মূর্চ্ছনা: নীরদতরঙ্গে সুর তুললেন শিল্পীরা। নিজস্ব চিত্র
বাড়ির মেঝেতে টাইলস বসানো চলছিল। মিস্ত্রির হাত থেকে একটা টাইলস পড়ার শব্দ শুনেছিলেন সোমনাথ। কানে গেঁথে গিয়েছিল সেই ‘সুরেলা’ আওয়াজ।
তার পরে সোমনাথ এবং তাঁর দাদা নারায়ণ ফ্লোর-টাইলস কেটেই কাঠতরঙ্গ আর বাঁশতরঙ্গের ধাঁচে বানিয়ে ফেলেছেন নতুন এক যন্ত্র।। সম্প্রতি ঘরোয়া এক অনুষ্ঠানে উদ্বোধন হল সেই যন্ত্রের।
হুগলির শ্রীরামপুরের বাসিন্দা নারায়ণ আর সোমনাথ নীরদবরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুত্র। যে নীরদবরণ ছিলেন কাঠতরঙ্গ আর বাঁশতরঙ্গের স্রষ্টা। নতুন যন্ত্র তৈরি করে যেন গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজো সেরে ফেললেন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের বর্তমান সদস্যেরা। যন্ত্রের নাম দেওয়া হল— ‘নীরদতরঙ্গ’।
পরিবারের লোকেরা জানান, নীরদবরণ ঢাকার বিক্রমপুরে জন্মেছিলেন। তবে তাঁর জীবন কেটেছিল কলকাতার বেলেঘাটায়। প্রথমে তিনি সানাই এবং বাঁশি বাজাতেন। ইউরোপিয়ান জাইলোফোন তাঁকে আকৃষ্ট করেছিল। সেই অনুকরণে তিনি তৈরি করেছিলেন ‘কাষ্ঠতরঙ্গ’। এ যেন ‘স্বদেশি জাইলোফোন’। একটা ফাঁকা বাক্সের উপরে কাঠের কয়েকটি দণ্ড সাজিয়েই তৈরি হয়েছে যন্ত্র। সেটা চল্লিশের দশক। ১৯৭৪ সালে তিনি তৈরি করেন বাঁশতরঙ্গ। এই যন্ত্রের উপাদান বাঁশের চটা। এই দুই যন্ত্রই সঙ্গীতজগতে সাড়া ফেলে দিয়েছিল।
নারায়ণ জানান, এর মাঝেই পঞ্চাশের দশকে পারস্যে গিয়ে টালি কেটে তৈরি করেছিলেন ‘টালিতরঙ্গ’। বহন করতে না পেরে যন্ত্রটি সেখানেই রেখে এসেছিলেন। এর কয়েক বছর পরে তিনি চমকে দিয়েছিলেন ‘কলসিতরঙ্গ’ বানিয়ে। বিদেশী অতিথিদের ভারতীয় সঙ্গীতের জাদু দেখাতে কুমোরপাড়া থেকে মাটির কলসি কিনে এসেছিলেন নীরদবরণ। তা দিয়েই সুরের অনবদ্য ভেলা ভাসিয়েছিলেন। গুণমুগ্ধরা জানান, সবের মধ্যেই শিল্প খুঁজতেন তিনি।
নীরদবরণের দুই ছেলে এবং দুই নাতি নিশান ও সপ্তর্ষী পুর্বপুরুষের বাজনা নিয়ে চর্চা করে চলেছেন। সোমনাথও জলতরঙ্গ বাজান। রবিবার শ্রীরামপুরের রাজ্যধরপুর নেতাজি হাইস্কুলে (বয়েজ) নীরদবরণ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত সন্ধ্যার আয়োজন করেছিল নীরদবরণ সঙ্গীতচক্র। সঙ্গীতগুরু সিদ্ধার্থ রায়চৌধুরী, বাঁশিবাদক পণ্ডিত মৃত্যুঞ্জয় মুখোপাধ্যায় এবং তবলিয়া পণ্ডিত স্বপন শিব নারায়ণ, সোমনাথের তৈরি নীরদতরঙ্গের উদ্বোধন করেন। শিল্পীরা ওই যন্ত্রের প্রশংসা করেন। এর পরে সেটি বাজিয়ে শোনান কলেজ পড়ুয়া নিশান। এ ভাবে তিন প্রজন্ম যেন মিলেমিশে গেল সুরসৃষ্টির কারিকুরিতে!
অনুষ্ঠানে তবলা-লহরা শোনান তথাগত পাল। বাঁশতরঙ্গ বাজায় পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া সপ্তর্ষী। তার সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন পামেলা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুই ভাইবোন বন্ধন আদকের সরোদ এবং প্রগতি আদকের সেতারের যুগলবন্দি তারিফ কুড়িয়ে নেয় শ্রোতাদের। বাঁশি শোনান পণ্ডিত মৃত্যুঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। তবলায় সঙ্গত করেন রিম্পা শিব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy