Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

নার্সিংহোমে দুষ্কৃতী তাণ্ডবে প্রশ্নের মুখে শ্রীরামপুরের নিরাপত্তা

চন্দননগর কমিশনারেট সূত্রের খবর, নবমীর রাতে রাজেশরা ছ’জন মোটরবাইকে চেপে বেরিয়েছিল। দশমীর ভোরে খটিরবাজারের কাছে তাদের মধ্যে দু’জন দুর্ঘটনায় জখম হয়। বাকিরা টোটো করে তাদের ওই নার্সিংহোমে নিয়ে যায়।

শ্রীরামপুরের নার্সিংহোমে বন্দুক নিয়ে তাণ্ডব দুষ্কৃতীদের। ছবি সিসিটিভি ফুটেজ থেকে সংগৃহীত।

শ্রীরামপুরের নার্সিংহোমে বন্দুক নিয়ে তাণ্ডব দুষ্কৃতীদের। ছবি সিসিটিভি ফুটেজ থেকে সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৭ ০৭:৪০
Share: Save:

এলাকার নার্সিংহোমে দুষ্কৃতী-তাণ্ডবের পরে কেটে গিয়েছে ৪৮ ঘণ্টারও বেশি। এক জন ধরাও পড়েছে। কিন্তু শ্রীরামপুরের সাধারণ মানুষের আতঙ্ক কাটছে না। নার্সিংহোমে ওই কাণ্ডের পরে রাস্তাঘাটে তাঁরা কতটা সুরক্ষিত সেই প্রশ্ন তুলেছেন।

দশমীর ভোরে শহরের মানিকতলা এলাকার ওই নার্সিংহোমে দুর্ঘটনায় জখম সঙ্গীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে আস্ফালন করে কিছু দুষ্কৃতী। নার্সিংহোমের কর্মীদের মারধর করে তারা। আইসিইউ-তেও চড়াও হয়। সেই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে রবিবার সন্ধ্যায় রাইল্যান্ড রোড থেকে রাজেশ সিংহ নামে এক দুষ্কৃতীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। জেরায় ধৃত দাবি করেছে, বন্ধুর চিকিৎসায় গাফিলতি দেখেই তাদের মাথায় রক্ত চড়ে যায়। ধৃতকে সোমবার শ্রীরামপুর আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাকে পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। তাকে জেরা করে এবং নার্সিংহোমের সিসিটিভি-র ফুটেজ দেখে বাকি দুষ্কৃতীদের ধরতে চাইছেন তদন্তকারী অফিসাররা। তিন বছর আগে নবমীর রাতে মাহেশ কলোনি এলাকায় একটি খুনের ঘটনায় রাজেশ অভিযুক্ত। তার বিরুদ্ধে সমাজবিরোধীমূলক কাজের অভিযোগ রয়েছে।

চন্দননগর কমিশনারেট সূত্রের খবর, নবমীর রাতে রাজেশরা ছ’জন মোটরবাইকে চেপে বেরিয়েছিল। দশমীর ভোরে খটিরবাজারের কাছে তাদের মধ্যে দু’জন দুর্ঘটনায় জখম হয়। বাকিরা টোটো করে তাদের ওই নার্সিংহোমে নিয়ে যায়। প্রীতম দাস নামে এক যুবকের আঘাত গুরুতর ছিল। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে নার্সিংহোম থেকে তাকে অন্যত্র নিয়ে যেতে বলা হয়। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করতে নার্সিংহোম-কর্মীদের দেরি হওয়ায় তারা খেপে যায়। জেরায় রাজেশ জানায়, পেটের ব্যথায় প্রীতম কাতরাচ্ছিল। একে তার উপযুক্ত চিকিৎসা হয়নি, উপরন্তু অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় হচ্ছিল না। দ্রুত যাতে ওই কাজ হয়, সে জন্যই আইসিইউ-তে ঢুকে রিভলভার উঁচিয়ে ভয় দেখানো এবং নার্সিংহোম কর্মীদের মারধর হয়।

সে দিন ওই ঘটনার সময়ে নার্সিংহোমের আইসিইউ-তে ১০ জন রোগী ছিলেন। আতঙ্কে কারও কিছু হয়ে গেলে তার দায় কে নিত, সেই প্রশ্নও উঠছে। চাঁপদানির বিধায়ক তথা বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে শাসকদল। ফলে, গ্রামীণ পুলিশ থাক বা কমিশনারেট— আইনশৃঙ্খলার উন্নতি কী করে হবে?’’ জেলা সিপিএম সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘আইসিইউ-র ভিতরে সশস্ত্র দুষ্কৃতী দাপাদাপি করছে, এর থেকে ভয়ঙ্কর কী হতে পারে!’’ সোমবার নার্সিংহোমে আসেন ‘সেভ ডেমোক্রেসি’র প্রতিনিধিরা। তাঁদের তরফে চঞ্চল চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘পুলিশ মাত্র এক জনকে ধরেছে। কড়া পদক্ষেপের বদ‌লে ঢিমেতালে তদন্ত হচ্ছে।’’ একই বক্তব্য রাজ্য বিজেপি নেতা স্বপন পালের। শহর তৃণমূল সভাপতি গৌরমোহন দে বলেন, ‘‘দাগি দুষ্কৃতীরা জেলে রয়েছে। এই কৃতিত্ব তো শাসকদলেরই। ’’

চন্দননগর কমিশনারেটের অফিসারদের বক্তব্য, মানুষ নির্বিঘ্নেই উৎসব পালন করেছেন। নবমীর রাতভর রাস্তায় পুলিশ ছিল। ভোরে ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা ঘটে গিয়েছে। দুষ্কৃতীদের শীঘ্রই ধরার চেষ্টা চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE