ভোগান্তি: জমা জল ঠেলেই কাজে যাওয়া। বৃহস্পতিবার সকালে, হাওড়ার বেনারস রোডে। ছবি: দীপঙ্কর
হাওড়াবাসী যাতে সময়ে এবং ঠিক মতো পুর পরিষেবা পান, তা নিশ্চিত করতে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে হাওড়া পুরসভায় ছয় সদস্যের প্রশাসকমণ্ডলী তৈরি হয়েছে। কিন্তু পুর পরিষেবার দৈন্য দশা যে এতটুকু বদলায়নি, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে এক রাতের ভারী বৃষ্টিতে হাওড়া শহরের বিস্তীর্ণ এলাকার জল-ছবিতে। বৃহস্পতিবার ভোরে বৃষ্টি থেমে গেলেও বেহাল নিকাশির কারণে সন্ধ্যা পর্যন্ত জল নামেনি বহু এলাকায়। আরও অভিযোগ, দিনভর জল জমে থাকলেও কোনও পুর আধিকারিক বা ইঞ্জিনিয়ারের দেখা মেলেনি। পুর কমিশনার বিজিন কৃষ্ণ মেনে নিয়েছেন, আগাম প্রস্তুতি না থাকার জন্যই রাতের টানা বৃষ্টিতে শহর ভেসেছে। তিনি অবিলম্বে পুরসভার অফিসার ও ইঞ্জিনিয়ারদের রাস্তায় নেমে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে জানিয়েছেন, সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী সপ্তাহে প্রশাসকমণ্ডলীর প্রথম বৈঠক ডাকা হয়েছে।
বুধবার সারা রাতের বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ে উত্তর ও মধ্য হাওড়ার বিভিন্ন এলাকা। সব চেয়ে খারাপ অবস্থা হয় উত্তর হাওড়া, লিলুয়া ও মধ্য হাওড়ায়। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর হাওড়ার নস্করপাড়া লেন, কামিনী লেন, ঘোষপাড়া লেন, মহীনাথ পোড়েল লেন, কামিনী স্কুল লেন, পালের বাগান, অরবিন্দ রোডের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। হাঁটুজল দাঁড়িয়ে গিয়েছে টি এল জয়সওয়াল হাসপাতাল ও সত্যবালা আইডি হাসপাতালে।
উত্তর হাওড়ার পাশাপাশি লিলুয়ার বেনারস রোড, ভট্টনগর, পটুয়াপাড়ায় জল নামেনি সন্ধ্যা পর্যন্ত। একই অবস্থা মধ্য হাওড়ার বেলিলিয়াস রোড, বেলিলিয়াস লেন ও পঞ্চাননতলা রোডে। নর্দমা উপচে পাঁক-জলে ভাসছে গোটা এলাকা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, জমা জলের যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতে গত বছর প্রায় তিন কোটি টাকা খরচ করে পঞ্চাননতলা রোডে নিকাশি পাইপ বসানো হয়েছিল। কিন্তু ওই টাকা যে কার্যত জলে গিয়েছে, এ দিনের ভোগান্তিই তার প্রমাণ। পুরসভা সূত্রের খবর, এ দিন ভোরে বৃষ্টি থামার পরে দুপুরেও জল জমে থাকতে দেখা গিয়েছে জগাছা স্টেশন রোড, মহিয়াড়ী রোড সহ ইছাপুর সংলগ্ন ডুমুরজলা এইচআইটি হাউজিং কমপ্লেক্স এলাকায়।
সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে হাওড়া পুরসভার কর্মীদের প্রশ্ন, বৃষ্টি হলে জল জমবে, তাতে নতুনত্ব কিছু নেই। কিন্তু মাত্র এক রাতের বৃষ্টিতে গোটা শহর জলমগ্ন হয়ে পড়বে কেন? তৃণমূলের হাওড়া পৌর কর্মচারী সমিতির সহ-সভাপতি গুরুচরণ চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, ‘‘পুরসভায় প্রশাসক বসার পর থেকে কাজকর্ম লাটে উঠেছে। অফিসার ও ইঞ্জিনিয়ারেরা চরম অসহযোগিতা শুরু করেছেন। সে কারণেই এক রাতের বৃষ্টিতে শহর ভাসছে।’’
মেয়াদ উত্তীর্ণ হাওড়া পুরসভায় প্রশাসক নিয়োগ করার পরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের গতি শ্লথ হয়ে যাওয়ায় পুর অন্দরে বিক্ষোভ হয়েছিল আগেই। শাসক দলের পৌর কর্মচারী সংগঠনের নেতৃত্বে পুর পরিষেবার বেহাল দশা নিয়ে প্রশাসক তথা পুর কমিশনারের অফিসের সামনে বিক্ষোভও দেখিয়েছিলেন কর্মীরা। বুধবার রাতের বৃষ্টির কারণে জমা জল এ দিনও না নামা সেই ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলেছে।
এ বিষয়ে পুর কমিশনার বিজিনবাবু বলেন, ‘‘আমরা মার্চ মাসের গোড়ায় ডিসিল্টিং (পাঁক তোলা)-এর কাজ শুরু করতাম। কিন্তু তার আগেই এমন বৃষ্টিতে বহু এলাকায় জল জমে গিয়েছে। খুব শীঘ্রই নিকাশি সংস্কারের কাজ শুরু হবে। চলতি মাস থেকে কেএমডিএ-ও ভূগর্ভস্থ নিকাশি সংস্কারের জন্য কাজ শুরু করছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy