Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
‘‘ভোট দেব, মারও খাব!’’

পান্ডুয়ায় রাজনৈতিক সংঘর্ষে জখম বৃদ্ধ

ওসি-র জিপেই সুনীলবাবুকে প্রথমে পান্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে স্থানান্তরিত করানো হয় চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে

সম্মুখ-সমর: লাঠি-বাঁশ নিয়ে হাতাহাতি চলছে তৃণমূল ও বিজেপি কর্মীদের। নিজস্ব চিত্র।

সম্মুখ-সমর: লাঠি-বাঁশ নিয়ে হাতাহাতি চলছে তৃণমূল ও বিজেপি কর্মীদের। নিজস্ব চিত্র।

সুশান্ত সরকার
পান্ডুয়া শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

সৌজন্যটুকুও দেখাল না কোনও দল!

কারা আগে মিছিল করবে, এই নিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপির কাজিয়ায় বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘রণক্ষেত্র’ হয়ে উঠেছিল পান্ডুয়ার সিমলাগড় এলাকা। রেললাইন থেকে পাথর কুড়িয়েও চলতে থাকে ‘লড়াই’। কিছুই না-জেনে সেই ‘রণক্ষেত্র’ দিয়ে যেতে গিয়ে উড়ে আসা পাথরে জখম হয়েছিলেন এক বৃদ্ধ। মাথা ফেটে গিয়েছিল। রক্তাক্ত অবস্থায় প্রায় বেঁহুশ পড়ে ছিলেন রাস্তায়। কোনও দলের নেতাকর্মীরাই ফিরে তাকাননি। শেষ পর্যন্ত পুলিশ তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করায়।

সুনীল বিশ্বাস নামে বছর পঁচাত্তরের ওই বৃদ্ধ হৃদরোগী। সিমলাগড় রেলপাড় এলাকার বাসিন্দা তিনি। নাতনিকে স্কুল থেকে আনতে যাওয়ার সময়ে যে এ ভাবে আক্রান্ত হবেন, কোনও দিন ভাবেননি। তাঁর কথায়, ‘‘সামান্য কারণে ওরা মারামারি করে। আর আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের ভুগতে হয়। এ সব কী বন্ধ হয় না?’’ সুনীলবাবুর স্ত্রী বিজলিদেবীর ক্ষোভ, ‘‘ভোট চাইতে আসার সময়ে সব দলের কত বিনয়! তার পরে সব ভোল পাল্টায়। আমরা ভোটও দেব, মারও খাব!’’

দু’পক্ষের সংঘর্ষে জখম সুনীলবাবু । নিজস্ব চিত্র

এ দিন ব্লকের ১৬টি পঞ্চায়েতের মধ্যে আটটির বোর্ড গঠন হয়। ওই আটটি পঞ্চায়েতের ২০০ মিটার এলাকা জুড়ে তাই ১৪৪ ধারা জারি করেছিল প্রশাসন। এর মধ্যে এ দিন তেতে ওঠে সিমলাগড়-ভিটাসিন পঞ্চায়েত এলাকা। ওই পঞ্চায়েতে জিতেছে তৃণমূল। সেখানে যখন বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া চলছে, তখন পঞ্চায়েত ভবনের সামনে দিয়েই তৃণমূল নেতা সঞ্জয় ঘোষের নেতৃত্বে মিছিল শুরু হয়। প্রায় একই সময়ে জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি শ্যামল বিশ্বাসের নেতৃত্বেও মিছিল শুরু করেন দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা। দু’টি মিছিল মুখোমুখি হতেই উত্তেজনা বাড়ে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’দলের কর্মী-সমর্থকদের হাতেই লাঠি, ইট ছিল। দু’দলই পরস্পরকে মিছিলের জন্য জায়গা ছাড়তে রাজি হয়নি। শুরু হয় বচসা। পুলিশের বোঝানোতেও লাভ হয়নি। তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা লাঠি নিয়ে বিজেপি কর্মীদের উপরে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। বিজেপি কর্মীরা রুখে দাঁড়ালে মারামারি শুরু হয়। ওই রাস্তার ধারেই রেললাইন। সেখান থেকে পাথর কুড়িয়ে দু’পক্ষই পরস্পরের দিকে ছুড়তে থাকে। তেমনই একটি পাথরে জখম হন বৃদ্ধ সুনীলবাবু। মারামারিতে জখম হন দু’দলের অন্তত দশ জনও। শেষমেশ পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিবদমান দু’পক্ষকে হটিয়ে দেয়।

এর পরেই পান্ডুয়া থানার ওসি সুমন রায়চৌধুরী দেখতে পান, রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন সুনীলবাবু। ওসি-র জিপেই সুনীলবাবুকে প্রথমে পান্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে স্থানান্তরিত করানো হয় চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে। সেখানে আরও দুই বিজেপি কর্মীও চিকিৎসাধীন। বাকিদের চিকিৎসা চলছে পান্ডুয়ায়।

গোলমালের প্রভাব অবশ্য পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনে পড়েনি। তা নির্বিঘ্নেই হয়েছে। বিকেল পর্যন্ত কোনও পক্ষই থানায় অভিযোগ জানায়নি। জেলা পুলিশ সুপার সুকেশ জৈনের দাবি, ‘‘যে এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি ছিল, গোলমাল তার বাইরে হয়েছে। পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে।’’

এ দিন বিকেলেও দু’পক্ষের নেতারাই পরস্পরের উপরে দোষারোপে ব্যস্ত। কেউ সুনীলবাবুর খোঁজটুকু নেননি। বিজেপির পান্ডুয়া মণ্ডলের সভাপতি অশোক দত্ত বলেন, ‘‘তৃণমূল আমাদের জয়ী সদস্যদের মারধর করেছে। এর মধ্যে কোনও পথচারী জখম হয়েছেন কিনা, জানি না।’’ তৃণমূল নেতা সঞ্জয়ও বলেন, ‘‘বিজেপির মারে আমাদের কর্মীরাই হাসপাতালে। আর কেউ আহত হয়েছেন কিনা, কী করে জানব?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Conflict TMC BJP Politics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE