Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পকেট ভরাচ্ছে গোলাপ, খুশি বোয়ালিয়া

চোখের সামনে মাথা দোলাচ্ছে অজস্র গোলাপ। নিজেদের ঝুঁকির ফুল। গত কয়েকটা বিয়ের মরসুমে শেখ নিজামুদ্দিন, শেক হাকিমদের মতো চাষিদের পকেট ভরিয়েছে সেই গোলাপ। ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে বাজার আরও জমবে, এটাই আশা।

যতনে: গোলাপের পরিচর্যায় মগ্ন চাষি। ছবি: সুব্রত জানা

যতনে: গোলাপের পরিচর্যায় মগ্ন চাষি। ছবি: সুব্রত জানা

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৭:১০
Share: Save:

আর কতদিন পরে যেন ভ্যালেন্টাইনস ডে! দিন গুনছেন বোয়ালিয়ার বহু চাষি।

চোখের সামনে মাথা দোলাচ্ছে অজস্র গোলাপ। নিজেদের ঝুঁকির ফুল। গত কয়েকটা বিয়ের মরসুমে শেখ নিজামুদ্দিন, শেক হাকিমদের মতো চাষিদের পকেট ভরিয়েছে সেই গোলাপ। ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে বাজার আরও জমবে, এটাই আশা।

রাজ্যে গোলাপ চাষ বেশি হয় পাঁশকুড়া, বেলদা এবং বাগনানে। হাওড়ার উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের বোয়ালিয়া গ্রামের চাষিরা বংশ পরম্পরায় কপি, বেগুন, টোম্যাটো চাষেই অভ্যস্ত। দামোদরের পলির জন্য এখানকার জমি উর্বর। কিন্তু অতিফলনে তাঁরা সমস্যাতেও পড়েন। ফসলের দাম পান না। সমস্যা সমাধানে গত বছর কিছু চাষি বিকল্প চাষের উপায় খুঁজতে ব্লক প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। কৃষি দফতর চাষিদের গোলাপ চাষের পরামর্শ দেয়। উদ্যানপালন দফতরের সঙ্গে চাষিদের বৈঠক হয়। তার পরেই বিকল্প রাস্তায় হাঁটা শুরু করেন শেখ নিজামুদ্দিন, শেখ হাকিমদের মতো চাষিরা। আর এখন তাঁরা মনে করছেন, ঝুঁকি নিয়ে লাভই হয়েছে। গ্রামের অনেকে কপি, বেগুন চাষ ছেড়ে গোলাপ চাষে মেতেছেন।

নিজামুদ্দিনরা জানিয়েছেন, এক বিঘা জমিতে গোলাপ চাষে সাত-আট হাজার টাকা খরচ হয়। ওই গোলাপ বিক্রি হয় অন্তত ২০ হাজার টাকায়। সে্ই জায়গায় এক বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষে খরচ হাজার দশেক টাকা। অথচ, বিক্রি করে মেলে ৯ হাজার টাকা। একই ভাবে বেগুনে ১২ হাজার টাকা খরচ করে মাত্র এক হাজার টাকা লাভ হয়। কারণ, জমি নিচু হওয়ায় বর্ষার জল নেমে যাওয়ার পরে দেরিতে তাঁরা চাষ শুরু করেন। ফলে, তাঁদের আগে বাজারে অন্য চাষিদের ফসল চলে আসে।

ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, গত বছর নভেম্বর থেকে ২৬ বিঘা জমিতে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে গোলাপ চাষ হচ্ছে। প্রথমে জমির চারদিকে রিং-বাঁধ দেওয়া হয়। যাতে দামোদরের জোয়ারের জল ঢুকে না-পড়ে। তার পরে মাটি ফেলে জমি উঁচু করা হয়। নিজেদের জব কার্ড এবং জমি আছে, এমন ৩০ জন চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। এক বিঘা জমি উঁচু করা, রিং-বাঁধ দেওয়া ইত্যাদির জন্য বরাদ্দ হয় ১ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা করে। উন্নত প্রথায় বাগানের পরিচর্যার জন্য চাষিদের প্রশিক্ষণ দেবে খড়্গপুর আইআইটি।

একটি গোলাপের চারা রোপণ করা হলে চার মাস পর থেকেই ফুল পাওয়া যায়। একটি চারা তিন বছর টানা ফুল দেয়। চাষিরা জানান, তাঁরা ইতিমধ্যে বেশ কয়েক দফায় গোলাপ বিক্রি করে ভাল উপার্জন করেছেন। এখন তাঁরা ব্যস্ত দুর্গাপুজোর জন্য। যদিও দুর্গাপুজোয় গোলাপের চেয়ে পদ্মের চাহিদা বেশি থাকে। তা হলেও পুজোয় গোলাপ ভালই বিকোবে বলে তাঁদের আশা। হাকিম বলেন, ‘‘পুজোর আগে সব ফুল তুলে নেব। নভেম্বর মাসে চারা পরিচর্যার পরে আগামী বছরের ভ্যালেনটাইন্স ডে-তে আমরা গোলাপের বাজার ভরিয়ে দেব।’’

বিডিও কার্তিকচন্দ্র রায় বলেন, ‘‘আমি নিয়মিত বাগানে যাই। গোলাপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।’’ উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক পুলক রায়ের কথায়, ‘‘চাষিরা যেমন নির্ধারিত মজুরি পেয়েছেন, তেমনই স্থায়ী সম্পদ হয়েছে। এটাই তো এই প্রকল্পের কাম্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE