Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

হুঙ্কার বাইক বাহিনীর, ভীত প্রোমোটাররা

কয়েক বছর আগে পর্যন্ত উত্তরপাড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে প্রোমোটারদের বিরুদ্ধে শহরবাসীর অভিযোগ মুখে মুখে ফিরত। সঠিক ছাড় না দিয়ে নির্মাণ থেকে রাস্তা জুড়ে ইট-বালি ছড়িয়ে রাখা— অভিযোগ ছিল নানা রকম। প্রোমোটারদের বিরুদ্ধে চোখ-রাঙানিরও অভিযোগ উঠত।

—প্রতীকী চিত্র

—প্রতীকী চিত্র

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
উত্তরপাড়া শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৭ ০১:১৯
Share: Save:

কখন পড়বে ডাক!

ভয়ে কাঁপছেন উত্তরপাড়া এবং সংলগ্ন এলাকার প্রোমোটাররা।

কয়েক বছর আগে পর্যন্ত উত্তরপাড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে প্রোমোটারদের বিরুদ্ধে শহরবাসীর অভিযোগ মুখে মুখে ফিরত। সঠিক ছাড় না দিয়ে নির্মাণ থেকে রাস্তা জুড়ে ইট-বালি ছড়িয়ে রাখা— অভিযোগ ছিল নানা রকম। প্রোমোটারদের বিরুদ্ধে চোখ-রাঙানিরও অভিযোগ উঠত। কিন্তু সেই প্রোমোটাররাই এখন কাঁপছেন রমেশ মাহাতো এবং নেপুর গিরির বাইক-বাহিনীর দাপটে।

রমেশ ও তার শাগরেদ নেপু এখন জেল-হাজতে। কিন্তু তাদের অনুগামীরা বাইকে চড়ে এসে প্রোমোটারদের কাছে তোলা দাবি করছে বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যে কিছু প্রোমোটার সেই দাবি মিটিয়েছেনও। কিন্তু ভয়ে তাঁরা পুলিশের দ্বারস্থ হচ্ছেন না। পুলিশকর্তাদের অবশ্য আশ্বাস, ‘‘টাকা না দিয়ে, নির্দিষ্ট অভিযোগ জানান। পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।’’

কিছুদিন আগে মধ্য ভদ্রকালীতে এক প্রোমোটার তাঁর ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে প্রকল্প নিয়ে কথা বলতে যান। তাঁদের কথাবার্তার ফাঁকেই মোটরবাইকে চড়ে কিছু যুবক আসে। প্রোমোটারকে তারা নানা প্রস্তাব দেয়। সঙ্গে কিছু দাবিও। যেমন, বাড়ি ভাঙার বরাত। প্রকল্পের ইমারতি সরঞ্জাম তাদের থেকে নিতে হবে। এ সবে ওই প্রোমোটার বিরক্ত হন। দাবি মেটাতে রাজি হননি। ওই প্রোমেটারের কথায়, ‘‘আমাকে বলা হয়, আমরা রমেশদার লোক। কাজ করতে চাইলে আমাদের শর্তেই কাজ করতে হবে। কথা শুনলে সব ঠিক আছে। কিন্তু না শুনে করা যাবে না।’’

ওই প্রোমোটার এরপর আর কথা এগোননি। যে এলাকায় তিনি একটি পুরনো বাড়ি ভেঙে আবাসন প্রকল্পটি করতে চাইছিলেন, তা এখন বিশ বাঁও জলে। যে পরিবারের বাড়ি ভাঙার কথা ছিল, সঙ্কটে পড়েছে সেই পরিবারটিও। কারণ, পুরনো বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যা থেকে তাঁরা নিষ্কৃতি পাচ্ছেন না।

উত্তরপাড়া, ভদ্রকালী, কোতরং, কোন্নগরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়েই এখন এই সমস্যা জাঁকিয়ে বসেছে। শরিকি বাড়ি প্রোমোটারকে দিয়ে নিষ্কৃতি চাইছে মধ্যবিত্ত। কিন্তু বাদ সাধছে গুন্ডারাজ। তাদের দাবিমতো তোলা না দিলে প্রকল্প আটকে যাবে, এটাই আশঙ্কা প্রোমোটারদের। তাই জমির মালিকের সঙ্গে চূড়ান্ত কথার পরও বেঁকে বসছেন প্রোমোটাররা। রীতিমতো ফোন করে দুষ্কৃতীরা প্রোমোটারদের ডাকছে বলে অভিযোগ। বহু ক্ষেত্রে চার থেকে ছ’টি মোটরবাইকে তারা সরাসরি পৌঁছে যাচ্ছে প্রকল্প এলাকায়।

আবার রক্তদানের মতো সামাজিক কাজের মোড়কেও টাকা তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ। কিছুদিন আগের এক দুপুরে ভদ্রকালীতে নিজের প্রকল্পে তখনও ঢোকেননি অল্পবয়স্ক এক প্রোমোটার। ফোনে ডাক পেয়ে নিজের ব্যবসার অংশীদারের সঙ্গে সেখানে ওই যুবক গিয়ে দেখেন, ছ’টি মোটরবাইকে অন্তত ১০-১২ জন যুবক হাজির। ওই প্রোমোটার জানান, যুবকেরা কোন্নগরে ধর্মডাঙ্গায় বড় রক্তদান শিবির আয়োজনের কথা বলে চাঁদা দাবি করে। চাঁদার অঙ্ক শুনে ওই প্রোমোটারের চোখ কপালে। তিনি বলেন, ‘‘অনেক অনুনয়-বিনয়ের পর নগদে ভাল অঙ্কের টাকা দিয়ে তবে রেহাই মেলে।’’ টাকা দিলেন কেন? ‘‘না হলে কাজ আটকে যাবে।’’— বলছেন ওই প্রোমোটারেরা।

এর কিছুদিন আগে উত্তরপাড়া স্টেশনের কাছে কাঁঠাল বাগানে জমজমাট এক চায়ের দোকানে এক প্রোমোটার ডাক পান। তিনি যেতেই দাবি সেই পুরনো। ওই প্রোমোটার বলেন, ‘‘জোর করায় একবার টাকা দিয়েছিলাম। তারপর থেকে আর ওরা পিছু ছাড়ছে না।’’

হুগলি জেলা সিপিএমের সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘পুলিশকে বলে কোনও কাজ হয় না। শাসকদলের এক নেতা ছেড়ে অন্য নেতার কাছে প্রতিকারের জন্য গেলে জটিলতা বাড়ে।’’ তবে শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্বাস, ‘‘কোনও ধরনের তোলাবাজি বরদাস্ত করি না। আমার সংসদীয় এলাকায় কেউ সমস্যায় পড়লে আমাকে জানান। আমি ব্যবস্থা নেব।’’

আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না প্রোমোটারদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE