Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বাস-অটো গোলমালে দু’দিন ধরে নাকাল যাত্রী

বাস এবং অটোচালকদের মারামারির জেরে টানা দু’দিন ধরে যাত্রী পরিষেবা কার্যত বন্ধ রইল হুগলির পাণ্ডুয়ায়। গন্তব্যে পৌছতে নাকাল হলেন সাধারণ মানুষ। অথচ সমস্যা মেটাতে হাত গুটিয়ে বসে রইল প্রশাসন। অটোচালকদের অভিযোগ, বাসের কর্মীরা তাঁদের হয়রান করেন। আর বাস মালিকদের বক্তব্য, আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রুট ভেঙে যত্রতত্র অটো দাপিয়ে বেড়ায়। বেআইনি অটোর দৌরাত্ম রুখতে সংশ্লিষ্ট দফতর কোনও ব্যবস্থা না নেওয়াতেই এই পরিস্থিতি। বিডিও নবনীপা সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘সোমবার দু’পক্ষকে ডাকা হচ্ছে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হবে।’’

ভরসা টোটো। —নিজস্ব চিত্র।

ভরসা টোটো। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাণ্ডুয়া শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৪০
Share: Save:

বাস এবং অটোচালকদের মারামারির জেরে টানা দু’দিন ধরে যাত্রী পরিষেবা কার্যত বন্ধ রইল হুগলির পাণ্ডুয়ায়। গন্তব্যে পৌছতে নাকাল হলেন সাধারণ মানুষ। অথচ সমস্যা মেটাতে হাত গুটিয়ে বসে রইল প্রশাসন।

অটোচালকদের অভিযোগ, বাসের কর্মীরা তাঁদের হয়রান করেন। আর বাস মালিকদের বক্তব্য, আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রুট ভেঙে যত্রতত্র অটো দাপিয়ে বেড়ায়। বেআইনি অটোর দৌরাত্ম রুখতে সংশ্লিষ্ট দফতর কোনও ব্যবস্থা না নেওয়াতেই এই পরিস্থিতি। বিডিও নবনীপা সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘সোমবার দু’পক্ষকে ডাকা হচ্ছে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হবে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, শনিবার সকাল ৯টা নাগাদ সিংহের কোন-পাণ্ডুয়া রুটের একটি বাসের চালক ও কন্ডাক্টরের সঙ্গে এক অটোচালকের গোলমাল হয় সরাই এলাকায়। দু’টি গাড়িই পাণ্ডুয়ায় আসছিল। বাসকর্মীদের অভিযোগ, অটোটি ইচ্ছাকৃত ভাবে বাসটিকে বেরনোর জায়গা দিচ্ছিল না। সরাইতে ওভারটেক করে অটোর সামনে এসে দাঁড়ায় বাসটি। দু’পক্ষের মধ্যে বচসা হয়। তখনকার মতো বিষয়টি মিটেও যায়। দু’টি গাড়িই পাণ্ডুয়ায় স্ট্যান্ডে চলে আসে।

অভিযোগ, কেন অটোচালককে রাস্তায় আটকানো হল, এই অভিযোগ তুলে স্টান্ডে অটোচালকেরা লাঠিসোঁটা, রড নিয়ে বাসের কর্মীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। দু’পক্ষের মধ্যে মারপিট হয়। জখম দুই বাসচালক এবং এক কন্ডাক্টরকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অন্য দিকে, তাঁদেরও তিন জন আহত হন বলে অটোচালকদের দাবি। ঘটনার পরে দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে দায় চাপিয়ে গাড়ি চালানো বন্ধ করে দেন। পাণ্ডুয়া থানায় অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ দায়ের করা হয় কালনা-পাণ্ডুয়া বাস মালিক সংগঠনের সভাপতি কাজল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অটোচালকরা বিনা প্ররোচনায় আমাদের লোকজনকে প্রচণ্ড মারধর করেছে। পুলিশ দোষীদের গ্রেফতার করুক।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমরা তো বাস চালাতেই চাই। কিন্তু অটো কোনও রুটের তোয়াক্কা না করে যেখানে খুশি চলায় আমাদের ব্যবসা মার খাচ্ছে। আমরা সরকারকে কর দিয়ে বাস চালাই। তা কি লোকসানের জন্য? প্রশাসন অবিলম্বে এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করুক।’’ তৃণমূল নেতাদের একাংশের মদতেই বেআইনি অটো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বলে বাসমালিকদের অভিযোগ।

বাস এবং অটো— দুইয়ের কর্মী সংগঠনেরই সভাপতি ব্লক তৃণমূল নেতা তথা পাণ্ডুয়া পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য অসিত চট্টোপাধ্যায়। তিনি সমস্যা মেটাতে ব্যর্থ বলে দু’পক্ষের লোকজনেরই অভিযোগ। স্থানীয় সিপিএম বিধায়ক আমজাদ হোসেনও অসিতবাবুর উপরেই গোলমালের দায় চাপিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘একই নেতা দুই সংগঠনের মাথায় থাকাতেই এই অবস্থা।’’ বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে অসিতবাবুর মন্তব্য, ‘‘বাসমালিক সংগঠন কংগ্রেস প্রভাবিত। ওরা বাস বন্ধ করে শাসক দলকে হেনস্থা করতে চাইছে। আমরা চেষ্টা করছি সমস্যা মেটানোর।’’ এ ব্যাপারে বাসমালিক তথা ব্লক কংগ্রেস নেতা চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে কোনও কারণেই হোক, উনি বেআইনি অটো নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। তাই মিথ্যা বলছেন।’’ অটোচালক সংগঠনের সম্পাদক নিলয় রায়ের অভিযোগ। বাসের কর্মীরা রাস্তায় তাঁদের হেনস্থা করেন। অটোচালকরা নির্দিষ্ট রুটেই গাড়ি চালান বলেও তিনি দাবি করেন।

দু’পক্ষের গোলমালে অবশ্য সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। শনিবারের মতো রবিবারেও গাড়ির জন্য রাস্তায় হা-পিত্যেশ করে দাঁড়িয়ে থেকেছেন মানুষ। বাস বা অটো না পেয়ে কেউ টোটো, কেউ অতিরিক্ত টাকা গুনে অন্য গাড়ি ভাড়া করে গন্তব্যে পৌছেছেন। সুযোগ বুঝে রিকশা প্রচুর ভাড়া হেঁকেছে। উপায়ান্তর না দেখে অনেকে কড়া রোদ মাথায় নিয়েও হেঁটেই গন্তব্যের দিকে রওনা হন।

জামগ্রামের বাসিন্দা অভিজিত নন্দী জরুরী কাজে শ্রীরামপুরে গিয়েছিলেন। তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘‘অনেক ক্ষণ বাস স্টপেজে দাঁড়িয়ে জানতে পারি, বাস-অটো কিছুই চলছে না। অগত্যা ৭ টাকা বাসভড়ার বদলে ৩০০ টাকা রিকশা ভাড়া গুনে স্টেশনে এসেছি।’’ ইলছোবা-মণ্ডলাইয়ের বাসিন্দা অসীম কুণ্ডু সপরিবারে ধানবাদে গিয়েছিলেন। এ দিন সেখান থেকে পাণ্ডুয়ায় ফেরেন। বাস না চলায় বাড়ি ফিরতে গাড়ি ভাড়া করতে হয় তাঁদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE