Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
চুঁচুড়ায় যক্ষ্মার বর্জ্যও পড়ে থাকে পুরসভার ভ্যাটে 

নার্সিংহোমের সিরিঞ্জ-তুলোও ঘুরপথে রাস্তায়

গৃহস্থালির জঞ্জাল ফেলার জায়গায় চিকিৎসা বর্জ্য!

দূষিত: রাস্তায় পড়ে থাকে এমনই চিকিৎসা-বর্জ্য। ছবি: তাপস ঘোষ

দূষিত: রাস্তায় পড়ে থাকে এমনই চিকিৎসা-বর্জ্য। ছবি: তাপস ঘোষ

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:২০
Share: Save:

গৃহস্থালির জঞ্জাল ফেলার জায়গায় চিকিৎসা বর্জ্য!

ব্যস্ত রাস্তার ধারে পড়ে ব্যবহৃত ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ, গ্লাভস!

ছবিটা হুগলির জেলাসদর চুঁচুড়ার। জেলা হাসপাতালের (চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতাল) রাস্তার ধারে প্রতিদিনই পড়ে থাকতে দেখা যায় ওই সব দূষিত আবর্জনা। হাসপাতাল রোডে অসংখ্য ওষুধের দোকান রয়েছে। রয়েছে একাধিক নার্সিংহোমও। চিকিৎসা-বর্জ্য নার্সিংহোম থেকেই আসে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। কয়েকটি নার্সিংহোমের কর্মীদের একাংশ এবং মালিকপক্ষ সে কথা মেনে নিয়েছেন।

জেলা স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশও মানছেন, চুঁচুড়ার বেশির ভাগ নার্সিংহোমে যত শয্যা থাকার কথা, খাতায়-কলমে তার চেয়ে কম দেখানো হয়। এই অনিয়মের ফাঁক গলেই পুরসভার জঞ্জালের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে নার্সিংহোমের বর্জ্যও। যা থেকে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে পুরোদস্তুর। চুঁচুড়ার চিকিৎসক আশিস মণ্ডলই বলছেন, ‘‘দেখেছি, টিবি-র চিকিৎসার বর্জ্য ফেলা হয়েছে পুরসভার ভ্যাটে! ওই রোগের জীবাণু বাতাসে ছড়ায়। যা বয়স্ক মানুষ এবং শিশুদের পক্ষে মারাত্মক। কারণ, ওঁদের শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কম।’’

কলকাতার হাসপাতাল-নার্সিংহোমগুলি থেকে রাজ্য সরকার অনুমোদিত দু’টি সংস্থা চিকিৎসা-বর্জ্য নিয়ে যায়। ওই সংস্থাগুলিই আবার কলকাতা লাগোয়া দুই জেলা—হাওড়া ও হুগলির নার্সিংহোমগুলির বর্জ্যও নিয়ে যায় নিজস্ব গাড়িতে। কলকাতার ধাপা এবং উলুবেড়িয়ায় ওই সংস্থা দু’টির নিজস্ব জায়গা আছে। নিজস্ব প্রযুক্তির সাহায্যে চিকিৎসা-বর্জ্যকে নিয়ম মাফিক নষ্ট করে দেওয়া হয়।

তা হলে কি ওই সংস্থা চুঁচুড়ার নার্সিংহোমগুলি থেকে বর্জ্য নিচ্ছে না?

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বিধি অনুযায়ী শয্যাসংখ্যার নিরিখে চিকিৎসা-বর্জ্য নিয়ে যাওয়ার জন্য নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে মাসিক টাকা নির্দিষ্ট সংস্থাকে দিতে হয়। প্রতিটি নার্সিংহোমের শয্যাসংখ্যা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতর থেকে অনুমোদন করিয়ে শংসাপত্র নিতে হয়। অনুমোদিত সেই তালিকা জোগাড় করে নির্দিষ্ট সংস্থাটি শয্যাভিত্তিক টাকা নেয় নার্সিংহোম থেকে।

জেলা স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ মানছেন, চুঁচুড়ায় সরকারি স্তরে নজরদারির অভাবে অনেক নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষই শয্যাসংখ্যা কম দেখিয়ে ওই সংস্থাকে কম টাকা দিচ্ছে। তাই উদ্বৃত্ত চিকিৎসা-বর্জ্য ফেলা হচ্ছে যেখানে-সেখানে। নার্সিংহোম-মালিকদের একাংশ অবশ্য এ কথা মানতে চাননি। তাঁদেরই এক জনের দাবি, ‘‘নার্সিংহোমের যে শয্যাসংখ্যার জন্য লাইসেন্স দেওয়া হল, আমি তার থেকে কী করে কম দেখাব? তবে, যে সংস্থাগুলি বর্জ্য নেয়, তাদের ‘রেট’ এক এক জায়গায় এক এক রকম।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘প্রতিটি নার্সিংহোমে বর্জ্যের উপরে নজরদারির জন্য একজন ‘টেকনিক্যাল’ লোক রাখা দরকার। এটা ঠিকই, পুরসভার বর্জ্যের সঙ্গে নার্সিংহোমের বর্জ্য মিশছে।’’

মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী অবশ্য এ বিষয়ে নজরদারি এবং সতর্কতা আরও বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। চিকিৎসা-বর্জ্য রাস্তায় চলে আসা ঠিক নয়।’’ চুঁচুড়ার পুরপ্রধান গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুর এলাকার সব ক’টি নার্সিংহোমকে বর্জ্য নিয়ে কড়া বার্তা দেওয়া আছে। ফের পুরসভার হেল্‌থ অফিসারকে বিষয়টি দেখতে বলব। কারও যদি নার্সিংহোমের বর্জ্য নিয়ে অভিযোগ থাকে, জেলা স্বাস্থ্য মনিটরিং কমিটিকে জানাতে পারেন।’’

কিন্তু এর পরেও চুঁচুড়ার রাস্তায় চিকিৎসা-বর্জ্য চলে আসা ঠিক কবে বন্ধ হবে, এ প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hospital waste
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE