Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
গঙ্গায় ঝুঁকির নিত্যযাত্রা চলছেই

ধুলোর আস্তরণ লাইফ জ্যাকেটে

কখনও জেটি ভেঙে, কখনও নৌকাডুবিতে প্রাণ গিয়েছে সাধারণ যাত্রীর। চালু হয়েছে নতুন নিয়ম। জারি হয়েছে নানান নির্দেশ। যাত্রীদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে লাইফ জ্যাকেটের ব্যবহার। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। হুঁশ ফেরেনি প্রশাসনের। সতর্কতা তৈরি হয়নি যাত্রীদেরও।

অসচেতন: লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই পারাপার। শুক্রবার চন্দননগর ফেরিঘাটে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

অসচেতন: লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই পারাপার। শুক্রবার চন্দননগর ফেরিঘাটে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

সুপ্রকাশ মণ্ডল
শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৮ ০২:০৫
Share: Save:

কখনও জেটি ভেঙে, কখনও নৌকাডুবিতে প্রাণ গিয়েছে সাধারণ যাত্রীর। চালু হয়েছে নতুন নিয়ম। জারি হয়েছে নানান নির্দেশ। যাত্রীদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে লাইফ জ্যাকেটের ব্যবহার। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। হুঁশ ফেরেনি প্রশাসনের। সতর্কতা তৈরি হয়নি যাত্রীদেরও। শুক্রবার অসতর্কতার ছবি ফের দেখা গেল।

একের পর এক ভুটভুটি আসছে, ঘাটে ভিড়ছে। আবার ছেড়ে যাচ্ছে ও পারে। জেটিঘাটের পাশে ডাঁই করে রাখা কমলা রঙের জ্যাকেটগুলোতে ধুলোর পুরু আস্তরণ। দু’দিন আগে ভুটভুটি থেকে নামতে গিয়ে ভদ্রেশ্বরে এক যাত্রী গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছেন। তার পরেও যাত্রীদের গায়ে ওঠেনি লাইফ জ্যাকেট।

হুগলি নদীর একদিকে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল অন্যদিকে হুগলি শিল্পাঞ্চল। একদিকে নৈহাটি থেকে খড়দহ, অন্যদিকে চন্দননগর থেকে শেওড়াফুলি একের পর এক ঘাট থেকে ভুটভুটিতে করে চলছে যাত্রী পারাপার। শুক্রবার সকালের ছবি বলছে, ঘাট কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট যেমন দেননি, তেমনই যাত্রীদের কেউও নিজে থেকে লাইফ জ্যাকেট চেয়ে নেননি। সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা দেখে ঘাট কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের হাতে লাইফ জ্যাকেট গুঁজে দিলেও, তা গায়ে তোলেননি যাত্রীরা।

ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (‌জোন ১) কে কান্নন বলেন, ঘাটগুলিতে নজরদারি বাড়ানো হবে। যাতে যাত্রীরা লাইফ জ্যাকেট পরেন তার জন্য সচেতনতা প্রচার চালানো হবে।গত বছর এপ্রিলে ভদ্রেশ্বরের তেলেনিপাড়ায় বাঁশের অস্থায়ী জেটি ভেঙে গঙ্গায় ডুবে মৃত্যু হয় ১৪ জনের। তার পর দিন নৌকোডুবির ঘটনা ঘটে ইছাপুরে। তারও আগে নদিয়ার শান্তিপুর-কালনাঘাটের মাঝে সেই গঙ্গাতেই নৌকো ডুবে মৃত্যু হয় ২২ জনের। তেলেনিপাড়ার দুর্ঘটনার পরে নির্দেশ জারি করা হয়, নৌকোর সব যাত্রীকে লাইফ জ্যাকেট পরতে হবে। সব ঘাটেই পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট রাখতে হবে। লাইফ জ্যাকেট কেনার দায়িত্ব দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট পুরসভাকে।

নির্দেশ মতো ব্যারাকপুরের প্রায় সব ঘাটেই লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা হয়েছে। হুগলির ঘাটগুলিতেও রাখা পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট। কিন্তু যাত্রীদের কেউই তা পরছেন না। ঘাটের ইজারাদাররা বলছেন, ‘‘আমরা নিয়মিত লাইফ জ্যাকেট যাত্রীদের দিতাম। কিন্তু, যাত্রীরা তা নিতে ইচ্ছুক নন।’’ শুক্রবার সকালে জগদ্দল ফেরি ঘাটে গিয়ে দেখা গেল একের পর এক ভুটভুটি করে যাত্রীরা আসছেন-যাচ্ছেন। কিন্তু লাইফ জ্যাকেট পরা কোনও যাত্রী নজরে পড়ল না। ঘাটের কর্মীরা বলছেন, ‘‘যাত্রীরা কেউ লাইফ জ্যাকেট পরতে চান না। তাই ওভাবে রাখা রয়েছে।’’ যাত্রীরা পরুন না পরুন, তাঁদের হাতে লাইফ জ্যাকেট তুলে দেওয়ার দায়িত্ব তো ঘাটের কর্মীদেরই? কোনও উত্তর মিলল না।

ওপারে চন্দননগরের রানিঘাট। সেখানে যাওয়ার জন্য যখন ভুটভুটিতে চড়া হল, তখন এপারের ঘাটের কর্মীরা কাদের যেন মোবাইলে লাইফ জ্যাকেট দেওয়ার কথা বলতে শুরু করলেন। ওপারে নামতেই অবাক দৃশ্য! ঘাটের কর্মীরা প্রত্যেক যাত্রীর হাতে লাইফ জ্যাকেট তুলে দিচ্ছেন। কিন্তু ওই পর্যন্তই। ভুটভুটি ওপারের উদ্দেশে রওনা হল। লাইফ জ্যাকেট রইল যাত্রীদের হাতেই। কেন পরছেন না লাইফ জ্যাকেট? হেসে ফেললেন মাঝবয়সি এক মহিলা যাত্রী। বললেন, ‘‘এইটুকু তো পথ। তা ছাড়া এগুলো খুব নোংরা।’’ যদি দুর্ঘটনা ঘটে? লাইফ জ্যাকেট হাতে ধরা যাত্রীদের হাসি ছাড়া আর কোনও জবাব মিলল না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ferry Boat Life Jackets
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE