বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ রাজ্যে নতুন ঘটনা নয়। ২০১৫ সালের মে মাসে পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার ব্রাহ্মণবাড় গ্রামে কেঁপে উঠেছিল একটি বেআইনি বাজি কারখানার বিস্ফোরণে। প্রাণ যায় ১২ জনের। মৃতদের তালিকায় ছিল বেশ কয়েকজন নাবালকও।
রাজ্যের অন্যান্য জেলার মতই বাজি তৈরি করতে গিয়ে হুগলিতে ফি-বছর নিয়ম করে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। মহিলাদের পাশাপাশি ছোট শিশুরাও বাজি তৈরি করে। অনেক সময়ে বিস্ফোরণে তাদেরও প্রাণ যায়। অথচ অবৈধভাবে বাজি তৈরি বন্ধে প্রশাসনের কোনও উদ্যোগ নেই বলেই অভিযোগ উঠছে। বেআইনিভাবে বাজি তৈরি নিয়ে গ্রিন ট্রাইবুন্যাল রাজ্যজুড়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তবু ছেদ পড়েনি বেআইনি বাজি তৈরির প্রবণতায়।
বাজি সংক্রান্ত কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে প্রাথমিকভাবে প্রশাসন তৎপর হয় ঠিকই। পুলিশি ধরপাকড়ও শুরু হয়। তারপর কিছু সময় পেরিয়ে গেলেই যে কে সেই। তারপর যে কে সেই! বেআইনি বাজি ফাটানোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে ‘শব্দ শহিদ’ হওয়া দীপক দাস হুগলি জেলার শ্রীরামপুরের বাসিন্দা ছিলেন।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আশির দশকের শুরুতে হুগলির চন্দননগরের পাদ্রিপাড়া এলাকায় বাজি তৈরির সময় প্রথম বড়সড় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তখন ওই দুর্ঘটনায় ১৫ জন মারা গিয়েছিলেন। এরপর নড়েচড়ে বসেছিল প্রশাসন। তারপর ওই এলাকায় বাজি তৈরি বন্ধ হয়ে গেলেও যাঁদের প্রাণ গিয়েছিল তাঁদের পরিবার সেই সময়ে প্রশাসনের তরফে কোনও আর্থিক সাহায্য পাননি। একজন মাত্র বাজি বিক্রেতা তাঁর নিজস্ব জমি বিক্রি করে কিছু অর্থ সাহায্য করেছিলেন মৃতদের পরিবারকে।
হুগলিতে বেআইনি বাজি তৈরি যেমন থেমে থাকেনি তেমনই আটকানো যায়নি মৃত্যুও। হুগলির ডানকুনি, ধনেখালি, চণ্ডীতলা, জাঙ্গিপাড়া, আরামবাগ, পোলবা, চুঁচুড়া-সহ বেশ কিছু জায়গায় নিয়মিত বাজি তৈরি হয়ে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাহিদার পরিবর্তন হয়েছে। বাজি তৈরির ধরনও এখন আমূল বদলে গিয়েছে। আওয়াজের বাজির থেকে এখন নানা আতসবাজির চাহিদা বেড়েছে। আর তার সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দুর্ঘটনা।
অভিযোগ, কোনও রকম সাবধানতা অবলম্বন করা হয় না বাজি তৈরিতে। তার ফলেই দুর্ঘটনা ঘটে।
২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাজি তৈরির ভরা বাজারে ডানকুনিতে দুর্ঘটনা ঘটেছিল। সেই সময় ৬ জনের প্রাণ যায়। ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে বেগমপুরে মারা যান ৪ জন। ২০১৪ সালে চুঁচুড়ায় মারা যান ১ জন। আহত হন ১২ জন। ২০১৫ সালের ধনেখালিতে একটি বাড়ির একাংশ উড়ে যায় বাজি তৈরির সময়। দুই মহিলা-সহ অন্তত ৬ জন মারা যান সেই ঘটনায়। এর আগে জাঙ্গিপাড়ায় অন্য একটি ঘটনায় দুই শিশু-সহ পাঁচ জনের প্রাণ গিয়েছিল। চলতি বছরের জুলাই মাসে বাজি তৈরি করতে গিয়ে তেলেনিপাড়ায় ২ জন জখম হন।
পুলিশ জানিয়েছে। বাজি যাঁরা তৈরি করেন, তাঁদের কোনও লাইসেন্স নেই। যাঁরা পরিবেশ নিয়ে কাজ করেন তাঁদের তরফে এ বার দাবি উঠেছে, বাজি ফাটানোর সময় বেঁধে দেওয়া হোক। এমনকী বাজি ফাটানোর জন্য এলাকা নির্দিষ্ট করার দাবিও তোলা হয়েছে।
চন্দননগর পরিবেশ অ্যাকাডেমির পক্ষে বেআইনি বাজি বন্ধের জন্য ২০১৫ সালে গ্রিন ট্রাইবুন্যালে একটি আবেদন করা হয়। পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাজি শুধু শব্দ দূষণ করছে না। মারাত্মক বায়ু দূষণও করছে। তাই বাজি পুরোপুরি বন্ধ হওয়া উচিত।’’
হুগলি জেলা গ্রামীণ পুলিশের ডিএসপি (হেড কোয়ার্টার) রাণা মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘বাজির সরবরাহ বন্ধে জেলার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশি নজরদারি চলছে। বেআইনি বাজি বন্ধে তৎপরতা বাড়ানো হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy