যমজ নাতি-নাতনির জন্য তারাপীঠে পুজো দেওয়ার মানত করেছিলাম। ঈশ্বর যে এই শাস্তি দেবেন, কে জানত!
শনিবার রাত তখন সাড়ে ন’টা। গাড়ির একেবারের পিছনের সিটে বসেছিলাম। জোরে ব্রেক কষার সঙ্গে সঙ্গেই বিকট আওয়াজ। আমাদের গাড়িটা নীচের দিকে নেমে গেল যেন! অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। চালক কী অবস্থায় ছিলেন, কী ভাবেই বা দুর্ঘটনা ঘটল তখন বুঝতে পারিনি। তবে এটুকু বুঝতে পারছিলাম, বড়সড় কোনও দুর্ঘটনায় পড়েছি। আতঙ্কে প্রথমে কয়েক সেকেন্ডের জন্য আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম। সংবিত ফিরতে দেখি, আমার পাশের সিটে বসা ছোট বৌমা আর তাঁর দেড় বছরের মেয়ে কান্নাকাটি করছে। আমিও চিৎকার জুড়ে দিলাম। আমার বিশেষ চোট লাগেনি। মিনিট দশেক পরে স্থানীয়েরা এসে আমাদের উদ্ধার করে গাড়িতে করে কাছাকাছি একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যান।
শুনলাম জায়গাটা ডানকুনি। নার্সিংহোমে পরিবারের সকলের কথা মনে পড়ছিল। স্বামী, দুই ছেলে, বৌমা, নাতি-নাতনি, বেয়াই কেমন আছেন? সবাইকে নার্সিংহোমে নিয়ে আসা হলেও বড় ছেলেকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। আমাদের যাঁরা দুর্ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছিলেন তাঁদের খোঁজ নিতে বলি। ওঁরাই ফের দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে ট্রেলারের পিছনে আটকে থাকা গাড়ি থেকে চালক এবং আমার বড় ছেলেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতা তারাপীঠ রওনা দিয়েছিলাম। শুক্রবার পুজো দিলাম। ফেরার সময় গাড়ির সামনের আসনে ছিল আমার বড় ছেলে। শনিবার রাত পর্যন্ত জানতাম, স্বামী-বেয়াই অন্য হাসপাতালে ভর্তি। কিন্তু ওঁরা যে দুর্ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছেন, তা আমাকে তখন বলা হয়নি। আমি এ বার কাকে নিয়ে বাঁচব!
নাতি-নাতনিদের জন্য মানতের পুজো দিতে যেতে ও-ই (প্রয়াত স্বামী শান্তিরঞ্জন পাল) বেশি আগ্রহী ছিল। আমি ছাড়া পরিবারের বাকি সবাই এখন হাসপাতালে ভর্তি। হালতুর বাড়িতে দেড় বছরের নাতিকে নিয়ে রয়েছি। ভগবান যে কী শাস্তি দিলেন! কেনই বা এই শাস্তি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy