Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বাড়িওয়ালার ‘ঘাড়ধাক্কা’, চার দিন ফুটপাতে দম্পতি

পুলিশ জানায়, হাওড়া শহরের ঘনবসতিপূর্ণ নটবর পাল রোডে শিবমন্দির রথতলার কাছে বটতলার ফুটপাতেই গত চার দিন ধরে কাটিয়েছেন সহায়সম্বলহীন গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী শঙ্করী বন্দ্যোপাধ্যায়।

অসহায়: রাস্তায় বসে গোপাল ও শঙ্করী বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

অসহায়: রাস্তায় বসে গোপাল ও শঙ্করী বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৯ ০২:১২
Share: Save:

ভাড়া বকেয়া পড়েছিল দু’মাস। তাই অসুস্থ ও বৃদ্ধ এক দম্পতিকে টেনেহিঁচড়ে বাড়ি থেকে বার করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে। নিরাশ্রয় স্বামী-স্ত্রী চার দিন ধরে রাস্তার পাশে পড়ে থাকলেও সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেননি কেউ। অবশেষে বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় এক বাসিন্দা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ ও জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের অফিসারেরা ওই দম্পতিকে উদ্ধার করে একটি সরকারি নৈশাবাসে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন।

পুলিশ জানায়, হাওড়া শহরের ঘনবসতিপূর্ণ নটবর পাল রোডে শিবমন্দির রথতলার কাছে বটতলার ফুটপাতেই গত চার দিন ধরে কাটিয়েছেন সহায়সম্বলহীন গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী শঙ্করী বন্দ্যোপাধ্যায়। দীর্ঘদিন চিকিৎসা করাতে না পারায় সুগারের রোগী, ষাটোর্ধ্বা শঙ্করীদেবী দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছেন। বছর পঁয়ষট্টির গোপালবাবুও অসুস্থ। বছর দেড়েক আগে হাওড়া পুরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের বেলগাছিয়া কে রোডে জনৈক গোবিন্দ দাসের বাড়ি ভাড়া নিয়ে অসুস্থ বাবা-মায়ের থাকার ব্যবস্থা করেন তাঁদের একমাত্র ছেলে রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার বড়বাজারে একটি দোকানে চাকরি করেন তিনি। সেই সূত্রে বড়বাজারেই থাকেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’মাসের বাড়িভাড়া বকেয়া থাকায় কালীপুজোর পরের দিন, সোমবার ওই দম্পতিকে বাড়ির মালিক ও তাঁর লোকজন ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে বার করে দেন বলে অভিযোগ। তার পরেই ওই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা গিয়ে আশ্রয় নেন স্থানীয় রথতলার ফুটপাতে। ছেলের ফোন নম্বর না জানায় ওই সময়ে তাঁর সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেননি তাঁরা।

বাড়িওয়ালা গোবিন্দ ও তাঁর স্ত্রী সোমা অবশ্য জোর করে বার করে দেওয়ার অভিযোগ মানতে চাননি। সোমার দাবি, ‘‘আমরা বলেছিলাম ঘর ছেড়ে দিতে। কারণ, ওঁরা ঘরের মধ্যেই প্রস্রাব-পায়খানা করে ফেলতেন। খুব ঝগড়া করতেন মহিলা। বাড়িভাড়া দেননি। তাই আমরা ঘর ছাড়তে বলায় নিজেরাই চলে যান।’’ এ দিন কে রোডের ওই ভাড়াবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তালাবন্ধ অপরিষ্কার ঘরে ওই দম্পতির বিছানা, জামাকাপড় সবই পড়ে রয়েছে।

জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের প্রধান আধিকারিক পিনাকী গুপ্ত বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরে ব্যাঁটরা থানার পুলিশ আমাদের ওই দম্পতির কথা জানালে আমি আগে ওঁদের মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করি। ঘুসুড়িতে আমাদের নৈশাবাসের একটি ঘরে থাকার ব্যবস্থা করেছি।’’

শুক্রবার ওই নৈশাবাসের বিছানায় শুয়ে হাওড়া পুরসভার প্রাক্তন কর্মী গোপালবাবু বলেন, ‘‘পরিবারের অমতে বিয়ে করেছিলাম বলে বিয়ের পরেই আমাকে বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া হয়েছিল। তার পর থেকে গত ৩৫ বছর ভাড়াবাড়িতেই সংসার করেছি। কিন্তু মাত্র দু’মাস ছেলে ভাড়া দিতে পারেনি বলে ওরা বার করে দেবে ভাবিনি।’’ সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত সরকারি নৈশাবাসেই রাখা হবে ওই দম্পতিকে। ছটপুজোর পরে দু’জনেরই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Old Couple House Tenant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE