক ভাবে পিছু হঠলেও ফের তারা প্রবল বিক্রমে ফিরে আসছে। কেউ কেউ জাল দিয়ে জমি ঘিরে দিয়েছিলেন। তাতে কাজ হয়নি। জাল ছিঁড়ে হনুমানের দল জমিতে ঢুকে পড়ছে।

বন দফতরের বক্তব্য, এইসব এলাকায় একসময়ে আনাজ চাষ হত। বহু গাছপালাও ছিল। হনুমানেরা সেই সব আনাজ, গাছের পাতা খেয়ে বেঁচে থাকত। কিন্তু দিনের পর দিন গাছ কেটে সাফ করে ফেলা হয়েছে, আনাজের বদলে বেড়েছে ফুলের চাষ। খাদ্যের খোঁজে তাই ফুলের বাগানেই হানা দিচ্ছে হনুমানেরা।

চাষিরা জানান, আনাজ চাষের তূলনায় ফুল চাষে লাভ অনেক বেশি হয়। তবে, ফুল চাষে পরিশ্রমও বেশি। কিন্তু হনুমানের হামলায় অর্থনৈতিক ক্ষতিও হচ্ছে। পুলক ধাড়া, অমরেশ বেরা, কার্তিকচন্দ্র খাঁড়ার মতো কয়েকজ চাষি বলেন, ‘‘কী যে করব বুঝতে পারছি না। আমরা দিশাহারা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Flower Field Monkey Attack Farmer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE