Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জল নামতেই বেরিয়ে পড়ল রাস্তার কঙ্কাল

গত তিন দিন কার্যত জলের তলাতেই ছিল পঞ্চাননতলা রোড ও ইস্ট-ওয়েস্ট বাইপাস। যার ফলে এই দু’টি রাস্তারই পিচের চাদর উঠে গিয়ে ইট-পাথরের কঙ্কাল বেরিয়ে এসেছে। কোথাও সেই গর্তের গভীরতা হয়েছে ছ’ইঞ্চি, কোথাও আট ইঞ্চি।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

দেবাশিস দাশ
শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৭ ০৭:১০
Share: Save:

বৃষ্টি কমায় জল সরেছে। আর তার পরেই বেরিয়ে পড়েছে রাস্তার কঙ্কাল। হাওড়া শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্তের মরণফাঁদ। সেই মরণফাঁদের হাত থেকে বাদ যায়নি হাওড়া ব্রিজের অ্যাপ্রোচ রোড থেকে শুরু করে হাওড়া শহরের প্রধান দু’টি রাস্তা পঞ্চাননতলা রোড ও ইস্ট-ওয়েস্ট বাইপাসও। অন্যান্য রাস্তা ও অলিগলির অবস্থা তো আরও ভয়াবহ। হাওড়া পুরসভার পক্ষ থেকে বুধবারই কয়েকটি রাস্তায় ইট আর খোয়া ফেলে মেরামত করার চেষ্টা দেখা গেলেও হাওড়া ব্রিজের অ্যাপ্রোচ রোড মেরামতির কার্যত কোনও লক্ষণই নেই রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা কেএমডিএ-র তরফে।

গত তিন দিন কার্যত জলের তলাতেই ছিল পঞ্চাননতলা রোড ও ইস্ট-ওয়েস্ট বাইপাস। যার ফলে এই দু’টি রাস্তারই পিচের চাদর উঠে গিয়ে ইট-পাথরের কঙ্কাল বেরিয়ে এসেছে। কোথাও সেই গর্তের গভীরতা হয়েছে ছ’ইঞ্চি, কোথাও আট ইঞ্চি। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, জলের নীচে থাকা গর্তে পড়ে মঙ্গলবার দু’টি স্কুল ভ্যান উল্টে যায়। ওই ঘটনায় আহত হয় দশ জন পড়ুয়া। পরে ওই জায়গাগুলি পুরসভার পক্ষ থেকে রেল গার্ড দিয়ে ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়েছে।

এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ হাওড়ায় গিয়ে দেখা গেল, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের এলাকাভুক্ত পঞ্চানতলা রোডে গর্তগুলিতে ইট ও খোয়া ফেলে সাময়িক মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু বাকি সব রাস্তার অবস্থা তখনও ভয়াবহ। একই অবস্থা ইস্ট-ওয়েস্ট বাইপাসের। বড় বড় গর্তের জন্য যানবাহন চলছে শম্বুক গতিতে। ফলে সে সব রাস্তায় যানজট লেগেই রয়েছে দিনভর। হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কোন রাস্তাগুলির সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে, তা চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। রাস্তা পর্যবেক্ষণের এই কাজে সাহায্য করছে হাওড়া সিটি পুলিশও। পুরসভা ও সিটি পুলিশ আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই সমীক্ষা রিপোর্ট তৈরি করে দেবে। সেই রিপোর্ট হাতে এসে গেলেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ওই সব রাস্তা মেরামতির কাজ শুরু করে দেওয়া হবে।’’

কিন্তু যে সব রাস্তা গত বছরই সারানো হয়েছে, সে সবের হাল পরের বর্ষাতেই এমন হবে কেন? প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তা নিয়ে।

রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত হাওড়া পুর নিগমের এক ইঞ্জিনিয়ার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘মূলত তিনটি কারণে হাওড়ার রাস্তার এমন অবস্থা। প্রথমত, বিভিন্ন মোবাইল সংস্থা যত্রতত্র নানা কাজে রাস্তা খুঁড়ে ফেলছে। দ্বিতীয়ত বহু ম্যানহোল রাস্তা থেকে অনেকটা উঁচুতে। এর ফলে ম্যানহোলের বেড়ের চারপাশে রাস্তা দ্রুত ভেঙে যাচ্ছে। তৃতীয়ত, বেশির ভাগ রাস্তাতেই ম্যাস্টিক অ্যাসফল্ট হয়নি। শুধু পিচ করা রয়েছে। এর জেরে রাস্তায় সামান্য জল জমলেই পিচের চাদর উঠে যাচ্ছে দ্রুত। গর্ত তৈরি হয়ে যাচ্ছে
রাস্তা জুড়ে।’’

ঠিক এই কারণেই হাওড়া শহরের দিক থেকে হাওড়া ব্রিজে ওঠার রাস্তা এবং ব্রিজ থেকে হাওড়ার দিকে নামার জি আর রোডের এই হাল হয়েছে। দু’টি রাস্তাতেই প্রতি বছর বর্ষার পরে পিচের চাদর উঠে গিয়ে ভয়াবহ গর্ত তৈরি হয়। নিত্যদিন দুর্ঘটনা লেগেই থাকে সেখানে। হাওড়া জি আর রোডের দায়িত্বে থাকা এক ট্র্যাফিক ইনস্পেক্টর বলেন, ‘‘প্রতি বর্ষায় সেতুর এই দু’টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় এমন হাল হয়। বারবার বলা সত্ত্বেও প্রতি বছর তাপ্পি দেওয়া ছাড়া কোনও কাজ করে না কেএমডিএ।’’

কিন্তু হাওড়া ব্রিজের অ্যাপ্রোচ রোডের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় কেন বারবার তাপ্পি দেওয়া হয়? ম্যাস্টিক অ্যাসফল্ট দেওয়া হয় না কেন? রাস্তার দায়িত্বে থাকা কেএমডিএ-র এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার থেকে যে অর্থ বরাদ্দ হয়, তাতে পিচের তাপ্পি দিতেই টাকা ফুরিয়ে যায়। ম্যাস্টিক অ্যাসফল্ট অনেক খরচ সাপেক্ষ। ওই টাকা বরাদ্দ হলেই কাজ হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Flood Rain Road Condition হাওড়া
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE