Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সস্তার জুতোয় সোনার দৌড় 

মৌমিতার কথায়, ‘‘দৌড়তে গেলে ভাল জুতো দরকার।। কিন্তু ১০-১২ হাজার টাকা দামের জুতো পাব কোথায়?’’ কোচ জানান, যে জুতো পায়ে মৌমিতা রেকর্ড করেছে, তার দাম সাকুল্যে দেড় হাজার টাকা।

ট্রফি হাতে মৌমিতা।

ট্রফি হাতে মৌমিতা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জিরাট শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৮ ২৩:৫৭
Share: Save:

ছোটবেলা থেকেই দৌড়ের আসরে পুরস্কার পাওয়া অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। হুগলির জিরাটের মৌমিতা মণ্ডল সেই অভ্যাস ধরে রেখেছে রাজ্য স্তরেও। এ বারের রাজ্য অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৮ মেয়েদের বিভাগে ১০০ মিটার হার্ডলস এবং লংজাম্পে নেমেছিল সে। দু’টিতেই সেরা। হার্ডলসে রেকর্ড।

যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ওই প্রতিযোগিতা হয়ে গেল ২ থেকে ৫ অগস্ট। হার্ডলসে মৌমিতা সময় করে ১৫.১ সেকেন্ড। এটি নতুন রাজ্য রেকর্ড। আগের রেকর্ড ছিল সোমা কর্মকারের (১৫.৩ সেকেন্ড) দখলে। ৫.৭১ মিটার লাফিয়ে মৌমিতা লংজাম্পে বিজয়ী হয়। এখানে অল্পের জন্য রেকর্ড (৫.৭৪ মিটার) হাতছাড়া হয়েছে।

জিরাট স্টেশনের কাছে নট্টপাড়ায় বাবা-মা-দিদির সঙ্গে থাকে মৌমিতা। বাবা সুভাষচন্দ্র মণ্ডল স্টেশনের কাছে চা বিক্রি করেন। মা সোমাদেবী গৃহশিক্ষকতা। দিদি সঙ্গীতা কলেজে প়়ড়েন। তিনিও টিউশন করেন। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে দৌড়ের প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করে মৌমিতা। কয়েক বছর স্থানীয় পাটুলি বীণাপাণি ইউনাইটেড স্পোর্টিং ক্লাবে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। বছর খানেক ধরে প্র্যাকটিস করছে শ্রীরামপুর স্পোর্টিং ক্লাবে শুভময় দাসের কাছে।

শুভময় জানান, ১০০ মিটার দৌড় এবং লংজাম্প মৌমিতার প্রিয় ইভেন্ট ছিল। তিন-চার মাস আগে তিনিই রাজ্য অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় হার্ডলসে নামার পরামর্শ দেন। তাতেই বাজিমাত। শুভময় বলেন, ‘‘গতির সঙ্গে ওর স্পট জাম্প, স্ট্রেচিং খুব ভাল। সেই জন্যই হার্ডলসে নামতে বলি। তা-ও বৃষ্টিতে শেষ দু’-তিন সপ্তাহ মাঠে প্র্যাকটিস করা যায়নি। ক্লাবের ভিতরে করতে হয়েছে।’’

তবে, মাঠের পাশাপাশি বলাগড় উচ্চ বিদ্যালয়ের মেয়েটিকে লড়তে হচ্ছে পরিবারের অনটনের বিরুদ্ধেও। শুভময় জানান, উপযুক্ত পরিকাঠামো পেলে ও অনেক দূর যাবে। মৌমিতার কথায়, ‘‘দৌড়তে গেলে ভাল জুতো দরকার।। কিন্তু ১০-১২ হাজার টাকা দামের জুতো পাব কোথায়?’’ কোচ জানান, যে জুতো পায়ে মৌমিতা রেকর্ড করেছে, তার দাম সাকুল্যে দেড় হাজার টাকা। সুষম খাবার সব সময় জোটে না। শুভময়ের দুই সহকারী সঞ্জীব দাস এবং অঞ্জনীকুমার অম্বেডকর জানালেন, গত বছর রাজ্য অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় যেতে পারেনি মৌমিতা। এতে তার জেদ বেড়ে যায়।

কেমন রুটিন মৌমিতার?

ঘুম থেকে ভোর সাড়ে তিনটেয় ওঠা। তার পরে ভাত বা রুটি-তরকারি গুছিয়ে প্রথম ডাউন কাটোয়া লোকাল ধরে সকাল ৭টার মধ্যে শ্রীরামপুর স্পোর্টিংয়ের মাঠে। প্র্যাকটিস সেরে বাড়ি ফিরতে প্রায়ই দুপুর গড়িয়ে যায়। তবে, অভাব থাকলেও বাড়িতে খেলাধুলোর পরিবেশ পেয়েছে মৌমিতা। বাবা ফুটবল খেলতেন। মাও অ্যাথলিট ছিলেন। তিনিও সুযোগ পেয়েছিলেন রাজ্য মিটে। কিন্তু যাওয়া হয়নি।

সোমাদেবী বলেন, ‘‘আমার আক্ষেপ মেয়ে মিটিয়ে দিয়েছে। ওকে আরও বড় জায়গায় দেখতে চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

State Athletics Meet Moumita Mondal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE