Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

হুগলির বহু ব্লকে সরকারি প্রকল্পের কাজে গতি নেই

পোলবা পঞ্চায়েতের চড়ুইডাঙা মূলত আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম। সেখানকার বাসিন্দা জয়ন্ত মুর্মু বলেন, ‘‘এখান থেকে পোলবা ব্লক অফিসের দূরত্ব সাত কিলোমিটার। ২০০০ সালে বন্যায় রাস্তাটা ভেঙে গিয়েছিল। আজ পর্যন্ত সারানো হয়নি।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৫৩
Share: Save:

প্রথমে লোকসভা নির্বাচন, তারপরে নানা বিষয়ে তৃণমূল-বিজেপি চাপানউতোর এবং সংঘর্ষের জেরে প্রায় ছ’মাস ধরে হুগলির বেশ কিছু ব্লকে সরকারি প্রকল্পগুলির কাজ কার্যত বন্ধ। গ্রামীণ মজুরেরা ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ পাচ্ছেন না। বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা পাচ্ছেন না বহু মানুষ। নতুন ‘জব কার্ড’-এর জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন যুবকেরা। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার কাজও বহু ক্ষেত্রে বন্ধ। ফলে, গ্রামের গরিব মানুষেরা বিপাকে পড়েছেন।

পোলবা পঞ্চায়েতের চড়ুইডাঙা মূলত আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম। সেখানকার বাসিন্দা জয়ন্ত মুর্মু বলেন, ‘‘এখান থেকে পোলবা ব্লক অফিসের দূরত্ব সাত কিলোমিটার। ২০০০ সালে বন্যায় রাস্তাটা ভেঙে গিয়েছিল। আজ পর্যন্ত সারানো হয়নি। পানীয় জলের পাইপ গ্রামে কিছুটা এসেই শেষ হয়ে গিয়েছে। আমাদের ৬০-৬৫টি পরিবারের ভরসা একটি মাত্র নলকূপ। সেটা খারাপ হলেই বিপদ।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বিধবা ও বার্ধক্য ভাতার জন্য মোট ৯১৮ জনের নাম লিখিয়েছি। পাইনি। নতুন জব কার্ডের জন্য ৫০ জনের নাম লিখিয়েছি। তা-ও মেলেনি।’’

একই পরিস্থিতি পান্ডুয়ার বৈঁচির হালদারদিঘি গ্রামের। সেখানকার বাসিন্দা রবি সোরেন বলেন, ‘‘এখানে ১০০ দিনের কাজ বেশ কয়েক মাস হল বন্ধ। পানীয় জলটুকুও আমরা পাই না। গ্রামে একটা নলকূপ ছিল, সেটা প্রায় এক বছর ধরে ভেঙে পড়ে রয়েছে। এক কিলোমিটার দূর থেকে পানীয় জল আনতে হয় আমাদের। কালোমণি হাঁসদা এবং লক্ষ্মী কিসকু নামে দুই বিধবা পঞ্চায়েতে আবেদন করেছেন ভাতার জন্য। কিন্তু পাচ্ছেন না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমাদের গ্রাম থেকে ২২ নম্বর রেলগেট পেরিয়ে জিটি রোড বিশেষ দূরে নয়। কিন্তু রাস্তার বেহাল দশা। পঞ্চায়েতে সবই জানিয়েছি। সুরাহা হয়নি।’’

রাজ্য সরকার বিভিন্ন সময়ে আদিবাসী শিল্পীদের ভাতা দেওয়ার কথা ফলাও করে প্রচার করে। কিন্তু বলাগড় ব্লকে আদিবাসী শিল্পীদের পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। সেখানকার বাসিন্দা কমলাকান্ত কিসকু বলেন, ‘‘আমরা দীর্ঘদিন ধরেই শিল্পীদের তালিকায় নাম তোলার জন্য আবেদন করে আসছি। আবেদন অনুমোদন হলে গরিব আদিবাসী শিল্পীরা সরকারি ভাতা পান। কিন্তু নাম অনুমোদন করা হচ্ছে না।’’ বিডিও সৌমিক সরকার বলেন, ‘‘এই বিষয়টি দেখে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর। আমাদের কাছে যে সব আবেদন জমা পড়ে, সেই তালিকা আমরা সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠিয়ে দিই। কিন্তু এখন পুরোটাই তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের অনুমোদনের অপেক্ষায়।’’

শুধু নতুন শিল্পীদের নামের অনুমোদন ঝুলে রয়েছে তাই নয়, ধনেখালি ব্লকে আটকে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার কাজও। শুধুমাত্র শিবাইচণ্ডী গ্রামেই ১০০ থেকে ১১৫ জন আবেদন করেছেন ওই প্রকল্পে নতুন ঘরের জন্য। কিন্তু এ পর্যন্ত সেই আবেদনে সাড়া দেয়নি পঞ্চায়েত। ভুক্তভোগী এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামে না হলেও পাশে মাইতি পাড়ায় গ্রামের বাসিন্দাদের কিন্তু ওই প্রকল্পে বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে।’’

সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের তরফে ইতিমধ্যেই এই সমস্ত দাবিদাওয়া নিয়ে পোলবা, পান্ডুয়া এবং বলাগড়ের বিডিও-র কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। লিবারেশনের রাজ্য কমিটির সদস্য সজল অধিকারী বলেন, ‘‘প্রথমত লোকসভা ভোটের সময় নির্বাচন বিধি চালু থাকায় পঞ্চায়েতে কোনও কাজ হয়নি। তারপর তৃণমূল এবং বিজেপির সংঘর্ষে বেহাল দশা পঞ্চায়েতগুলোর। গ্রামীণ মানুষ ১০০ দিনের কাজের অপেক্ষা থাকেন। কিন্তু তাঁরা কাজ পাচ্ছেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 TMC BJP Nabanna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE