Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

সমস্যা নেই মহিষরেখার, দাবি কর্তৃপক্ষের

ডানকুনি থেকে খড়্গপুর পর্যন্ত মুম্বই রোডকে চার লেনে সম্প্রসারণের সময়ে বেশ কিছু পুরনো সেতুকেই পরীক্ষা করে যান চলাচলের উপযোগী হিসাবে রেখে দেওয়া হয়

মহিষরেখা সেতু। নিজস্ব চিত্র

মহিষরেখা সেতু। নিজস্ব চিত্র

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:১২
Share: Save:

রাস্তা নতুন। সেতু পুরনো। তার উপর দিয়েই প্রতিদিন চলাচল করছে হাজার হাজার গাড়ি।
উলুবেড়িয়ার মহিষরেখায় দামোদরের উপরে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে সেতুটি তৈরি হয়েছিল প্রায় ৫০ বছর আগে। রাস্তা চওড়া হয়েছে, বেড়েছে গাড়ি। সামঞ্জস্য রেখে তৈরি হয়েছে বিকল্প দু’টি সেতুও। কিন্তু চাপ কমেনি পুরনো সেতুর।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে সেটি। নজর নেই প্রশাসনের। যদিও সেতুর দায়িত্বপ্রাপ্ত জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, মহিষরেখা সেতুর ভাল আছে। বছর পঞ্চাশ আগে মুম্বই রোড ছিল দুই লেনের। ২০০৬ সালে তা চার লেন হয়েছে, ২০১২ সালে শুরু হয়েছে ছয় লেনে সম্প্রসারণের কাজ। তাও প্রায় শেষ পর্যায়ে। সেই সম্প্রসারণের অঙ্গ হিসাবেই দামোদরে পুরনো সেতুর পাশে তৈরি হয়েছে দু’টি নতুন সেতু।
সেতুটি তৈরি হয়েছিল কংক্রিট গার্ডারে— স্তম্ভের সঙ্গে গার্ডার জুড়ে। নদের দু’পাড়ে যেখান থেকে সেতু শুরু হচ্ছে সেখানে নীচের অংশে দু’টি গার্ডারের মধ্যবর্তী অংশে বেশ খানিকটা ফাঁক ধরা প়ড়ে খালি চোখেই। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, প্রতিদিন এই ফাঁকটা বাড়ছে।
পুরোন সেতুর উপর দিয়ে যখন গাড়ি যায় তখন তা এতটাই কাঁপে যে চালকেরাও টের পান। এই সেতুর দিয়ে কোলাঘাটমুখী গাড়ি চলাচল করে। ‘ইন্টার অ্যান্ড ইন্ট্রা রিজিওন বাস অ্যাসোসিয়েশন’-এর রাজ্য কমিটির সদস্য প্রভাত পান বলেন, ‘‘সেতুতে আমাদের বাসের গতি কম করেও দিতে হয়।’’ তাঁর দাবি, বয়স বেড়েছে বলেই এত কাঁপে সেতুটি। কারণ পাশের নতুন সেতু দু’টিতে কোনও কম্পন অনূভূত হয় না।
নতুন তৈরি হওয়া সেতু দু’টির একটি দিয়ে গাড়ি যায় হাওড়ার দিকে। অন্যটি কোলাঘাটমুখী। তবে বেশির ভাগ গাড়ি কেন পুরনোসেতু দিয়ে যায়? চালকদের একাংশের বক্তব্য, মূল রাস্তা থেকে সরাসরি নতুন সেতুতে ওঠা যায় না। কিছুটা বেঁকে অনেকটা চড়াই উঠে নতুন সেতুতে যেতে হয়। তাই বেশির ভাগ গাড়িচালক পুরোন সেতু ব্যবহার করেন। আবার স্থানীয় রুটগুলিতে চলাচল করে এমন গাড়ি এবং বাস কোলাঘাটমুখী নতুন সেতুটি ব্যবহার করে। বিপদের কথা তুলতেই এক ট্রাক চালক বলেন, ‘‘আমাদের তো এই সেতুতেই সুবিধা। সরকার এটা মেরামতির ব্যবস্থা করুক।’’
উল্লেখ্য, পুরোন সেতুটি তৈরি করেছিল রাজ্য পূর্ত (সড়ক) দফতর। তারাই রক্ষণাবেক্ষণ করত। তখন মুম্বই রোডের দায়িত্বও ছিল রাজ্য পূর্ত (সড়ক) দফতরের হাতে। ২০০০ সালের গোড়ায় কেন্দ্রীয় সরকার মুম্বই রোডকে চার লেন করার সিদ্ধান্ত নেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। রাজ্যের হাতে থাকা জাতীয় সড়কগুলির সম্প্রসারণের দায়িত্ব নেন।
কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর, ডানকুনি থেকে খড়্গপুর পর্যন্ত মুম্বই রোডকে চার লেনে সম্প্রসারণের সময়ে বেশ কিছু পুরনো সেতুকেই পরীক্ষা করে যান চলাচলের উপযোগী হিসাবে রেখে দেওয়া হয়। কিছু পুরনো সেতু আবার ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়। মহিষরেখার পুরনো সেতুটি কিন্তু রেখে দেওয়া হয়েছে। তবে এর সংস্কার করা হয়েছে। জাতীয় সড়ক সংস্থার কলকাতা প্রকল্প রূপায়ণ অধিকর্তা সুব্রত নাগ বলেন, ‘‘পুরোন সেতুটিতে থেকে দুর্ঘটনার কোনও আশঙ্কাই নেই। শুধু সেতুটির যে আমূল সংস্কার করা হয়েছে তা নয়, কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের নিয়োজিত পরামর্শদাতারা নিয়মিত এই সেতু পরিদর্শন করেন। আমাদের পক্ষ থেকেও পরিদর্শন করা হয়।’’
পাশেই তো নতুন সেতু তৈরি হয়েছে। পুরোন সেতুর বদলে সেখান দিয়ে সব যান চালানো হচ্ছে না কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘দুটি সেতুতে ভাগ করে গাড়ি চলা তো ভালো। তাতে দুটি সেতুর উপরেই চাপ কম পড়ে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Calamities Bridge Kolkata Flyover Collapse
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE