Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
বকেয়া নিয়ে বিতর্ক পান্ডুয়ার দ্বারবাসিনী স্কুলে
Pandua

চার ঘণ্টা ঘেরাও স্কুল সম্পাদক

স্কুলের দাবি, নিয়ম মেনে পড়ুয়াদের জন্য পোশাক তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ, তৃণমূল পরিচালিত পরিচালন সমিতির সম্পাদকের তা পছন্দ হয়নি।

চেক সই করলেন অলোকেশ চক্রবর্তী। ছবি: সুশান্ত সরকার

চেক সই করলেন অলোকেশ চক্রবর্তী। ছবি: সুশান্ত সরকার

নিজস্ব সংবাদদাতা
পান্ডুয়া শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:২৬
Share: Save:

স্কুলের দাবি, নিয়ম মেনে পড়ুয়াদের জন্য পোশাক তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ, তৃণমূল পরিচালিত পরিচালন সমিতির সম্পাদকের তা পছন্দ হয়নি। তাই আটকে ছিল পোশাক প্রস্তুতকারীর বকেয়া টাকা। মঙ্গলবার অভিভাবকরা সম্পাদককে বাড়ি থেকে তুলে এনে চার ঘণ্টা ঘেরাও করে রেখে সই করিয়ে নিলেন চেক। পান্ডুয়ার দ্বারবাসিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ঘটনা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর ওই স্কুলে ৪২৭ জন পড়ুয়ার জন্য প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। প্রধান শিক্ষিকা কাকলি চক্রবর্তী মোদকের দাবি, তিন-চারটি কোটেশন নিয়ে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীকে ৪০০ টাকা প্রতিটি পোশাকের দরে বরাত দিয়েছিলেন তিনি। ৭ সেপ্টেম্বর সেই পোশাক হাতে পেয়েও গিয়েছে পড়ুয়ারা। তারপর থেকেই শুরু হয়েছে গোলমাল।

অভিযোগ, পরিচালন সমিতির সম্পাদক অলোকেশ চক্রবর্তী ব্যবসায়ীকে মেটানো টাকার চেকে সই করতে রাজি হচ্ছিলেন না। অলোকেশবাবু অবশ্য বলেছেন, ‘‘ওই বরাত দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মানা হয়নি। আমি জানতেই পারিনি কী হচ্ছে। সই করব কেন?’’

অভিভাবকরা অবশ্য দাবি করেছেন, গত বছর যে পোশাক দেওয়া হয়েছিল তা নিম্নমানের ছিল। বরং এ বছর ৪০০ টাকায় ভাল জামা পাওয়া গিয়েছে। অভিভাবক শিমুল সামন্ত, প্রদীপ সামন্ত-রা বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষিকা যখন আমাদের সমস্যার কথা বলেন তখন আমরাও পরিচালন সমিতিকে অনুরোধ করেছিলাম। বলেছিলাম, পোশাক ভাল হয়েছে, যেন ব্যবসায়ীকে টাকা দিয়ে দেওয়া হয়। স্কুলে বৈঠকও হয়েছিল। লাভ হয়নি।’’

এ দিনও দুপুর ২টো নাগাদ পরিচালন সমিতির সদস্য, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠক ছিল স্কুলে। অভিযোগ, অলোকেশবাবু মাঝপথেই বেরিয়ে যান। অভিভাবকরা ফের তাঁকে বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন। ঘেরাও শুরু হয় স্কুলে। দুপুর ২টো থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত আটকে রাখা হয় অলোকেশবাবু ও পরিচালন সমিতির আর এক সদস্য জয়ন্ত দাসকে। জয়ন্তবাবু আবার অভিভাবক প্রতিনিধিদের একজন। সন্ধে ৬টার পর তাঁকে দিয়ে চেক সই করিয়ে নেওয়া হয়।

প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘‘আমি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কম দামে ভাল পোশাক তৈরির দরপত্র দেওয়ার আবেদন করেছিলাম। সেই মতো চুঁচুড়ার এক সংস্থাকে বরাত দিয়েছিলাম। পোশাক নিয়ে অভিভাবকেরাও খুশি। কিন্তু পরিচালন সমিতি সমস্যা তৈরি করছিল।’’

যদিও অভিভাবকদের অভিযোগ, এ দিন সমিতির সদস্য জয়ন্ত দাস হুমকি দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, জয়ন্ত বলেছেন ভবিষ্যতে স্কুলে কোনও ‘ঝড়’ উঠলে তা সামলাতে হবে অভিভাবকদেরই। এর প্রেক্ষিতে স্কুলের ‘লেটার হেড’-এ অভিভাবকরা মুচলেকা দেন, কোনও সমস্যা হল তাঁরাই তা মিটিয়ে নেবেন।

জয়ন্তবাবু অবশ্য এ দিন বলেছেন, ‘‘সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি পদত্যাগ করব। সুতরাং তারপরে আমার কোনও দায়িত্ব থাকার কথা নয়। সে কথাই জানিয়েছি। হুমকির প্রশ্ন নেই।’’ এ দিনের ঘটনার প্রেক্ষিতে পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন অলোকেশবাবুও। তাঁর দাবি, ‘‘আমি নিয়ম মেনে কাজ করতে বলেছিলাম। সে জন্য আমাকে যে ভাবে অপমান করা হল, তারপর আমি পদত্যাগ করব।’’

জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক সুব্রত সেন বলেন, ‘‘বিষয়টি শুনেছি। আগামী কাল, বুধবার প্রতিনিধি দল ওই স্কুলে যাবে। খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pandua School Secretary Gherao
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE