Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অবসরের মঞ্চে স্কুলকে অর্থ দান প্রধান শিক্ষকের

১৯৮৪ সালের ২ অগস্ট তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়েছিল। জেলার বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতার পরে ২০০০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পোলবার স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন তিনি। গরিব পড়ুয়াদের খাওয়াদাওয়া থেকে খেলা—সব কিছুর দিকেই খেয়াল ছিল অখিলবাবুর।

স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে অখিলবাবু। নিজস্ব চিত্র

স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে অখিলবাবু। নিজস্ব চিত্র

তাপস ঘোষ
পোলবা শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৩৫
Share: Save:

দিন আনি দিন খাই পরিবারে বড় হয়েছেন। মায়ের উৎসাহকে মূলধন করে আস্তে আস্তে পেরিয়েছেন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার একের পর এক ধাপ। ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা করেছেন। পোলবার বারুনান নিম্ন বুনিয়াদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন প্রায় ১৭ বছর ধরে। কিন্তু নিজের শিকড়কে ভুলে যাননি। তাই তো শিক্ষক জীবন থেকে অবসর নেওয়ার দিনে বারুনানের ওই স্কুলের উন্নয়নের জন্য ৫০ হাজার টাকা দান করলেন অখিল শূর।

অখিলবাবু পোলবার সুগন্ধা পঞ্চায়েতের পাঁচরকি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি জানান, মা পঙ্কজিনীদেবী হাড় ভাঙা খেটে সংসার চালাতেন। তিনি ছেলের চাকরির জন্য প্রার্থনা করে বিভিন্ন মন্দিরে ঘুরে পুজো দিয়েছেন। ছেলে চাকরি পেলে অবসরের পরে কোনও মন্দিরের উন্নয়নে অর্থ সাহায্য করবে, এমনই ছিল মায়ের ইচ্ছে। তবে তিনি মাকে বোঝান, নিজের স্কুলই তাঁর কাছে মন্দির। তাই তিনি তার উন্নয়নেই টাকা দিতে চান। পঙ্কজিনীদেবী ছেলের কথা মেনে নেন।

১৯৮৪ সালের ২ অগস্ট তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়েছিল। জেলার বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতার পরে ২০০০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পোলবার স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন তিনি। গরিব পড়ুয়াদের খাওয়াদাওয়া থেকে খেলা—সব কিছুর দিকেই খেয়াল ছিল অখিলবাবুর। বিভিন্ন সময়ে স্কুলের বাইরেও পড়ুয়াদের নানা সাহায্য করেছেন। অখিলবাবুর সহকর্মী মানিক ঘোষ বলেন, ‘‘অখিলবাবু যে ভাবে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন সেই অবদান ভোলা যাবে না। তাঁর থেকে অনেক কিছুর শেখার রয়েছে।’’

৩০ ডিসেম্বর, শনিবার তাঁর অবসর গ্রহণের দিনে স্কুলে ছিল কিছুটা শোকের পরিবেশ। মাস্টারমশাই আর পড়াবেন না— এই কথা বিশ্বাসই হচ্ছিল না খুদেদের। এ দিন তাঁর জন্য স্কুলে ছোট অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সাজানো হয়েছিল দোতলার হলঘর। বাজছিল রবীন্দ্রসঙ্গীত। পড়ুয়াদের পাশাপাশি অনেক অভিভাবকও এসেছিলেন। এ দিন অখিলবাবু বলেন, ‘‘মন্দিরে পুজো দিয়ে ঈশ্বর সেবা করা হয়। স্কুলে পড়ানোও সেবা। আমি দায়িত্বে থাকাকালীন সেই সেবা করার চেষ্টা করেছি। অবসরের পরে মায়ের ইচ্ছে পূরণের জন্য স্কুলের উন্নয়নে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলাম।’’ হলঘর তখন ফেটে পড়ছে হাততালিতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE