Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
অবাধেই চলছে নাড়া পোড়ানো, বাড়ছে দূষণ

আকাশ ভরছে কালো ধোঁয়ায়

অ-সচেতন: গোঘাটের ভিকদাসে জমিতেই চলছে নাড়া পোড়ানো। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

অ-সচেতন: গোঘাটের ভিকদাসে জমিতেই চলছে নাড়া পোড়ানো। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৩৬
Share: Save:

কৃষি দফতরের প্রচার, শিবির, কৃষকদের উপর চাপ— সব উধাও। মাত্র দিন কুড়ি কৃষি দফতরের কড়া নজরদারি ছিল। ফের অবাধে ধানজমিতে নাড়া (ধান গাছের গোড়া) পোড়ানো চলছে আরামবাগ মহকুমা জুড়ে।

কেন নাড়া পোড়ানো হচ্ছে?

চাষিদের দাবি, উপায় নেই। না হলে আলু চাষে দেরি হয়ে যাবে। কৃষি দফতর এক-দু’টি মিটিং আর কিছু লিফলেট বিলি করা ছাড়া আর কিছু করেনি। নাড়া না-পুড়িয়ে কী ভাবে তা নষ্ট করতে হবে জানানো হয়নি। আরামবাগের রামনগর মৌজার চাষি বিদ্যাপতি বাড়ুইয়ের অভিযোগ, “মাসখানেক আগে কৃষি দফতরের আধিকারিক এবং কর্মীরা এলাকায় এসে মাত্র একটিই মিটিং করেন। আমরা জানতে চেয়েছিলাম, খড় না পোড়ালে জমিতে দ্রুত তা পচানোর বিকল্প কী? তাঁরা বলতে পারেননি। চলে যাওয়ার সময় শুধু বলেছিলেন— সরকার প্রচার করতে বলেছে। এ বার আপনারা যেমন বুঝবেন তাই করবেন।”

মাসখানেক আগে দিল্লির দূষণে হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ এবং পঞ্জাবের নাড়া পোড়ানোর কথা সামনে এসেছিল। কড়া নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এ রাজ্যে যাতে এ বার নাড়া পোড়ানোয় লাগাম পরানো যায়, সে জন্য আমন ধান কাটার মরসুনের শুরু থেকেই প্রচারে জোর দেয় কৃষি দফতর। রাজ্যের অন্যতম ধান উৎপাদক জেলা হুগলি। গতবার এখানে বহু খেত থেকেই নাড়া পোড়ানোর কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী আকাশ ঢেকেছিল। এ বার যাতে তা ন হয়, সে জন্য সরব হয়েছিলেন পরিবেশবিদরা। কিন্তু আরামবাগ-সহ জেলার বেশ কিছু এলাকায় সেই ছবিই ফিরে এল।

কেন আটকাতে পারল না কৃষি দফতর?

শিবির করা হলেও রাতারাতি নাড়া পোড়ানো যে বন্ধ করা যাবে না, তা মেনে নিয়েছিলেন কৃষি-কর্তারা। তাঁরা জানিয়েছিলেন, নাড়া পোড়ানো বিপজ্জনক প্রবণতা। দেখা গিয়েছে, এক কুইন্টাল খড় পোড়ালে ১৪৬০ কেজি কার্বন-ডাই-অক্সাইড, ৬০ কেজি কার্বন মনোক্সাইড, ২ কেজি সালফার-ডাই অক্সাইড তৈরি হয়। তৈরি হয় মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইডের মতো গ্যাসও। সবগুলিই পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর। তাই এটা বন্ধ করতে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।

জেলার মুখ্য কৃষি আধিকারিক অশোক তরফদারের দাবি, “প্রচুর সচেতনতা শিবির হয়েছে। আরামবাগ মহকুমায় একটু বেশি পুড়লেও ধনেখালি, পোলবা-সহ বেশ কিছু ব্লকে এ বার অনেক কম নাড়া পোড়ানো হয়েছে। নাড়া পোড়ানো অন্তত ৫০ শতাংশ কমেছে। এটা নির্মূল করার প্রক্রিয়া জারি থাকবে। এ বার প্রচারে ফল মিলছে। কিছু চাষি দফতরে এসে অন্যেরা নাড়া পোড়াচ্ছেন বলেও নালিশ করছেন।” নাড়া পোড়ানো বন্ধে কিছু মানুষ সচেতন হয়েছেন বলে দাবি করেছেন আরামবাগ মহকুমা কৃষি আধিকারিক।

অথচ, এ বার কৃষি দফতরের প্রচারের পরে আরামবাগের বেশ কিছু মাঠে যন্ত্রের বদলে কাস্তে দিয়ে ধান কাটতে দেখা গিয়েছিল খেতমজুরদের। অবশ্য তা কতদিন সম্ভব, তা নিয়ে প্রথম থেকেই সংশয়ে ছিলেন চাষিরা। কারণ, তাতে সময় এবং খরচ দুই-ই বেশি লাগছিল। শেষমেশ যন্ত্রে ধান কেটে নাড়া পোড়ানোর চেনা রাস্তাতেই হাঁটলেন মহকুমার বহু চাষি।

সরাসরি চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন কৃষি প্রযুক্তি সহায়কেরা। তাঁরা মানছেন, নাড়া পোড়ানো বন্ধের কাজ তদারক করতে পারছেন না। তাঁদের দাবি, এমনিতেই কর্মী-সংখ্যা কম। যাঁরা আছেন, তাঁরা এখন বুলবুলের ক্ষতিপূরণের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। চলতি মাসে কৃষিমেলাও আয়োজন করতে হবে। শুরু হবে ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পের চেক বিলির প্রক্রিয়াও। এ সবের জেরে নাড়া পোড়ানো ঠেকাতে পারছেন না।

বিদ্যাপতিবাবু বলেন, ‘‘আমার ৩০ বিঘা জমির মধ্যে ১৫ বিঘা কাস্তেতে কেটে ঘরে তোলা হয়েছে। বাকি ১৫ বিঘার ধান যন্ত্রে কেটে নাড়া পুড়িয়ে দিতে হয়েছে। নইলে পরবর্তী আলু চাষ করা সম্ভব ছিল না।” মোবারকপুরের চাষি শেখ আনিসুরও নাড়া পোড়ানোর কথা মেনেছেন। আনিসুরের প্রশ্ন, “নাড়া পোড়ালে জমির স্বাস্থ্য বা এলাকার পরিবেশ দূষণ নিয়ে সরকারি কর্তাদের বক্তব্যই পরিষ্কার হচ্ছে না। বছরখানেক আগে অব্দি তাঁরা নাড়া পোড়ানোর সুপারিশ করে এসেছেন।”

এ কথা মেনে মহকুমা কৃষি দফতরের এক কর্তার দাবি, কৃষি দফতরের বিশেষজ্ঞরা কিছু বিশেষ ক্ষতিকারক রোগ ও পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য নাড়া পোড়াবার সুপারিশ করে থাকেন ঠিকই। তবে তা এলাকাভিত্তিক, যা মোট চাষযোগ্য এলাকার খুবই কম শতাংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Air Pollution Stubble Burning Carbon Di Oxide
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE