Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ঘরে ঘরে ডেঙ্গি, জ্বরে কাঁপছে উত্তর হাওড়া

পুরকর্তাদের অভিযোগ, গত ছ’মাস ধরে নিয়মিত বেতন না পাওয়ায় স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দেবাশিস দাশ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:০৭
Share: Save:

ডেঙ্গি রুখতে সারা বছর কোনও কাজ না করার ফল এ বার হাতেনাতে পেতে শুরু করল হাওড়া পুরসভা। পুজোর কয়েক সপ্তাহ আগে ডেঙ্গি আর অজানা জ্বরের প্রকোপে এখন কাঁপছে গোটা উত্তর হাওড়া। ইতিমধ্যেই প্রায় তিনশো মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে পুরসভা ও জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে খোলা হয়েছে ‘ফিভার ক্লিনিক’। পরিস্থিতি ঘুরে দেখে গিয়েছেন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরা। ডেঙ্গি যে ভাবে ছড়াচ্ছে, তাতে পুজোর সময়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা।

পুরকর্তাদের অভিযোগ, গত ছ’মাস ধরে নিয়মিত বেতন না পাওয়ায় স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। যার জেরে ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে নজরদারির কাজ ভাল ভাবে হয়নি। তার ফলেই এখন উত্তর হাওড়ার ৩, ৫, ১০, ১১, ১২ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গির প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তাঁদের ধারণা। যদিও পুর কমিশনার বিজিন কৃষ্ণের দাবি, সালকিয়ার ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডে গত অগস্ট থেকেই ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছিল। তাই ১৬ অগস্ট থেকে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের নজর ওই ওয়ার্ডগুলির উপরেই ছিল। পুর কমিশনারের দাবি, ভেক্টর কন্ট্রোল টিম নিয়ে ওই এলাকায় নিয়মিত লার্ভা মারার বিষ স্প্রে ও ফগিং করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিয়েছেন পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা। দু’বেলা মাইকে প্রচারও চালানো হয়েছে।

কিন্তু এত কিছুর পরেও ডেঙ্গি যে ক্রমাগত উত্তর হাওড়ার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ছড়িয়ে পড়ছে, তা মানছেন পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী ও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা।

মঙ্গলবার সালকিয়ার ক্ষেত্র মিত্র লেন, উপেন্দ্র মিস্ত্রি লেন, খগেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলি লেন, কাটপুকুর লেন, রামকুমার ঘোষ লেন-সহ জিটি রোডের পূর্ব দিকের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রায় ঘরে ঘরে অজানা জ্বর আর ডেঙ্গি আক্রান্তের দেখা মিলেছে। সব থেকে বেশি ডেঙ্গি ছড়িয়েছে পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে। শুধু ওই ওয়ার্ডেই গত দেড় মাসে প্রায় দেড়শো জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর। এ জন্য ওই ওয়ার্ডে পুরসভা ‘ফিভার ক্লিনিক’ খুলেছে। সেখানে চিকিৎসকেরা দু’বেলা রোগী দেখছেন।

খগেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলি লেনের বাসিন্দা বেলা মণ্ডল বলেন, ‘‘আমার ভাইপোর স্ত্রী শিল্পা মণ্ডলের গত মঙ্গলবার কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। কয়েক বার বমিও করে। রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। এখন হাওড়া জেলা হাসপাতালের সিসিইউ ওয়ার্ডে রয়েছে।’’ একই অবস্থা ওই লেনের আর এক বাসিন্দা চন্দ্রশেখর ঘোষের। তাঁর প্লেটলেট ২০ হাজারে নেমে এসেছে।

ওই ওয়ার্ডের প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর গৌতম চৌধুরী বলেন, ‘‘এই ওয়ার্ডে ডেঙ্গির প্রকোপ মারাত্মক। তবে সকলেই চিকিৎসার পরে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। কোনও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।’’ গৌতমবাবুর দাবি, তিনি নিজেই রাস্তায় নেমে এলাকায় ডেঙ্গি সচেতনতার কাজ করছেন।

হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস বলেন, ‘‘গত দেড় মাসে গোটা হাওড়া জেলায় ৩৭০ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে হাওড়া পুরসভা এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ২৮৩। অক্টোবর মাসে মশার প্রজনন বাড়ে। পুজোর সময়ে তাই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Health Howrah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE