Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

শঙ্কার যাত্রা বালি-বেলুড়েও

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাঁত্রাগাছি রেল স্টেশনের ফুটওভার ব্রিজ থেকে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। এরপরে বুধবার দুপুরে পূর্ব রেলের বালি, বেলুড়, বালিঘাট স্টেশনে ফুটওভার ব্রিজের অবস্থা দেখতে গিয়ে চোখে পড়ল উল্টো চিত্র

ঝুঁকি: ওভারব্রিজ থাকা সত্ত্বেও রেললাইন পেরিয়েই যাতায়াত বেলুড় স্টেশন।

ঝুঁকি: ওভারব্রিজ থাকা সত্ত্বেও রেললাইন পেরিয়েই যাতায়াত বেলুড় স্টেশন।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৮ ০১:১১
Share: Save:

ফুটওভার ব্রিজের অবস্থা ভালই। কিন্তু তা দিয়ে যাতায়াত করছেন হাতে গোনা কয়েকজন। অধিকাংশ যাত্রীই রেল লাইন পার হচ্ছেন রীতিমতো ঝুঁকি নিয়ে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাঁত্রাগাছি রেল স্টেশনের ফুটওভার ব্রিজ থেকে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। এরপরে বুধবার দুপুরে পূর্ব রেলের বালি, বেলুড়, বালিঘাট স্টেশনে ফুটওভার ব্রিজের অবস্থা দেখতে গিয়ে চোখে পড়ল উল্টো চিত্র। স্থানীয় দোকানদার থেকে শুরু করে রেল পুলিশও জানাচ্ছেন, এটাই ওই সমস্ত স্টেশনের রোজকার চিত্র। বারবার বলেও কোনও ফল মেলে না। আর যাত্রীদের যুক্তি, ‘‘ফুটওভার ব্রিজে অনেকটা উঠে-নামতে সময় বেশি লাগে। তাই রেল লাইন পারাপারে এই শর্টকার্ট।’’

কিন্তু এঁদের আটকাতে রেল জরিমানা করে না কেন?

রেল পুলিশের একাংশ জানাচ্ছেন, অধিকাংশ যাত্রী স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায়, জরিমানা করলেই তাঁরা ঝামেলা করেন। আর তাতে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা দেখা দেয়। কয়েক মাস আগেই বালিতে রেল লাইন পারপারের জন্য একজনকে জরিমানা করায় উত্তাল হয়েছিল গোটা স্টেশন। রেল পুলিশ কেন জরিমানা করবেন তা নিয়ে বিক্ষোভ, ভাঙচুর চালিয়ে ছিলেন যাত্রীদের একাংশ। অগত্যা পুজোর সময় বেলুড় স্টেশনে দড়ি ও ড্রাগন আলো নিয়ে যাত্রীদের রেল লাইন পারাপারে সহযোগিতা করতে হয়েছে রেল পুলিশকে। যদিও রেল কর্তাদের দাবি, মাঝেমধ্যে ওই স্টেশনগুলিতে অভিযান চালানো হয়।

রেল পুলিশ সূত্রের খবর, বালি ও বেলুড়ে যে অংশ দিয়ে যাত্রীরা রেল লাইন পারাপার করেন সেখানে রেলিং দিয়ে আটকানোর জন্য রেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বালি স্টেশন। নিজস্ব চিত্র

পূর্ব রেলের হাওড়া-বর্ধমান শাখার মেন ও কর্ড লাইনের অত্যন্ত ব্যস্ত স্টেশন বালি ও বেলুড়। এ দিন বালিতে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে দুটি ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে। একটি ব্রিজ মেন লাইনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে কর্ড লাইনের পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্ম পর্যন্ত রয়েছে। ওই ফুটওভার ব্রিজ থেকেই একটি র‌্যাম্প চলে গিয়েছে কর্ডের চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার জন্য। এর পাশাপাশি মেন লাইনের শেষের দিকে এক নম্বর থেকে তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে যাতায়াতের জন্য রয়েছে আরও আরেকটি ফুটওভার ব্রিজ।

কিন্তু বাস্তব চিত্রে, হাতে গোনা কয়েকজন যাত্রীকে দেখা গেল ওই ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে। কেউ ব্যাগপত্র হাতে বাচ্চাকে নিয়ে রেল লাইন পার করছেন, তো কোনও বয়স্ক মানুষ তড়িঘড়ি পার হওয়ার চেষ্টা করছেন। কেউ আবার ট্রেন আসছে দেখে দৌড়ে লাইন পার করছেন।

বালি স্টেশনের সামনেই পান-বিড়ির দোকানি বললেন, ‘‘এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে দুই নম্বরে আসতে গিয়ে অনেকেই ট্রেনের ধাক্কায় মারা গিয়েছেন। পুলিশও মাঝেমধ্যে কড়াকড়ি করে। কিন্তু কয়েক দিন পরে অবস্থা যে কে সেই।’’

দুই নম্বর প্ল্যাটফর্মে পরিবার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন বাবুসোনা দাস। এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে হাওড়া যাওয়ার ট্রেন আসছে ঘোষণা হতেই ওই যুবক তড়িঘড়ি রেল লাইন করে চলে এলেন। বললেন, ‘‘বয়স্ক মানুষকে নিয়ে এতটা সিঁড়ি ওঠা মুস্কিল। ট্রেন মিস হয়ে যাবে।’’

একই রকমের চিত্র বেলুড়েও। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, এখানে ফুটওভার ব্রিজ কার্যত কেউ ব্যবহার করেন না। দেখা গেল, ফুটওভার ব্রিজের উপরে দাঁড়িয়ে গল্প জুড়েছেন কয়েকজন তরুণ-তরুণী। এক ভবঘুরে ঘুমোচ্ছেন ব্রিজে ওঠার সিঁড়িতে। আর যাত্রীরা এক নম্বর থেকে পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্ম পর্যন্ত পারপার করছেন লাইন টপকে। এ বিষয়ে তাঁদের যুক্তি, বেলুড় স্টেশনের ফুটওভার ব্রিজটি প্ল্যাটফর্ম থেকে অনেকটা দূরে। যদিও এই যুক্তি মানতে নারাজ রেল কর্তারা। তাঁরা জানাচ্ছেন, ফুটওভার ব্রিজের সিঁড়ি যেখানে শেষ হচ্ছে সেখান থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে থাকা প্ল্যাটফর্মে যাতায়াতের জন্য রেলিং ঘেরা বাঁধানো জায়গা রয়েছে। ওই কর্তা বলেন, ‘‘মানুষ সামান্য ওইটুকু অংশও যদি হাঁটতে না পারেন, তাহলে কিছু বলার নেই।’’

অন্য দিকে যাত্রীদের অভিযোগ, দক্ষিণেশ্বর স্টেশনে ওঠা নামার জন্য যে র‌্যাম্প রয়েছে তাতে ভিড়ের সময় সমস্যা হয়। ওই র‌্যাম্প থেকেই স্কাইওয়াকে যাওয়ার রাস্তা তৈরি হয়েছে। স্কাইওয়াক খুলে গেলে সমস্যা আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন যাত্রীরা। দক্ষিণেশ্বরের বাসিন্দা ঝন্টু পাল বলেন, ‘‘দক্ষিণেশ্বরে ওঠা নামার জন্য আরেকটি সিঁড়ি বা র‌্যাম্প বানানো প্রয়োজন।’’ তবে রেল কর্তাদের অভিমত, যে কোন স্টেশনে ফুটওভার ব্রিজ কিংবা ওঠানামার রাস্তা বানানোর সময় দেখা হয় সেখানে প্রতিদিন কত যাত্রী হয়। সেই মতোই দক্ষিণেশ্বরে ওই র‌্যাম্প এখন ঠিক রয়েছে বলেই মনে হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Risk Rail Line Bali Belur Footbridge
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE