Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
jangipara

স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও তাঁত নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই

বিধানসভা ভোট আসছে। পাঁচ বছরে কেমন কাজ করলেন বিধায়কেরা? সাধারণ মানুষ সন্তুষ্ট? নাকি ক্ষোভের পাহাড় জমেছে? তত্ত্ব-তালাশ করল আনন্দবাজার। আজ, জাঙ্গিপাড়া বিধানসভা কেন্দ্র। ঘটা করে উদ্বোধনের পরেও জাঙ্গিপাড়া থেকে চন্দনপুর হয়ে আঁকুটি পর্যন্ত চার কিলোমিটার রাস্তা কেন তৈরি হল না, সেই প্রশ্নও য়েমন শোনা যাচ্ছে, তেমনই স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়েও ক্ষোভ কম নয়।

শিয়াখালায় শৌচালয়ের বেহাল দশা। ছবি: দীপঙ্কর দে।

শিয়াখালায় শৌচালয়ের বেহাল দশা। ছবি: দীপঙ্কর দে।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
জাঙ্গিপাড়া শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২১ ০২:৪৩
Share: Save:

‘লড়াই’টা এখনই জমে গিয়েছে।

কাজের ফিরিস্তি দিতে বললে জাঙ্গিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক স্নেহাশিস চক্রবর্তী গড়গড় করে বলতে থাকেন। ডাকাতিয়া খালের সংস্কার, জাঙ্গিপাড়া গ্রামীণ হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা বাড়ানো, জাঙ্গিপাড়া কলেজের উন্নয়ন, আইটিআই কলেজ তৈরি, রাস্তার কাজের অনুমোদন, আরও কত কী!

বিরোধীরা এ সব কথা শুনলে হাসেন। তাঁরাও গড়গড় করে বলতে থাকেন এ তল্লাটের অপ্রাপ্তির কথা। এখনও বাসস্ট্যান্ড হয়নি। রাস্তা বেহাল। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল ফেরেনি। শিয়াখালায় ‘কর্মতীর্থ’ পড়ে রয়েছে। বহুমুখী হিমঘর গড়ে ওঠেনি। তালিকা আরও দীর্ঘ হয় তাঁদের কথায়।

স্নেহাশিস জাঙ্গিপাড়ার দশ বছরের বিধায়ক। জেলায় দলের অন্যতম আহ্বায়ক। কাজ হলেও এ বার নির্বাচনে জয় যে সহজ হবে না, মানছেন এখানকার শাসকদলের অনেক নেতাই। পথে-প্রান্তরে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের আঁচ পাচ্ছেন তাঁরা। তার মধ্যে বেশি ক্ষোভ শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য নিয়েই। ক্ষোভ রয়েছে তাঁতিদেরও। জাঙ্গিপাড়ায় রেল যোগাযোগ নেই। সড়কপথই ভরসা। বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য এখানকার ছাত্রছাত্রীদের যেতে হয় হাওড়া বা কলকাতায়। জাঙ্গিপাড়ায় কলেজ নেই, এমন নয়। কিন্তু সেখানে বিজ্ঞান পড়ানো হয় না। সেই ‘অভাবের’ দিকে আঙুল তুলে এলাকার এক প্রবীণ শিক্ষক বলেন, ‘‘এখানকার মহীতোষ নন্দী কলেজ বাম আমলে তৈরি। বিধায়ক কথা দিয়েছিলেন, এখানে বিজ্ঞান পড়ানোর ব্যবস্থা করবেন। আমরা আশায় ছিলাম। ভুল করেছিলাম।’’

এই ব্লকের রাজবলহাট, রসিদপুর, আঁটপুর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ঐতিহ্যগত ভাবে তাঁতিদের বাস। এক সময়ে এখানকার তাঁতের শাড়ির নাম ছিল। এখন সেই ঐতিহ্য অনেকটাই ফিকে। রাজবলহাটের তাঁতি প্রভাত শীলের আক্ষেপ, ‘‘বিধায়কের মধ্যস্থতায় রাজ্যের ক্ষুদ্র-কুটির শিল্প ও গ্রামোন্নয়ন দফতর থেকে সরকারি প্রকল্পে তাঁত পেয়েছিলাম। কিন্তু কাজে লাগল না। কারণ, আমরা ওই তাঁত ব্যবহার করি না। ওটা নবদ্বীপে চলে। প্রত্যেক জায়গায় তাঁতের গঠনের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। সরকারি পুরো টাকাটাই জলে গিয়েছে।’’

ঘটা করে উদ্বোধনের পরেও জাঙ্গিপাড়া থেকে চন্দনপুর হয়ে আঁকুটি পর্যন্ত চার কিলোমিটার রাস্তা কেন তৈরি হল না, সেই প্রশ্নও য়েমন শোনা যাচ্ছে, তেমনই স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়েও ক্ষোভ কম নয়। জাঙ্গিপাড়া গ্রামীণ হাসপাতালের উপরে বহু মানুষ নির্ভরশীল। বিধায়কের উদ্যোগে এখানে শয্যাসংখ্যা ৩০ থেকে ৬০-এ পৌঁছেছে। পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক ওয়ার্ডও হয়েছে। তা হলে?

এক যুবকের খেদ, ‘‘বিধায়ক কথা দিয়ে্ছিলেন গ্রামীণ হাসপাতালকে স্টেট জেনারেল স্তরে উন্নীত করা হবে। হয়নি। নতুন অপারেশন থিয়েটার তৈরি হল। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে অস্ত্রোপচারও চালু হল। কিন্তু মাত্র কয়েকদিনের জন্য। তারপর থেকে বন্ধ। ওটি পড়ে রয়েছে। যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে।’’ এর সঙ্গে বিরোধীরা জুড়ছেন, ফুরফুরা বা রাজবলহাট স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু থাকলেও মানুষ পরিষেবা পান না।

এলাকাবাসীর আর এক আশায় ছাই পড়েছে সুইমিং পুলকে ঘিরে। সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্য ব্লক অফিসের কাছে দ্বারকানাথ হাইস্কুল লাগোয়া একটি পুকুরে সুইমিং পুল করার আশ্বাস দিয়েছিলেন বিধায়ক। ২০১৯-এ সেই পুল তৈরির কাজ শুরুও হয়েও মুখ থুবড়ে পড়ে। অথচ, বেশ কয়েক লক্ষ টাকা ইতিমধ্যেই খরচ হয়ে গিয়েছে।

ভোটে এ সব ‘অপ্রাপ্তি’ কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, ইতিমধ্যেই তার হিসেব-নিকেশ করতে বসে গিয়েছেন শাসকদলের নেতারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jangipara WB assembly election 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE