Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
WB assembly election 2021

শেষবেলায় জোড়া প্রাপ্তি, তবু সিঙ্গুরে অনেক প্রশ্ন

বিধানসভা ভোট আসছে। পাঁচ বছরে কেমন কাজ করলেন বিধায়কেরা? সাধারণ মানুষ সন্তুষ্ট? নাকি ক্ষোভের পাহাড় জমেছে? তত্ত্ব-তালাশ করল আনন্দবাজার। আজ, সিঙ্গুর বিধানসভা কেন্দ্র। কিছুদিন আগে ঘোষণা করা দু’টি ক্ষেত্রেই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। বিরোধীরা ‘ভোটর চমক’ বললেও কিছুটা আশার আলো দেখছেন বাসিন্দাদের কেউ কেউ।

সিঙ্গুরে অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরি শুরু হয়েছে। নিজস্ব চিত্র।

সিঙ্গুরে অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরি শুরু হয়েছে। নিজস্ব চিত্র।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
সিঙ্গুর শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:৪৪
Share: Save:

শেষবেলায় জোড়া ‘প্রাপ্তি’ সিঙ্গুরের। অ্যাগ্রো-ইনডাস্ট্রিয়াল পার্ক এবং একসময়ে টাটাদের জন্য অধিগৃহীত সেই জমিকে চাষযোগ্য করতে প্রশাসনিক উদ্যোগ।

কিছুদিন আগে ঘোষণা করা দু’টি ক্ষেত্রেই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। বিরোধীরা ‘ভোটর চমক’ বললেও কিছুটা আশার আলো দেখছেন বাসিন্দাদের কেউ কেউ। কিন্তু তাতে কি চিঁড়ে ভিজবে? লোকসভা ভোটে খোয়ানো জমি কি পদ্ম-শিবিরের হাত থেকে উদ্ধার করা যাবে? সংশয়ে রয়েছেন শাসক দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা।

পাঁচটি বছর পেরোতে চলল। এখনও বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য এবং জমি আন্দোলনের অন্যতম মুখ তথা হরিপালের বিধায়ক বেচারাম মান্নার দ্বৈরথ কমেনি। উল্টে বেড়েছে। সম্প্রতি বেচারামের এক অনুগামী দলের ব্লক সভাপতি হওয়ায় দলত্যাগেরই চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথবাবু। এখন সে ভাবনা থেকে সরে এসেছেন। কিন্তু উষ্মা প্রকাশ করে চলেছেন পুরোমাত্রায়। পক্ষান্তরে, বেচারামবাবু বিশেষ উচ্চবাচ্য করছেন না। কিন্তু সম্পর্কেরও উন্নতি হচ্ছে না।

দুই নেতার এই আকচাআকচিই বিধানসভা ভোটে সবচেয়ে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সাধারণ কর্মীরা। তাঁরা পুরোদমে ঝাঁপাবেন কোন গোষ্ঠীর ভরসায়? তা ছাড়া, ‘অপ্রাপ্তি’ নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভও তো কম নয়। এতদিনে কোনও কাজ হয়নি, এমন নয়। কিন্তু ‘খুঁত’-এর বহরও কম নয়। ফলে, টানা দু’দশক সিঙ্গুর তাদের হাতে থাকলেও এ বারও ক্ষমতা ধরে রাখা যাবেই, এমন প্রত্যয়ের সুর শোনা যাচ্ছে না তৃণমূলের সাধারণ কর্মীদের গলায়।

সিঙ্গুরে কলেজ হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞান এবং বাণিজ্য পড়ানো হয় না। অনার্স তো দূরের কথা। তা হলে কলেজ গড়ে লাভ কী হল, এ প্রশ্ন অনেক অভিভাবকেরই। তাঁদেরই একজনের খেদ, ‘‘এখনও এখান থেকে ছেলেমেয়েদের উজিয়ে কলকাতার কলেজে যেতে হচ্ছে। অথচ, লোকে জানে সিঙ্গুরে কলেজ আছে। পুরোটাই লোকদেখানো।’’

পাঁচ বছরে রাস্তাঘাটের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিধায়ক। কিন্তু এ তল্লাটে হাঁটলে বেশ কিছু রাস্তারই বেহাল দশা নজরে পড়ে। এ নিয়ে বিধায়কের বিরুদ্ধে ক্ষোভও রয়েছে সাধারণ মানুষের। আবেদন-নিবেদনেও কাজ হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ। তেমনই শোনা গেল বেড়াবেড়ির শ্যামল সাহার গলায়, ‘‘সন্তোষীতলা থেকে জয়মোল্লা পর্যন্ত বেহাল রাস্তাটি পিচের করার জন্য বিধায়ককে অনেকবার জানিয়েছি। কাজ হয়নি। সম্ভবত বয়সজনিত কারণে তিনি পারছেনও না। এলাকার কোনও উন্নয়নমূলক কাজেও তাঁকে আর বড় একটা দেখা যায় না।’’

দিয়াড়ার এক প্রবীণ বলেন, ‘‘দিয়াড়া থেকে বড়া পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ। পঞ্চায়েত থেকে ব্লক অফিস— সর্বত্র আবেদন করেছি। কাজ হল কই? নিউ দিঘা এলাকার বাসিন্দাদের চিন্তা, কাঠকুন্তী নদীর উপরে সেতুর তৈরির কাজ কবে শেষ হবে, তা নিয়ে।

তবে, সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ সম্ভবত সিঙ্গুরের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে। ট্রমা কেয়ার সেন্টার তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। চালু হয়নি। আধুনিক যন্ত্রপাতি সব নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ। আর রয়েছে সিঙ্গুর গ্রামীণ হাসপাতাল। একটু জটিল রোগ হলে বা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনে সেখান থেকে রোগীদের স্থানান্তরিত করে দেওয়ার অভিযোগ বহু পুরনো। এখনও কেন ওই হাসপাতালের মানোন্নয়ন হল না, বিধানসভা নির্বাচনের মুখে সে প্রশ্ন উঠছেই।

স্টেশন রোড এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘দিন কয়েক আগে পাড়ার একটা বাচ্চার মাথা ফেটে গেল। কয়েকটা সেলাইয়ের প্রয়োজন ছিল। বাচ্চাটিকে স্রেফ প্রাথমিক চিকিৎসার পর শ্রীরামপুর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হল সিঙ্গুর গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে। তা হলে সিঙ্গুরে হাসপাতাল থেকে কী লাভ?’’

প্রশ্নের পর প্রশ্ন, ক্ষোভের পর ক্ষোভ। ভাল বুঝছেন না ব্লক স্তরের এক তৃণমূল নেতা। তাঁর কথায়, ‘‘এ ভাবে কি হারানো জমি ফেরানো যায়? এখানে দুই নেতার খেয়োখেয়িতে দলের ছন্দটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। জানি না, ভোটে কী হবে।’’ তহবিলের কোনও টাকাও পড়ে নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Singur WB assembly election 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE