Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

রাজ্যজুড়ে শাসকের হামলার মুখে বিরোধীরা

দলনেত্রী বলছেন, সংযত হতে। কর্মীরা শুনছেন কই! রাজ্যে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফেরা নিশ্চিত হতেই হাওড়া-হুগলির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শাসক দলের বিরুদ্ধে অশান্তি পাকানোর অভিযোগ করেছে বিরোধীরা। ভাঙচুর, মারধর, প্রাক্তন বিধায়ককে প্রাণনাশের হুমকি থেকে বিরোধী দলের কার্যালয়ে আগুন ধরানো—সব ক্ষেত্রেই অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

ফুরফুরায় অগ্নিদগ্ধ সিপিএম কার্যালয়। ছবি: দীপঙ্কর দে।

ফুরফুরায় অগ্নিদগ্ধ সিপিএম কার্যালয়। ছবি: দীপঙ্কর দে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৬ ০৩:৫১
Share: Save:

দলনেত্রী বলছেন, সংযত হতে। কর্মীরা শুনছেন কই!

রাজ্যে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফেরা নিশ্চিত হতেই হাওড়া-হুগলির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শাসক দলের বিরুদ্ধে অশান্তি পাকানোর অভিযোগ করেছে বিরোধীরা। ভাঙচুর, মারধর, প্রাক্তন বিধায়ককে প্রাণনাশের হুমকি থেকে বিরোধী দলের কার্যালয়ে আগুন ধরানো—সব ক্ষেত্রেই অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শ্রীরামপুরের বোসপাড়ায় কংগ্রেস কার্যালয় দখল করে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কংগ্রেসের অভিযোগ, থানায় জানালেও পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর রিঙ্কু রায়ের কার্যালয়েও তৃণমূল ওই রাতে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, রিঙ্কুদেবীর স্বামী ও সিপিএম নেতা সমীরেশবাবুকে নিগ্রহ করা হয়। সমীরেশবাবু বলেন, ‘‘আমাকে হেনস্থা ও গালাগাল করা হয়।’’

কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘কারও পার্টি অফিস দখল করা তো অন্যায়। তৃণমূলের কিছু ছেলে এ সব করছে। আমরা তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলছি।’’ তৃণমূলের শহর কমিটির সভাপতি পিনাকী ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘এমন কোনও ঘটনার কথা জানি না! খোঁজ নিয়ে জানছি।’’

বৃহস্পতিবার রাতে ব্যান্ডেলের মেরিপার্কে সিপিএমের ব্যান্ডেল শাখা সম্পাদক শিবাজি মিত্রর বাড়িতে হামলা হয়। শিবাজিবাবুর অভিযোগ, বাইকে চড়ে তৃণমূলের জনা ২০ লোক বাড়ির সামনে এসে জানলার কাচ ভাঙে। দরজা ভাঙারও চেষ্টা করে। পুলিশ আসার আগেই তারা গা-ঢাকা দেয়। হুগলির বালির মোড়েও সিপিএমের কার্যালয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার ঝাঁপপুকুরে সিপিএম কর্মী কার্তিক মালাকার ও সুনীল দেবনাথের বাড়িতেও হামলা হয়। সুনীলবাবুর অভিযোগ, হামলাকারীরা সবুজ আবির মেখেছিল। ফুরফুরায় সিপিএম কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

শুক্রবার সকালে আরামবাগের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক বিনয় দত্তর বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। অভিযোগ, তৃণমূলের হামলাকারীরা কালীপুরে তাঁর বাড়িতে দু’ দফায় হামলা চালায়। প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হয়। পুলিশ গেলে হামলাকারীরা পালায়। পুরশুড়ার ভাঙ্গামোড়া, খুশিগঞ্জে বৃহস্পতিবার থেকে সিপিএম কর্মী সমর্থকদের মারধর, লুঠ, বাড়ি এবং দোকান ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ক্ষতিগ্রস্ত সিপিএম কর্মী সন্তু সাঁতরা, রহমান মণ্ডল, দীপক দুলের অভিযোগ, “সিপিএম করলে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে ওরা।”


আরামবাগ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রহৃত সিপিএম কর্মী। ছবি: মোহন দাস।

পুরশুড়া সিপিএমের লোকাল কমিটির সম্পাদক মানিক আদকের অভিযোগ, ‘‘যে পুলিশ বুধবার পর্যন্ত ফোন করলেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যেত। তারা এখন ফোনই তুলছে না। তুললেও মিথ্যা অভিযোগ করছি জানিয়ে পাল্টা হুমকি দিচ্ছে।” নারায়ণপুরে বিনয় শিট ও লালু দাস নামে দুই সিপিএম কর্মীর দোকান পোড়ানো হয়েছে। তালা গ্রামের সিপিএম কর্মী হারাধন সিংহ, সাতমাসা গ্রামের উত্তম মণ্ডল, ঝণ্টু মালিককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পেটানো হয়। দু’জনকে আরামবাগ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বদনগঞ্জ, কয়াপাট, বেঙ্গাই, হাজিপুর, মান্দারন, পশ্চিমপাড়া সর্বত্রই তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছে।

সিপিএমের হুগলি জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, “ক্ষমতায় ফিরেই তৃণমূল ঘর ভাঙচুর, মারধর, আগুন লাগিয়ে বিজয়োল্লাস করছে। এজন্য তো মানুষ ওঁদের ভোট দেননি। সোমবার জেলাশাসকের কাছে এই বিষয়ে স্মারকলিপি দেব।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্তের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মানুষ সিপিএমকে প্রত্যাখ্যান করেছে। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে।”

পাশের জেলা হাওড়াতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস নিয়ে সরব বিরোধীরা। বৃহস্পতিবার রাতে আমতার দ্বীপমালিতায় জোটের পার্টি অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়। সিপিএম এবং কংগ্রেসের অভিযোগ, জেলায় একমাত্র এই কেন্দ্রে জোটের তরফে কংগ্রেসের অসিত মিত্র জিতেছেন। সেই কারণেই তৃণমূলের এমন আক্রমণ। অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE