জটিল: বাজারে ঢোকার সিঁড়িতে ঝুলছে বিদ্যুৎ তার। ছবি: মোহন দাস
একশো বছরেরও পুরনো বাজার। ছোট ছোট ঘুপচি দোকানে চলে ব্যবসা। আগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা কী ও কেমন — তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই অধিকাংশ ব্যবসায়ীরই। দোকানের সামনেই জমে আবর্জনার স্তূপ, মাথার উপর ঝোলে বিদ্যুতের তার। আরামবাগের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ব্যক্তিগত মালিকানার এই বাজারটি নিতান্তই অরক্ষিত।
জানা গিয়েছে, ১৩০৮ বঙ্গাব্দে ওই বাজার পত্তন করে স্থানীয় দৌলতপুরের জমিদার হালদার পরিবার। তারপর থেকে ওই বাজারই এলাকার ভরসা। স্থানীয় আনাজ বিক্রেতারা অনেকাংশেই এই পাইকারি বাজারের উপর নির্ভরশীল। ৯০ জন পাইকারি আনাজ বিক্রেতা-সহ প্রায় ১২০ জন ব্যবসায়ীর দোকান রয়েছে সেখানে। তদারকির দায়িত্বে এখনও রয়েছে হালদার পরিবার।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বাজারের পরিকাঠামো একেবারেই নেই। অগ্নিনির্বাপণ নিয়ে ভাবাই হয়নি এতদিন। এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘বছর সাতেক আগে কলকাতার আমরি হাসপাতালে আগুন লাগার পর দমকল, পরিবেশ দফতর লাইসেন্সের কথা বলেছিল। ছাড়পত্র নিয়ে প্রশাসনের তৎপরতাও দেখা গিয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ তেমন কিছুই হয়নি।’’ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সে সময় প্রশাসন আগুন বিধি নিয়ে অনেক কথা বলেছিল। কিন্তু নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনও পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি।
কেন? সে প্রশ্ন করতেই হালদার পরিবারের বর্তমান সদস্য, বাজারের দায়িত্বপ্রাপ্ত রুদ্রপ্রসাদ হালদার বলেন, ‘‘অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখতে হবে এমন কোনও নির্দেশ তো দমকল বা প্রশাসন দেয়নি। এমনকি পুরসভার উদাসীনতায় একটা জলের কলও ছিল না বাজারে। সম্প্রতি জল সংযোগ হয়েছে।’’ অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা নেই খোদ রুদ্রবাবুর অফিসেও। সে কথা তুলতে তিনি স্বীকার করে নেন, ‘‘এতটা সচেতনতা আমাদের মধ্যে নেই। চেষ্টা করছি গাফিলতি মিটিয়ে নিতে।’’ তবে তিনি দাবি করেন, ‘‘প্রশাসনের উদ্যোগ না থাকলে বিষয়টা অত সহজ হবে না।’’
এলাকার মানুষের কাছে ‘পুরাতন বাজার’ বলে পরিচিত এই পাইকারি বাজার মহকুমার প্রায় সমস্ত বাজারের আনাজ বাজার দর নিয়ন্ত্রণ করে। দুপুরে ঘণ্টা দুই ছাড়া পাইকারি এবং খুচরো ক্রেতাদের ভিড় থাকে প্রায় ২৪ ঘণ্টাই। বাজারের বাইরে রাস্তার ধারে বিভিন্ন পসরা নিয়ে বসেন আরও অন্তত ১২০ জন ব্যবসায়ী। অভিযোগ, তারই জেরে ১২ ফুটের রাস্তা সঙ্কুচিত হয়ে ৬ ফুটে এসে ঠেকেছে। সেখানে আবার রিকশা, ভ্যান, মোটরবাইক, টোটোর ভিড়। বাজারের প্রবেশ মূল পথগুলি মাত্র ২ ফুট চওড়া। ফলে কখনও কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে ভিতরের মানুষ বেরিয়ে আসতে গিয়ে পদপিষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েই গিয়েছে। দমকলের কাজেও বিস্তর সমস্যা হবে।
আরামবাগে দমকল দফতরের এক কর্তা বলেন, “পুরনো বাজারের পরিস্থিতি খারাপ। বিষয়টি পুরসভাকে জানিয়েছি।” আরামবাগ পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন নন্দী বলেন, “ওটি ঐতিহ্যবাহী বাজার। এখনও ব্যক্তি মালিকানায় চলে। ফলে আমাদের ক্ষমতা সীমিত। বাজারটি পুরসভাকে হস্তান্তরের বিষয়ে কথা চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy