গোলমাল: ধর্মেন্দ্র সিংহের (ইনসেটে) মৃত্যুর খবর পেয়ে ভাঙচুর চালান তাঁর অনুগামীরা। মঙ্গলবার, বটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায়। নিজস্ব চিত্র
বালি, সিমেন্ট, রড সরবরাহ নিয়ে এলাকায় একাধিক সিন্ডিকেট চক্রের মধ্যে গোলমাল চলছিলই। এ বার গুলি করে প্রকাশ্যে খুন করা হল এক প্রোমোটারকে। মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার কলেজ ঘাট রোডের ৩ নম্বর ব্রিজের কাছে। মৃতের নাম ধর্মেন্দ্র সিংহ। তিনি যুব তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
ঘটনার পরেই যুব তৃণমূল কংগ্রেসের কিছু কর্মী দোকান ভাঙচুর করে একটি বাড়ি ও বাইকে আগুন ধরিয়ে দেন। বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, ব্যবসায়িক শত্রুতা থেকে এই খুন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, মঙ্গলবার বিকেলে এক সঙ্গীকে নিয়ে মোটরবাইকে চেপে গোডাউন গেট থেকে বাড়িতে খেতে যাচ্ছিলেন ধর্মেন্দ্র। কলেজ ঘাট রোডের ৩ নম্বর ব্রিজে ওঠার সময়ে খুব কাছ থেকে তাঁকে লক্ষ্য করে পর পর ছ’রাউন্ড গুলি করা হয়। একটি লাগে বাঁটুল নামে তাঁর সঙ্গীর হাতে। অন্য গুলি লাগে ধর্মেন্দ্রর মাথায় ও বুকে। রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি বাইক নিয়ে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয়েরা জানান, দীর্ঘক্ষণ দু’জন পড়ে থাকলেও আতঙ্কে কেউ এগিয়ে যাননি। পুলিশ তাঁদের আন্দুল রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা ধর্মেন্দ্রকে মৃত ঘোষণা করেন। বাঁটুল বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন।
ঘটনার খবর পেয়ে শালিমার ও কলেজঘাট রোডে ধর্মেন্দ্রের অনুগামীরা পথে নেমে বিক্ষোভ দেখান। আইআইইএসটি-র কাছে রাস্তার পাশে থাকা ৪টি গুমটি ও দোকান ভেঙে তছনছ করে দেওয়া হয়। বন্ধ হয়ে যায় বাস। রাতে ফের তাণ্ডব চালান ক্ষুব্ধ অনুগামীরা। একটি মোটরবাইকে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি, খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সন্দেহে স্থানীয় বাসিন্দা ভিকি সিংহের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন তাঁরা। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে যায় পুলিশের বিশাল বাহিনী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এলাকার এফসিআই গোডাউনে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ বটানিক্যাল গার্ডেন থানার কাছে তাঁর বাড়ির দিকে রওনা দেন ধর্মেন্দ্র। যদিও তিনি ঘুরপথে বাড়ি যাচ্ছিলেন কেন, তা পরিষ্কার নয় পুলিশের কাছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রঞ্জিত চৌধুরীর দাবি, ‘‘দাদা যখন মোটরবাইক নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন সম্ভবত গোডাউন গেটের কাছে আক্রমণকারীরা অপেক্ষা করছিল। বাইক নিয়ে ওঁকে অনুসরণ করে আক্রমণকারীরা। এর পরে ৩ নম্বর ব্রিজে ওঠার আগে মোড়ে মোটরবাইকের গতি কমাতেই খুব কাছ থেকে গুলি করে মোটরবাইকেই পালায় ওরা।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রোমোটারি করতে গিয়ে বটানিক্যাল গার্ডেন ও শালিমার এলাকায় প্রচুর শত্রু তৈরি হয়েছিল ধর্মেন্দ্রর। সেই শত্রুতা, না কি রাজনৈতিক কারণে খুন, তা স্পষ্ট নয়। মধ্য হাওড়ার বিধায়ক তথা সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘‘দলের দক্ষ সংগঠক ছিলেন ধর্মেন্দ্র। তাঁকে চক্রান্ত করে খুন করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। শীঘ্রই খুনিরা ধরা পড়বে।’’
হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘খুনিদের ধরতে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, ব্যবসায়িক শত্রুতা থেকে এই খুন করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy