Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ভাল ফল করেও সুশান্তর উচ্চশিক্ষায় কাঁটা দারিদ্র

সেই কোন ছোট্টবেলায় বাবাকে হারিয়েছে ছেলেটা। কষ্টেসৃষ্টে ছেলেকে মানুষ করছিলেন মা। অদৃষ্ট এক দিন মাকেও কেড়ে নিল। ছেলেটা তখন ক্লাস নাইন। বাবা-মাকে হারিয়েও ছেলেটা অবশ্য হারিয়ে যায়নি। বাপ-মা মরা ছেলেটাকে বুকে করে আগলে রেখেছেন তার অসুস্থ মাসি, যাঁর নিজের সংসারেই নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। মাসির লড়াইয়ের মান রেখেছে ছেলেটা।

মাসির সঙ্গে সুশান্ত হালদার। —নিজস্ব চিত্র।

মাসির সঙ্গে সুশান্ত হালদার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ডানকুনি শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৬ ০৩:৪৩
Share: Save:

সেই কোন ছোট্টবেলায় বাবাকে হারিয়েছে ছেলেটা। কষ্টেসৃষ্টে ছেলেকে মানুষ করছিলেন মা। অদৃষ্ট এক দিন মাকেও কেড়ে নিল। ছেলেটা তখন ক্লাস নাইন।

বাবা-মাকে হারিয়েও ছেলেটা অবশ্য হারিয়ে যায়নি। বাপ-মা মরা ছেলেটাকে বুকে করে আগলে রেখেছেন তার অসুস্থ মাসি, যাঁর নিজের সংসারেই নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। মাসির লড়াইয়ের মান রেখেছে ছেলেটা। উচ্চ মাধ্যমিকে ৬৮% নম্বর পেয়ে পাশ করেছে সুশান্ত হালদার।

বাবা-মা এবং বোনের সঙ্গে সুশান্ত থাকত ডায়মন্ড হারবারের কালীনগরে। যখন তার আড়াই বছর বয়স, তখন বাবা নিহাই হালদার মারা যান। বোন অনুশ্রী তখন থেকেই ডানকুনির গোবরা ঘোষপাড়ায় মাসির বাড়িতে থাকে। মা নমিতাদেবী কাপড় বেচতেন। তাতেই চলত মা-ছেলের সংসার। বছর তিনেক আগে পেটের রোগে ভুগে নমিতাদেবীও মারা যান। তার পরে অনুশ্রীর মতো সুশান্তকেও নিজের সংসারে নিয়ে আসেন মাসি অনিতাদেবী। গোবরা ঘোষপাড়ায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন অনিতাদেবী। নিজের ছেলে অমলিন স্নায়ুর রোগে ভুগছেন। অনিতাদেবী যাত্রাশিল্পী। ইদানীং যাত্রার শো-ও তেমন মেলে না। তার উপর বছর কয়েক ধরে নিজেও অসুস্থ। তাঁর স্বামী শখের যাত্রাপালায় পরিচালকের কাজ করেন। তাঁরও রোজগার তেমন নয়।

এত কিছু সত্ত্বেও সুশান্ত বা অনুশ্রীর পড়াশোনার প্রতি অযত্ন হতে দেননি তাঁরা। কষ্ট করেও গৃহশিক্ষক রেখেছেন। অনুশ্রী এ বারেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে নৈটি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। মাত্র ৩ নম্বরের জন্য ফার্স্ট ডিভিশন অধরা থেকে গিয়েছে। আর জনাইয়ের বাকসা বিন্ধ্যবাসিনী নিহারবালা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক দিয়ে সুশান্ত পেয়েছে ৩৩৮। মেধার কাছে হার মেনেছে দারিদ্র। সুশান্তর ইচ্ছে, প্রাণিবিদ্যায় অনার্স পড়বে। বড় ডাক্তার হবে। সে জন্য আগামী বছরে জয়েন্ট এন্ট্রান্সে বসতে চায় সে। কিন্তু তাঁর সেই ইচ্ছেপূরণের পথে অর্থের সংস্থান যে বাধ সাধতে পারে, বিলক্ষণ জানে ছেলেটি। তার কথায়, ‘‘মাসি কষ্টেসৃষ্টে পড়াচ্ছে। সুবীরকাকু (স্থানীয় তৃণমূল নেতা সুবীর মুখোপাধ্যায়) বই-খাতা কিনে দিয়ে এবং প্রতি মাসে টাকা দিয়ে পড়াশোনায় সাহায্য করেছেন। কিন্তু উচ্চশিক্ষার টাকা কী করে জোগাড় হবে জানি না।’’

অনীতাদেবীর মনে করেন, মঞ্চের তুলনায় জীবনের রঙ্গমঞ্চে যুঝে চলা বেশি কঠিন‌। তিনি বলেন, ‘‘আর চালাতে পারছি না। এর পরে কী হবে উপরওয়ালাই ঠিক করবেন।’’ সুবীরবাবু বলেন, ‘‘সুশান্ত বা ওর বোনের পড়াশোনা যাতে বন্ধ না হয়ে যায়, আমরা সেই চেষ্টা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sushanta Halder higher education Poverty barrier
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE