Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
জমির একাংশ শিল্প সংস্থাকে বিক্রিতে ক্ষোভ

চন্দননগরে নয়া ভাগাড় বড়গর্জিতে

দিন দিন জনসংখ্যা বাড়ছে চন্দননগরে। বাড়ছে বর্জ্যও। তাই শহরে দ্বিতীয় একটি ভাগাড় তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে পুরসভা। এ জন্য জমিও নির্দিষ্ট হয়েছে। কিন্তু সেই জমির একাংশ একটি শিল্প সংস্থাকে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা নিকাশি ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন।

বিতর্ক: কাউন্সিলরের নির্দেশের আগে চলছিল গাছ কাটা। নিজস্ব চিত্র

বিতর্ক: কাউন্সিলরের নির্দেশের আগে চলছিল গাছ কাটা। নিজস্ব চিত্র

তাপস ঘোষ
চন্দননগর শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৮ ০১:১৯
Share: Save:

দিন দিন জনসংখ্যা বাড়ছে চন্দননগরে। বাড়ছে বর্জ্যও। তাই শহরে দ্বিতীয় একটি ভাগাড় তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে পুরসভা। এ জন্য জমিও নির্দিষ্ট হয়েছে। কিন্তু সেই জমির একাংশ একটি শিল্প সংস্থাকে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা নিকাশি ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন।

কলকাতায় ভাগাড়-কাণ্ড সামনে আসার পরে রাজ্য জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। চন্দননগরে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রেস্তরাঁ, মাংসের দোকানে হানা দিয়েছে পুরসভা। শহরে দ্বিতীয় ভাগাড় তৈরির পরিকল্পনা অবশ্য পুরসভার পুরনো। দিল্লি রোডের কাছে ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের বড় গর্জি জয়পাড়া এলাকায় পুরসভার ১৫ বিঘারও বেশি জমি রয়েছে। সেই জমিতেই ভাগাড় গড়া হবে বলে পুরসভা জানিয়েছে। বর্তমান ভাগাড়টি রয়েছে কলুপুকুর এলাকায়। কিন্তু বর্জ্যের পরিমাণ বাড়তে থাকায় সেখানে স্থান সঙ্কুলান হচ্ছে না।

পুরসভা সূত্রের খবর, মূলত মরা জীবজন্তু নতুন ভাগাড়ে পুঁতে দেওয়া হবে। ফেলা হবে পচনশীল বর্জ্য। পরিবেশ যাতে দূষিত না-হয়, সে ভাবেই ভাগাড়টি গড়া হবে। মেয়র রাম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দ্বিতীয় ভাগাড় গড়তে বছরখানেক সময় লাগবে।’’

ওই ভাগাড়ের জমির পাশেই প্রায় আট বিঘা জমি কিনে সুতো কারখানা গড়তে চলেছে একটি শিল্প সংস্থা। তারা ইতিমধ্যে নিজেদের জমি পাঁচিলে ঘেরায় বর্ষায় নিকাশি বেহাল হওয়ার আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসীদের একাংশ। ওই জমির আশপাশে বেশ কিছু চাষজমি রয়েছে। রয়েছে নিকাশি খালও। গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, ওই পাঁচিলের জন্য গর্জি, বলরামপুর, বাগডাঙা, চৌধুরীপাড়া-সহ অন্তত ১৫টি এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল হয়ে পড়বে। এ নিয়ে ইতিমধ্যে তাঁরা পুরসভায় দরবার করেছেন। চন্দননগরের ‘আইনি সহায়তা কেন্দ্র’-এরও দ্বারস্থ হয়েছেন। তা ছাড়া, প্রস্তাবিত কারখানায় যাওয়ার রাস্তা তৈরির জন্য ভাগাড়ের জমির একাংশ শিল্প সংস্থা কেনায় স্থানীয়দের কেউ কেউ এর মধ্যে ‘অশুভ আঁতাঁত’ও দেখছেন।

এই পাঁচিল ঘিরেই আপত্তি স্থানীয় বাসিন্দাদের। নিজস্ব চিত্র

জয়পাড়ার বাসিন্দা বিমল রায় বলেন, ‘‘ওই কারখানার জন্য নিকাশির সমস্যা হতে পারে ভেবে আমরা পুরসভাকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু পুরসভা কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’’ ‘আইনি সহায়তা কেন্দ্র’-এর কর্ণধার, পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বেকারত্ব দূরীকরণের জন্য শিল্প জরুরি। কিন্তু পরিবেশ যাতে নষ্ট না-হয়, দেখতে হবে।’’

গ্রামবাসীদের আশঙ্কা এবং অভিযোগ মানতে চাননি স্থানীয় কাউন্সিলর পার্থ চক্রবর্তী। তাঁর দাবি, ‘‘আমরা কোনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। ঘেরা জমিতে গাছ কাটা হচ্ছিল, খবর পেয়ে তা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। তবে, পুর আইন মেনেই শিল্প হচ্ছে। শিল্প সংস্থার জন্য তৈরি রাস্তাটি কিছুটা ভাগাড়ের জমির মধ্যে পড়ে যাওয়ায় কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ প্রতিবাদ শুরু করেছেন।’’ মেয়র জানিয়েছেন, শিল্প সংস্থার কোনও ত্রুটি দেখা দিলে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নিকাশি খালটির সংস্কার করা হবে। নিকাশি নিয়ে গ্রামবাসীদের আশ্বস্তও করেছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dumping Yard Chandannagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE