Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
মাঝেরহাট থেকে শিক্ষা নিল ডানকুনি

টনক নড়তেই তোলা শুরু পিচের প্রলেপ 

সম্প্রতি মাঝেরহাট সেতু দুর্ঘটনার পর টনক নড়েছে প্রশাসনের। সেখানে সেতুর উপর অতিরিক্ত বিটুমিনের প্রলেপে ভার বেড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তারপরই তড়িঘড়ি শুরু হয়েছে ডানকুনি রেল সেতুর উপর বিটুমিনের চাদর খুঁড়ে ফেলার কাজ।

মেরামত:  একধার বন্ধ রেখেই চলছে কাজ। ছবি: দীপঙ্কর দে

মেরামত: একধার বন্ধ রেখেই চলছে কাজ। ছবি: দীপঙ্কর দে

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
ডানকুনি শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:২০
Share: Save:

ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ডানকুনি সেতুর উদ্বোধন হয়েছিল। একবার নয় দু’দুবার— একই বছরে একবার করেছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী আর একবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সেটা ২০১৩ সাল। মাঝখানে কেটেছে মাত্র পাঁচটি বছর। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এরই মধ্যে নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে রেল সেতু। সেতুর ৪ নম্বর গার্ডারের একটি অংশে স্পষ্ট চোখে পড়ে ফাটল। গর্তে জমে থাকে জল।

এতদিন কেটে যাচ্ছিল এ ভাবেই। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, পিচ উঠে গেলই ফের পিচ বসিয়ে দেওয়া হত ছোট ছোট এলাকায়। সম্প্রতি মাঝেরহাট সেতু দুর্ঘটনার পর টনক নড়েছে প্রশাসনের। সেখানে সেতুর উপর অতিরিক্ত বিটুমিনের প্রলেপে ভার বেড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তারপরই তড়িঘড়ি শুরু হয়েছে ডানকুনি রেল সেতুর উপর বিটুমিনের চাদর খুঁড়ে ফেলার কাজ।

যদিও প্রশাসন সূত্রে দাবি করা হয়েছে, দুর্ঘটনার পর নয়। এ কাজের পরিকল্পনা করা হয়েছিল আগেই। ঘটনাচক্রে কাজ শুরু হয়েছে দুর্ঘটনার পর। তবে স্থানীয় মানুষ অভিযোগ করেছেন, ওই সেতু তৈরির সময়ই থেকে গিয়েছে গলদ।

একই সুরেই সেতু নির্মাণ নিয়ে কটাক্ষ করেছেন এক প্রাক্তন সরকারি আধিকারিক। প্রবীণ ওই ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘মানুষের শরীরের মতো সেতু বা যে কোনও নির্মাণেরই শরীর পরীক্ষা করতে হয় নিয়মিত সময়ের ব্যবধানে। কিন্তু একটি সুস্থ মানুষ আর অসুস্থতা নিয়ে জন্মানো শিশুর মধ্যে যা পার্থক্য হয় আর কি! দুর্বল শিশুটির অতিরিক্ত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।’’

তবে ওই সেতু নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত এক ইঞ্জিনিয়ার দাবি করেছেন, ‘‘একটি সেতু তৈরির সময় কতটা ভার সে সহ্য করতে পারবে তা আমরা বুঝতে পারি। সেই সহ্য ক্ষমতার থেকে অনেক বেশি ক্ষমতা দিয়েই তৈরি করা হয় তাকে।’’

দীর্ঘদিনের দাবি মেনে তৈরি হয়েছিল ডানকুনির ওই রেল সেতু। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রে রেল মন্ত্রী থাকার সময়ই ওই সেতু অনুমোদন করেছিলেন। তারপর জমি জটে আটকে গিয়ে মাত্র পাঁচ বছর আগে তৈরি হয়েছে সে সেতু।

নীচ দিয়ে গিয়েছে হাওড়া-বর্ধমান কর্ড শাখার রেল লাইন গিয়েছে। তার একটা অংশ আবার ডানকুনি-শিয়ালদহ শাখার। সড়ক পথে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে যুক্ত ওই উড়ালপুল।

একটা সময় ছিল যখন, লেভেলক্রসিংয়ে একবার রেল গেট পড়লে প্রায় ৩০-৪০ মিনিটও আটকে থাকত নিত্যযাত্রীদের। সাধারণ মানুষ, অ্যাম্বুল্যান্স সবই থাকত আটকে। এখন সে সঙ্কট অনেকাংশে মিটেছে বলে জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারাই। কিন্তু সেই সঙ্গে তাঁদের তাড়া করছে আতঙ্ক।

দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ডানকুনি উড়ালপুলে ওঠে বহু পণ্যবাহী ভারী গাড়ি। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ সে সব গাড়ির চাপে তিনতলা বাড়িও কাঁপে। শনিবার সেতুতে গিয়ে দেখা গেল কাজ চলছে পিচের চাদর তুলে ফেলার। রাস্তা খোঁড়ার যন্ত্র দিয়ে পিচ তোলার কাজ করছিলেন সোনু মালিক। তিনি বলেন, ‘‘আমরা রাস্তার পিচ ও পাথরের অংশ তুলে দিচ্ছি। তারপর গার্ডার স্লাবের কাজ শুরু হবে।’’ সেতুর উপর রাস্তায় বেশ খানিকটা অংশ বসে গিয়েছে, চোখে পড়ছে সে ছবিও। তবে সেখানে মাটি বসে গিয়েছে নাকি গার্ডারে ফাঁক বড় হচ্ছে তা নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে। প্রশাসন সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ত্রুটি খতিয়ে দেখতেই শুরু হয়েছে কাজ।

হুগলির জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, ‘‘ডানকুনি-সহ জেলার সমস্ত সেতু ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে পরীক্ষা করে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ জেলায় চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE